স্পোর্টস ডেস্ক: কোথাও কাঠ আর প্যারেক ঢুকে মঞ্চ তৈরির তোড়জোড়। কোথাও আধুনিক প্রযুক্তি-ক্যামেরার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
অনেকদিনের নীরবতা ভেঙে মিরপুরে এখন বিপিএল আয়োজনের অপেক্ষা। প্রায় নিয়মিতই আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্ট এবারও মুক্তি পাচ্ছে না সেসব থেকে।
ব্রডকাস্টিংয়ের উন্নতি, উন্নত গ্রাফিকস, ডিআরএস ও আলো ছড়ানোর প্রতিশ্রুতি উপেক্ষা করে এখন তাই সবচেয়ে বড় আলোচনা বিপিএলের লাভ-ক্ষতির হিসাব। আলাপটা তুলে দিয়েছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের স্বত্তাধিকারী নাফিসা কামাল। বিপিএল থেকে লভ্যাংশ না পেলে সরে যাওয়ার হুমকিও দেন তিনি।
বিপিএলে চারবারের চ্যাম্পিয়ন দলটি না থাকলে কী হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ‘হবে, অন্যরকম বিপিএল হয়তো হবে…’ বলেছেন তিনি। তার কণ্ঠের জোর পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অবধিও। আগেরদিন প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনের পর বৃহস্পতিবার এ নিয়ে কথা বলেছেন গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ঈসমাইল হায়দার মল্লিক।
তাদের দুজনের সুর অবশ্য একই। এক কথায় বললে ‘সম্ভব না’। কেন নয়? ফ্র্যাঞ্চাইজি ফিসহ নানা বাস্তবতার কথা বলছে বিসিবি। তারা বলছে নিজস্ব ‘বিজনেস মডেল’ বা ‘দেশি স্টাইলের’ কথাও। কিন্তু সেটি কী এর ব্যাখ্যা দেয়নি। ওই ‘বিজনেস মডেলের সিন্দুকে’ কী ভরে রাখা, তা নিয়েও এখন নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ঈসমাইল হায়দার মল্লিক জানিয়েছেন, বিশ্বের অন্য অনেক জায়গার মতো বাংলাদেশেও ফ্র্যাঞ্চাইজি কেনার আগ্রহ রয়েছে আইপিএলের দলগুলোর মালিকদের। কিন্তু ‘রাইটস’ হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে ওই অনুমতি দিচ্ছে না বিসিবি। কিন্তু সেই রাইটস ছাড়া হলে লাভ হবে নাকি ক্ষতি, সেটি খোলাসা হওয়া যায়নি।
বেটিং কোম্পানির কাছ থেকে বিজ্ঞাপন না নেওয়ায় ১০ কোটি টাকা কম আয় হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে ভবিষ্যতে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য পথ খুলে যেতে পারে, সেদিকেও ইঙ্গিত ছিলেন। ফ্র্যাঞ্চাইজি ও বিসিবির এই লাভ-ক্ষতির হিসাবে অবশ্য ঢুকতেই চাইছেন না ক্রিকেটাররা।
বিপিএল নিয়ে দেশের তারকা ক্রিকেটার ও এবার ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবালের ভাবনা যেমন এমন, ‘এখানে বসে মন্তব্য করা আমার জন্য খুবই সহজ। আমি আসলে ভেতর-বাইরের সব জানি না। উন্নতির সুযোগ অবশ্যই আছে। নেতিবাচক দিকও আছে তবে ইতিবাচক দিকও আছে। ’
কী সেসব ইতবাচক দিক? এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তামিম, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিক থেকে এটা বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে শীর্ষে। প্রতি বছর ৫-১০ ভাগ করে উন্নতি করলেই অনেক এগিয়ে যাবে। ফ্র্যাঞ্চাইজিরা বড় ভূমিকা রাখছে, তারা অনেক টাকা খরচ করে। এমন জায়গায় নিয়ে যেতে যদি পারি যেখানে অনেক স্পন্সর থাকবে তাহলে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের চাপও কমবে। ’
সব ছাপিয়ে মাঠের ক্রিকেটটা শুরু হয়ে যাচ্ছে শুক্রবারই। আগেরবারের ডিসিশিন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) না থাকার বিতর্ক এবার আর নেই। প্রথম দিন থেকেই থাকছে এই প্রযুক্তি। বিপিএলের ব্রডাকাস্টিংয়েও এবার দেওয়া হয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
ড্রোন ক্যামেরার সঙ্গে থাকছে, রোবট ক্যামেরা, স্পাইডার ক্যামেরার মতো আধুনিক সব প্রযুক্তি। সবমিলিয়ে ৩৬টি ক্যামেরা দিয়ে মাঠের খেলা সম্প্রচার করা হবে। থাকছে ভিন্ন ধরনের স্কোরকার্ডও। এবার বিপিএলের জন্য তৈরি করা হয়েছে ওয়েবসাইটও। সেখান থেকে টুর্নামেন্ট সম্পর্কিত তথ্য পাবেন দর্শকরা।
এসব ছাপিয়ে প্রথমদিনের মাঠের লড়াইয়ে দুপুরের ম্যাচে নামবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও দুর্দান্ত ঢাকা। পরের খেলা হবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের সঙ্গে লড়বে সিলেট স্ট্রাইকার্স। মাঠের লড়াইয়ে জমজমাট হবে পরিবর্তনের বিপিএলে, লাভ-ক্ষতির হিসাব ছাপিয়ে এখন হয়তো বেশির ভাগেরই এমন চাওয়া।