নিজস্ব প্রতিবেদক: বকেয়া কর মওকুফ ও আজীবন টার্নওভার কর থেকে অব্যাহতির দাবি জানিয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। টিসিবির পক্ষ থেকে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি দিয়ে এ অব্যাহতির দাবি জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাম্মী ইসলাম। ওই চিঠি সূত্রে জানা যায়, টিসিবি ২০২২-২৩ করবর্ষের জন্য ধার্য আয়করের বিপরীতে কর পরিশোধ করে রিটার্ন দাখিল করে এবং আয়কর সনদ গ্রহণ করে। কিন্তু উপকর কমিশনারের কার্যালয় (সার্কেল-২৪৪) থেকে ২০২২-২৩ করবর্ষের টার্নওভার কর বাবদ ৪ কোটি ৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩৮ টাকা বকেয়ার কথা জানিয়েছে টিসিবিকে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠি সূত্রে আরো জানা যায়, এক কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী টিসিবি সয়াবিন তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ ভর্তুকি মূল্যে ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মধ্যে বিতরণ করে। এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয় এবং এসব ব্যাংক থেকে লোন এগেইনসট ট্রাস্ট রিসিপ্ট (এলটিআর) গ্রহণের মাধ্যমে সরবরাহকারীর মূল্য পরিশোধ করা হয়। এসব এলটিআরের বিপরীতে টিসিবিকে বিপুল পরিমাণ সুদ পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া এসব পণ্য ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করায় টিসিবিকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয় সরকার। পাশাপাশি পণ্যের মূল্য পরিশোধের সময়ই বিধি অনুযায়ী ভ্যাট ও ট্যাক্স কেটে চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়। টিসিবি যেহেতু নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রয় করে, তাই এ ধরনের অলাভজনক কার্যক্রমের ওপর টার্নওভার কর আরোপ করা হলে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তথা সরকারের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে সরকারকে ভর্তুকির পরিমাণও বাড়াতে হবে। তাই এনবিআর আরোপিত টার্নওভার কর মওকুফ করা এবং ভবিষ্যতে টার্নওভার কর থেকে টিসিবিকে অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন। টার্নওভার কর থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানায় মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে এনবিআরের আয়কর উইংয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি। আয়কর আইনের বিধি অনুযায়ী আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করব এবং সে অনুযায়ী এনবিআর বিষয়টি বিবেচনা করবে। তবে যেহেতু টিসিবি জনসাধারণকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য দেয়, তাই এ বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করব।’
তবে এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘টার্নওভার কর মওকুফ করে দেয়া উচিত না। এতে রাজস্ব আয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার বাধাগ্রস্ত হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের করের হিসাব এনবিআরে যুক্ত না হলে বাজারে প্রতিযোগিতার অসম অবস্থা তৈরি হবে। যে যেখানে ব্যবসা করুক বা উৎপাদন করুক, তাকে কর দিতে হবে। তবে যদি তার করের অংক বেশি হয়ে যায়, তাহলে সে সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে পারে।’