আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের ১৬তম সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলে চমক দেখিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সমর্থিত প্রার্থীরা। সকল পূর্বাভাস ভুল প্রমাণ করে প্রধান দুই দল পিএমএল-এন ও পিপিপি’র থেকে এগিয়ে আছেন তারা। রাজনীতিতে ইমরান খানের এই ফিরে আসা নিয়ে মার্কিন ম্যাগাজিন টাইমস্ লিখেছে, তাকে গুলি করা হয়েছে, জেলে পাঠানো হয়েছে, তার রাজনৈতিক দলকে কার্যকরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং মূলধারার মিডিয়া থেকে তার নাম মুছে ফেলা হয়েছে, কিন্তু তারপরও তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি।
গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষিত হয়নি। এই রিপোর্ট লেখার সময় ভোট গণনা অব্যাহত রয়েছে। তাতে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা গেছে। এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত দুই শতাধিক আসনের ফল পাওয়া গেছে, যারমধ্যে ৮৯ আসনে জিতেছেন পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এরপরেই ৬০ আসনে জিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পিএমএল-এন। বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পিপিপি পেয়েছে ৪৭ আসন। অন্যদের মধ্যে এমকিউএম-পি দল পেয়েছে ৪ আসন, আইপিপি ২ আসন, পিএমএল ১ আসন ও জেইউআই ১ আসন পেয়েছে।
এরমধ্যে অঘটনের জন্ম দিয়েছেন নওয়াজ শরিফ নিজেই। ইমরান সমর্থিত প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
মানসেহরা আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাদা গাস্তাসাপের কাছে ২৪ হাজার ভোটের বড় ব্যবধানে হেরেছেন এই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। এনএ-১৫ মানসেহরা থেকে পাওয়া অনানুষ্ঠানিক ফলে দেখা যাচ্ছে, শাহজাদা গাস্তাসাপ ১ লাখ ৫ হাজার ২৪৯ ভোট পেয়েছেন। নওয়াজ শরীফ পেয়েছেন ৮০ হাজার ৩৮২ ভোট।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত বছর থেকে কারাগারে। কিন্তু তাকে বন্দি করেও তার জনপ্রিয়তা কমানো যায়নি। তার প্রমাণ মিলেছে নির্বাচনের মাঠে। তার দল পিটিআই’র প্রার্থীদের ‘ক্রিকেট ব্যাট’ প্রতীকের অধীনে নির্বাচন করতে দেয়নি নির্বাচন কমিশন। তবুও তারা সবথেকে বেশি ভোট পেয়েছে। পিটিআই প্রার্থীদের এই জয়ের পেছনে রয়েছে মূলত ইমরান খানের জনপ্রিয়তা।
এদিকে নির্বাচন শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ার পরও চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে নানা বিতর্ক ও অভিযোগ দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবার ভোট গণনায় ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। তবে পাক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গোলযোগের কারণে ভোট গণনায় দেরি হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ থাকায় এখন নির্বাচনী ফলাফল আসতে দেরি হচ্ছে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন স্থানীয় কর্মকর্তাদের প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করতে বলেছে। তবে ইমরান খানের দল বলছে, ফলাফল ঘোষণায় এমন বিলম্ব ভোট কারচুপির লক্ষণ।
ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিসের তামান্না সালিকুদ্দিন বৃটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, খুব কম অফিসিয়াল ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে এবং নির্বাচন কমিশন তথ্য প্রকাশ করছে না। আমার মনে হয়, এটা অস্বাভাবিক। যারা এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন, তাদের জন্য এটি একটি বড় বিস্ময়। নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যে ফলাফল আসছে, তাতে কোনো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না।
এর আগে ৮ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভোটগ্রহণ শুরুর মাত্র ১০ মিনিট আগে মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল পাকিস্তানে। কল ও ডেটা সেবা, কোনোটিই সচল ছিল না। আগের দিন বেলুচিস্তানে পৃথক দুই বোমা হামলায় ২৮ জন নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটেই মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হয় বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
এখন পর্যন্ত যেসব আসনের ফলাফল দিয়েছে, তাতে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কে হতে যাচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। আসন সংখ্যার দিকে পিছিয়ে থাকলেও সেনাবাহিনীর সুনজরে থাকার কারণে চতুর্থবারের মতো ফের নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করছেন অনেক বিশ্লেষক। শুক্রবার সারাদিন জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী দেখা গেছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতাদের। দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মরিয়ম নওয়াজ দুপুরের দিকে জানান, পিএমএল-এন প্রধান নওয়াজ শরিফ এখন বিজয়ী ভাষণ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর নানা অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি। মরিয়ম বলেন, তার দল কেন্দ্র ও পাঞ্জাব থেকে একক বৃহত্তম দল হিসেবে জয় পেয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ফলাফলের অপেক্ষা। আবার পিএমএল-এন নেতা ইসহাক দার দাবি করেছেন যে, বিভিন্ন আসনে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এখন পিএমএল-এন দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, স্বতন্ত্ররা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং তারা সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যেকোনো দলে যোগ দেবে বলে জানিয়েছে। ফলে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা বেশি আসনে জিতে এগিয়ে থাকলেও ইমরান খানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা থাকছেই।
পিটিআই জানিয়ে দিয়েছে, সরকার গঠনের জন্য পিএমএল-এন ও পিপিপি’র সঙ্গে তারা কোনো জোট গড়বে না। পিটিআই চেয়ারম্যান গহর আলী খান এ ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার জিও নিউজকে তিনি বলেন, পিএমএলএন ও পিপিপি’র সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি না। ১৫০টি আসনে পিটিআই জয় পেতে যাচ্ছে দাবি করে গহর আলী খান বলেন, আমরা কেন্দ্রে এবং পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে সরকার গঠন করবো।
পাকিস্তানে কোনো দল এককভাবে সরকার গঠন করতে চাইলে এবার ১৩৪টি আসনে জিততে হবে। তবে এখন পর্যন্ত ফলাফল বলছে কোনো একক দলের পক্ষে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কঠিন হবে।
২৪১ আসনের ফল
৯৬ আসনে এগিয়ে ইমরান সমর্থিতরা, পিএমএল-এন ৬৯, পিপিপি ৫২
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ২৬৫ আসনের মধ্যে ২৪১ আসনের প্রাথমিক ফলাফলে ৯৬ আসনে জয় নিয়ে এগিয়ে রয়েছেন ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
অপরদিকে, নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) জয় পেয়েছে ৬৯ আসনে এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫২ আসন।
শুক্রবার রাত ১২টার পর জিও নিউজের লাইভ আপডেটে এ তথ্য জানানো হয়।
পাকিস্তানের কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শুক্রবার নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল বার্তায় নির্বাচনে বিজয় দাবি করেছেন।
রয়টার্স বলছে, বার্তায় নওয়াজ শরিফের ‘বিজয় অর্জনের’ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে ইমরান খান তার সমর্থদের জয় উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।