- কলকাতায় যে দামে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশের ইলিশ
পশ্চিমবঙ্গ নিউজ ডেস্ক: চলতি বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশি ৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার প্রথম ধাপে ১০ ট্রাক অর্থাৎ ৬০ টনের মতো ইলিশ বেনাপোল বন্দর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় পাইকারি মাছ বাজার হাওড়া ফিশ মার্কেটে পৌঁছাবে মধ্য রাতে।
শুক্রবার (২২ সেপ্টম্বর) থেকে কলকাতার পাইকারি বাজারে জমে উঠবে বাংলাদেশের ইলিশের বেচাকেনা। সব ঠিক থাকলে শনিবার থেকে কলকাতার খুচরা বাজারে মিলবে সেই সব ইলিশ। কিন্তু মোটেও খুশি হতে পারছেন না কলকাতার ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনোয়ার মাকসুদ। তিনি জানিয়েছেন, ইলিশ আমদানি সাথে সাথে ১২ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরা এবং বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। ২২ দিন বন্ধ থাকলে এবারও অনুমোদন পাওয়া ইলিশ ভারতে সম্পূর্ণ আসবে না। ১১ অক্টোবর পর্যন্ত খুব বেশি হলে ৮০০ থেকে এক হাজার টন ইলিশ আসতে পারে কলকাতায়।
তবে বিগত বছরগুলোর মতো বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গবাসী পূজার মৌসুমে ফের একবার স্বাদ নিতে পারবেন বাংলাদেশের রুপালি ইলিশের। ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনোয়ার মাকসুদের মতে এটাই যা সুখবর!
বাংলাদেশের উপহার হিসেবে ইলিশ আমদানিকে দেখতে চান না মাকসুদ। তিনি বলেন, আমার বহু বাংলাদেশি বন্ধু আছে। যাদের কাছে সংবাদমাধ্যমে ‘উপহার’ কথাটায় ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। গতবার অনেকে মনে করেছিলেন উপহার মানে বিনামূল্যে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসছে ভারতে। আদতে তা নয়। নির্দিষ্ট দামে আমরা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ইলিশ কিনছি। আমাদের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে সেসব মাছ কিনছে ইলিশপ্রেমী কলকাতাবাসী। আর উপহার হলে তো বিনামূল্যে পেতাম। তা তো নয়। তবে অবশ্যই এক ধরনের উপহার হিসেবে দেখব। কারণ, সারা বছর বাংলাদেশে ইলিশের চাহিদা থাকলেও ভারতে তার সুযোগ নেই। একমাত্র পুজার মৌসুমে মেলে।
কলকাতার বাংলাদেশ মিশনের তরফে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার প্রায় সারা বছর অনুমতি সাপেক্ষে ইলিশ রপ্তানি করে থাকে পশ্চিমের দেশগুলোতে। উদ্দেশ্য, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাতে বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত না হয়। সেদিক থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশি কোথায়? সে কারণেই সারা বছর বাংলাদেশের ইলিশ মেলে না পশ্চিমবঙ্গে। তবে বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে বাঙালির প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা। সেই উৎসবের বাড়তি আমেজ দিতে এই সময়টায় বাংলাদেশের ইলিশ আসে ভারতে। ফলে বাংলাদেশের ইলিশ অবশ্যই উপহারস্বরূপ।
উপহার বা শর্তসাপেক্ষে অনুমতি, যার মত থাকুক না কেন, সারা বছর এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করে থাকে ইলিশপ্রেমী বঙ্গবাসী। কারণ, একমাত্র পূজার মৌসুমেই কলকাতায় মেলে বাংলাদেশের ইলিশ। ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনোয়ার মাকসুদ জানিয়েছেন, এক কেজি বাংলাদেশের ইলিশ পাইকারি বাজারে ১ হাজার থেকে ১২শ রুপি কেজি দরে বিক্রি হবে। ৭শ গ্রামের ইলিশগুলো ৭০০-৮০০ রুপির মধ্যে দাম থাকবে। তবে বাক্স খোলার পর খুচরা বাজারে দাম কত গুণ বেশি হবে, তা দুই-একদিনের মধ্যেই বোঝা যাবে। কলকাতাবাসী সঞ্জয় দে বলেন, আমার পরিবার অসম্ভব ইলিশপ্রেমী। ইলিশের সিজনে হামেশাই ইলিশ ওঠে আমাদের হেঁসেলে। তবে পশ্চিমবঙ্গের ইলিশের যা দাম। ইচ্ছা থাকলেও সব সময় সাধ্যে কুলায় না। বাংলাদেশের ইলিশ বাজারে এলে একবার হলেও অবশ্যই কিনব। ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মকসুদ জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে এবার সেরকম ইলিশ ধরা পড়েনি। বঙ্গবাসী যেগুলো বাংলার ইলিশ ভাবছে, তা আসলে ভারতের গুজরাট এবং মিয়ানমারের ইলিশ।
