মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় ৩০টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন। ঘর পাওয়ার ১৭ দিন পার হলেও এখনো ঘরে উঠতে চায় না অর্ধেকের বেশি পরিবার। এখন পর্যন্ত মাত্র ১১টি পরিবার সেখানে ওঠেছে বলে জানা গেছে।
কারণ হিসেবে জানা গেছে, আশ্রায়ণের ঘরগুলোতে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। পানির ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া অনেকের উত্তরাধিকার সূত্রে জমি রয়েছে। অনেকে জমি ক্রয় করে ঘরবাড়ি করেছিলেন। তাদের এখন ভিটে-মাটি ছাড়তে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে। তবে, তারা ঘরে ওঠার চাপে কোনোরকম দায়সারাভাবে খাট বা টুকটাক আসবাবপত্র রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন বলে জানা যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ২৮৭ জনের জমিও নেই, ঘরও নেই। তাদের মধ্যে ৩০ জনকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ণ ২ প্রকল্পের আওতায় জমি ও ঘর দেয়া হয় গত ২৩ জানুয়ারি। আগামীতে আরো ৪০ জনের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
দীঘা ইউনিয়নে ঘর পাওয়া আবু বক্কার মন্ডল জানান, বর্তমানের নতুন ঘরের কী অবস্থা আমি জানিনে। বাপ দাদা সূত্রে আউনাড়া গ্রামে জমি পাইছিলাম। এখানে আমার বাড়ি আছে। এখানেই থাকি। একটা ছেলে আছে সে বাড়ি থাকে না। তবে ওই জায়গায় (আশ্রায়ণের ঘরে) যদি থাকতে হয় মাঝে মধ্যে থাকব।
নতুন ঘর পাওয়া একটি পরিবারের সন্তান ডালিম শেখও প্রশ্নের উত্তরে জানান, আমাদের বাড়ি আছে বিলখানিদাহ। এখানে আমার বাবার উত্তরাধিকার হিসেবে যে জমি আছে তা খুব কম। আমরা এইখানেই থাকবানি। বাবা রাত্রে বাড়িতে থাকে আর দিনে দেখাশোনার জন্য নতুন ঘরের ওইখানে যায়।
পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা হলে জমি ও ঘর থাকা আরো ৪/৫ ব্যক্তি সন্তানদের ভিটে বাড়িতে রেখে শুধু স্ত্রীকে নিয়ে নতুন ঘরে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
ঘরে ওঠা এক নারী জোসনা বেগম জানান, আমার থাকার কোনো জায়গা নেই, তাই পানি বিদ্যুতির সমস্যা থাকতিও আমি সব নিয়ে আইছি। আমার মতো তো সবার অবস্থা না। আমার এখানে সংসার করতে হবে। আমি ছাড়া এখানে (দীঘা ইউনিয়নে) কেউ ওঠে নাই। তাগার ঘরে (নতুন ঘরে) উঠার আগ্রহ নাই। তারা দেখাশোনার জন্য আমারে ঘরের চাবি দিতি চায়। তাগার বাড়িঘর সংসার সব আছে। এর থেকে সেখানে ভালো অবস্থা।
সরেজমিনে গেলে হাফিজার মোল্যাসহ অনেকে অভিযোগ করে জানান, শিরিনা নামে এক মেয়ে জমি নেই, ঘর নেই। বাপের বাড়ি পড়ে থাকে। তারা ঘর পায় না। অথচ যাদের অবস্থা ভালো, জমি ঘর সবই আছে তারা ঘর পাইছে।
বাবুখালী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব আব্দুল কাদের জানান, বাবুখালীর ১০টি ঘরের কেউই এখনো ওঠেনি। পানি ও বিদ্যুৎ সমস্যা ঠিক হলে তারা আসবে বলে জানিয়েছেন।
ঘর বিতরণে অনিয়ম বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল বলেন, ‘জমিও নাই ঘরও নাই’-এর তালিকা গত ইউএনও যাচাই বাছাই করেছেন। আমরা এর মধ্যে তিনটি ইউনিয়ন থেকে যারা ঘর পেতে আগ্রহী তাদেরকে ঘর দিয়েছি। তবে তাদের পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা খুব শিগগিরই সমাধান করা হবে।