- গাজীপুরে পাওয়া গেছে টিউলিপের নামে বাগানবাড়ি
- এমপি পদ থেকেও টিউলিপের পদত্যাগ দাবি, পিটিশন দাখিল
- টিউলিপকে দেখে সহজ সরল মনে হলেও, বাস্তবে এর ঠিক বিপরীত: ডেভিড
আবদুল ওয়াহিদ তালিম, লণ্ডন: শেখ রেহানা কন্যা টিউলিপের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ ওঠা এবং তার পদত্যাগের পর দেশেও রেহানা পরিবারের সদস্যদের সম্পদের খোঁজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য মিলেছে।
গাজীপুর মহানগরীর কানাইয়ায় সবুজ ঘেরা পরিবেশে গড়ে উঠেছে টিউলিপ সিদ্দিকের নামে একটি বাগানবাড়ি। প্রায় ৩৫ বিঘার ওপর নির্মিত বাগানবাড়িতে কী নেই! বাংলো, পুকুর, হরেক রকমের ফুল ও ফলের গাছ। এর নামকরণও করা হয়েছে টিউলিপের নামে ‘টিউলিপ’স টেরিটরি’। শুধু টিউলিপ সিদ্দিকের নামে বাগানবাড়ি নয়, গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে দেড়শ’ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সম্পদ রয়েছে শেখ রেহানা পরিবারের। বাংলো, পুকুর আর সবুজে ঘেরা এসব বাগানবাড়ি নির্মাণ করে রাখা হয়েছে শুধুমাত্র নিজেদের একান্ত সময় কাটানোর জন্য।
এনিয়ে গত ২১ জানুয়ারি, মঙ্গলবার দৈনিক মানবজমিন ‘গাজীপুরে রেহানা পরিবারের বিপুল সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পতনের পর কেউই আসেননি টিউিলিপ’স টেরিটরিতে। শেখ রেহানার স্বামী শফিক সিদ্দিক এ বাগানবাড়ি তত্ত্বাবধান করেন। দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষী ও মালিকদের বেতন-ভাতাও তিনি পরিশোধ করেন। টিউলিপ’স টেরিটরির দায়িত্বে রয়েছেন একজন নিরাপত্তারক্ষী আর দু’জন মালি।
গাজীপুর মহানগরীর বাঙালগাছ এলাকায় ২৫ বিঘা জমির ওপর বাগানবিলাস, ২৩ বিঘা জমির ওপর ফাওকাল বাগানবাড়ি, ১৫ থেকে ১৬ বিঘা জমির ওপর কালিয়াকৈরে মৌচাকের বাগানবাড়ির তথ্য পেয়েছে দুদকের অনুসন্ধান দল। সূত্র জানায়, স্থানীয়রা এগুলো শেখ রেহানার বাগানবাড়ি বলেন জানতেন, তবে এগুলোর মালিকানায় রয়েছেন তার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক, দেবর তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তাদের নিকট আত্মীয়-স্বজনের।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর মহানগরীর ফাওকাল এলাকায় বাংলাদেশ সমরাস্ত্র ও টাকশালের পাশেই ২৩ বিঘা জমি নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি বাগানবাড়ি। বড় সীমানা প্রাচীরে ঘেরা, ভেতরে নান্দনিক ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে সেখানে। ২০১২ সালে সনাতন ধর্মাবলম্বী স্থানীয় অনিল ও অক্ষয়দের থেকে কিনে এই বাংলো তৈরি করা হয়। ৩৫ লাখ টাকা বিঘা মূল্য ১৪ বিঘা জমি ক্রয় করা হয় এবং কাগজপত্রে সমস্যা থাকায় ৮ বিঘার কোনো দাম দেয়া হয়নি। বর্তমানে সেখানকার বিঘা প্রতি জমির মূল্য আড়াই কোটি টাকা। জমিটি স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী স্বপনের মধ্যস্থতায় কেনেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও শেখ রেহানার দেবর তারিক সিদ্দিক।
মহানগরীর বাঙালগাছ এলাকায় প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে আরেকটি বাংলো বাড়ি। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘বাগান বিলাস’। কয়েকশ’ গাছ নিয়ে বাংলোর ভেতরে চমৎকার পরিবেশ। অবকাশ যাপনের জন্য আছে তিন রুমের একটি দোচালা ঘর। পাশেই ছোট আরেকটি ঘর। সামনে বড় পুকুর, বিল। এ ছাড়া একটি ওয়াচ-টাওয়ারও রয়েছে ভেতরে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বাংলাদেশ স্কাউট প্রশিক্ষণের পূর্ব পাশে অবস্থিত ১৫-১৬ বিঘা জমির ওপরে আরেকটি বাংলো রয়েছে। যেটি শেখ রেহানার। প্রতি বছর শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যরা একান্ত সময় কাটাতে আসতেন। এ ছাড়াও সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিয়মিত বৈঠক করতেন এখানে।
দুদক জানায়, টিউলিপ’স টেরিটরিসহ শেখ রেহানা পরিবারের বেশ কিছু স্থাপনার তথ্য পাওয়া গেছে সংস্থাটির অনুসন্ধানে। এসব স্থাপনার আনুমানিক মূল্য ১৬৫ কোটি টাকার বেশি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত চারটি বাগানবাড়ির তথ্য আমাদের অনুসন্ধানে রয়েছে। এগুলো সরজমিন দেখা হচ্ছে।
এদিকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে আসার পর, এবার তার এমপি পদ থেকেও পদত্যাগের দাবি উঠেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বিষয়ে একটি পিটিশন দাখিল করেছে বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি। বিভিন্ন জায়গায় টিউলিপের বিরুদ্ধে চলছে জনসংযোগ। সাবেক এই মন্ত্রীর দুর্নীতির বিবরণ নিয়ে লিফলেট বিতরণ করছে দলটির নেতাকর্মীরা।
ক্যামডেনের জ্যেষ্ঠে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ডেভিড ডগলাস এ ইস্যুতে বলেন, টিউলিপকে দেখে সহজ সরল মনে হলেও, বাস্তবে এর ঠিক বিপরীত। কেননা সাড়ে ৩ বিলিয়ন পাউন্ড আর্থিক নয়-ছয়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দুর্নীতিবিরোধী ট্রেজারি মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ৫ বিলিয়ন ডলার তহবিল আত্মসাৎ এবং লন্ডনের কিংস ক্রসে একটি ফ্ল্যাট উপহার পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।