হাবিবুর রহমান, ঢাকা: ১৯৫৫ সালের আইনে বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। মূলত ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের দুই জেলায় বসবাসকারী বাংলাদেশি সংখ্যালঘুরা এই নাগরিকত্ব পাচ্ছেন।
এছাড়া বাংলাদেশের পাশাপাশি পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে গুজরাটের ওই দুই জেলায় চলে যাওয়া হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট, ১৯৫৫ এর অধীনে নাগরিকত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
২০১৯ সালের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) বাদ দিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে ভারত সরকারের পদক্ষেপ তাৎপর্য বহন করে।
২০১৯ সালের CAA আইনের অধীনেও আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার রয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের।
কিন্তু বিতর্কিত ওই আইনের অধীনে নিয়মগুলো সরকার এখনও প্রণয়ন করেনি। আর তাই এখন পর্যন্ত সেই আইনের অধীনে কেউই নাগরিকত্ব পায়নি।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গুজরাটের আনন্দ এবং মেহসানা জেলায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে যে অমুসলিমরা এসে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে তা ২০১৯ সালের CAA বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে নয় বরং ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের অধীনে এই নাগরিকত্ব প্রদানের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
মূলত গুজরাটে আসন্ন নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টতই ভোটের রাজনীতি দেখছেন বিরোধীরা।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে চলে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, পার্সি, জৈন এবং খ্রিস্টানদের যারা গুজরাটের আনন্দ এবং মেহসানা জেলায় বসবাস করছেন তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, গুজরাটের আনন্দ এবং মেহসানা জেলায় বসবাসকারী হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের ধারা-৫ এর অধীনে ভারতের নাগরিক হিসাবে নিবন্ধনের অনুমতি দেওয়া হবে বা ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৬ নম্বর ধারা এবং ২০০৯ সালের নাগরিকত্ব বিধি অনুযায়ী তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সনদ দেওয়া হবে।
গুজরাটের ওই দুই জেলায় বসবাসকারী এই ধরনের লোকদের নাগরিকত্বের আবেদনগুলো অনলাইনে জমা দিতে হবে এবং জেলা পর্যায়ে কালেক্টরের মাধ্যমে সেগুলো যাচাই করা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, আবেদন এবং তার রিপোর্টগুলোতে জেলা প্রশাসনের মতো কেন্দ্রীয় সরকারও প্রবেশ করতে পারবে। এতে বলা হয়েছে, আবেদনকারী নাগরিকত্ব পাওয়ার উপযুক্ত কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় তদন্ত করতে পারবেন কালেক্টর এবং তদন্ত সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় যাচাই এবং মন্তব্যের জন্য আবেদনটি অনলাইনে পাঠাতে পারবেন তারা।
সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়ার পর আবেদনকারীর উপযুক্ততার বিষয়ে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে নিবন্ধন বা স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে ভারতের নাগরিকত্ব প্রদান এবং নিবন্ধন বা নাগরিকত্বের একটি সনদ কালেক্টর প্রদান করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকার বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে নির্যাতিত অমুসলিম অভিবাসীদের হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে চায়। মূলত ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে পৌঁছানো অমুসলিম অভিবাসীরাই ছিল বিজেপির টার্গেট।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর পাস হয়। ১২ ডিসেম্বর আইনটি প্রণয়নের বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়, ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ভারতজুড়ে আইনটি কার্যকর হবে।
কিন্তু সেই আইনের বিধি এখনও পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করা যায়নি। তবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পার্লামেন্টে সিএএ পাস হওয়ার পরে এবং প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের পরে ভারতজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেয়। সহিংস সেই বিক্ষোভে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন।