প্রসঙ্গত, কলকাতার বাজারে এক কেজি থেকে সোয়া কেজি ইলিশ মিলছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ রুপিতে। এখন দেখার কত দামে কলকাতাবাসীর পাতে ওঠে বাংলাদেশের ইলিশ! বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রালয়ের বিবৃতি থেকে জানা গেছে, শর্ত সাপেক্ষে ৭৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেককে ৫০ টন করে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমতির মেয়াদ আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। দুর্গাপূজা সামনে রেখে গত বছর ২ হাজার ৯০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টন। আগের বছরগুলোতেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল। অনুমোদনের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিগত বছরগুলোতে যে সব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে অনেকে নির্ধারিত পরিমাণ মাছ রপ্তানি করতে পারেননি। অনেকে একেবারেই রপ্তানি করতে পারেননি। তবে এবার আশা করা যাচ্ছে, অনুমোদনের নির্দিষ্ট পরিমাণ মাছ আসবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বৃহস্পতিবার আনোয়ার মাকসুদ ফের রপ্তানি সময়সীমা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রালয়ে আবেদন করেছেন। তবে আনোয়ার এটাও জানিয়েছেন, সবটাই নির্ভর করছে কী পরিমাণ মাছ ধরা পড়বে এবং প্রতিষ্ঠানের রপ্তানির সক্ষমতার ওপর। কারণ, এবার বাংলাদেশেও বিগত বছরগুলোর মতো ইলিশ ধরা পড়েনি।

কলকাতায় যে দামে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশের ইলিশ
বিগত বছরগুলোর মতো চলতি বছরেও দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) পশ্চিমবঙ্গে গেছে বাংলাদেশের ইলিশ। প্রথম ধাপে কলকাতারে বাজারে পৌঁছেছে ৭০ টন ইলিশ। এসব মাছের ওজন এক কেজি থেকে সোয়া কেজি, সর্বনিম্ন ৮০০ গ্রাম। সাইজ অনুযায়ী, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মাছের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ রুপি থেকে ১ হাজার ৭০০ রুপি। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া এসব মাছ মিলছে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি মাছের বাজার ‘হাওড়া ফিস মার্কেট’- এ। এখান থেকেই খুচরা ব্যবসায়ীদের হাত ধরে পৌঁছে যাবে পশ্চিমবঙ্গবাসির হেঁসেলে। তবে কলকাতার খুচরা মাছ ব্যবসায়ীদের মতে গতবারের তুলনায় ইলিশের দাম অনেকটাই বেশি। যে ইলিশ গতবার পাইকারি দাম ৮০০-৯০০ টাকা কেজি ছিল। এবার প্রায় দ্বিগুণ।
কলকাতার ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনোয়ার মাকসুদ জানিয়েছেন, প্রথমদিন, তাই দাম বেশি। পরবর্তী পর্যায়ে কিছুটা হলেও কমতে পারে। তবে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা জানাচ্ছেন, দাম একই থাকবে। তাদের অভিমত, এবার কলকাতার মাছের বাজার ভালো না। এর প্রধান কারণ, দুর্গাপূজা এখনও একমাস বাকি। আরও কিছুটা পরে এলে বাজার উঠত। ফলে লাভ তো দূরের কথা, সব বাবদ খরচ তুলতে পারলেও অনেক হবে।
ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনোয়ার মাকসুদ বলেন, প্রথমদিন ১২টি গাড়িতে মোট ৭০ মেট্রিক টন মাছ এসেছে। দাম বেশি থাকলেও কলকাতায় বাংলাদেশের ইলিশের চাহিদা আছে। ফলে মাছের বাক্স খোলার আগে থেকেই ক্রেতা এবং খুচরা ব্যবসায়ী বাজারে এসে হাজির। দরদাম করছেন তার। এটা চলবে রাত অবধি। সবাই যে আজ কিনবে তা নয়। তবে একটা উৎসাহ আছে বাংলাদেশের ইলিশ নিয়ে। প্রাক উৎসবের মিশেলে উৎসাহ! এটাই তো আমরা চাইছিলাম। এই নিয়ে পাঁচ বছর পূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ইলিশ উপহার দিচ্ছে। ধন্যবাদ বাংলাদেশ সরকারকে। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাণিজ্য মন্ত্রাণালয়কে। তবে রপ্তানির দিন ৩০ অক্টোবর অবধি ধার্য করা হলেও, বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার কারণে ভারতে শেষ মাছের গাড়ি আসবে ১১ অক্টোবর।
এ বিষয়ে মাকসুদের অভিমত, আমরা এ বিষয়ে ভেবে দেখার আবেদন জানিয়েছি বাংলাদেশ সরকারকে। দেখা যাক কি হয়। তবে আমরা আশাবাদী। বিগত কয়েকবছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ উৎপাদন কম হয়। এখানে গুজরাট আর মিয়ানমার ভরসা। তবে বাঙালির কাছে বাংলাদেশের ইলিশ আলাদা প্রাপ্তি। তাই দাম বাড়লের মোটামুটি চাহিদা আছে। কলকাতার দমদম এলাকার অমৃত বাজারের খুচরা মাছ ব্যবসায়ী রতন জানিয়েছেন, দাম বাড়লেও ক্রেতা আছে অনেক। তাই তিনি, হাওড়া মার্কেট থেকে ৮০০ কেজি ইলিশ কিনেছেন কেজি প্রতি ১৪৫০ রুপি দিয়ে। উত্তর ২৪ পরগণার রানাঘাট বাজারের ব্যবসায়ী বাবলু দাস বলেছেন, দাম বেশি থাকার কারণে পাঁচ পাল্লা (২৫ কেজি) নিলাম। আগামীদিনে দাম একটু কমতে পারে। তখন বেশি করে তুলব। তাছাড়া পূজা এখনও দেরি আছে। আর এখন তো প্রায় মাসের শেষ। সব বুঝে আমাদের ব্যবসা করতে হয়। কলকাতার গড়িয়াহাটের খুচরা মাছ ব্যবসায়ী সুজন প্রতিবছরের মতো এবারও প্রথমদিনেই হাজির হয়েছেন হাওড়া মাছ বাজারে। তার অভিমত, শনি ও রোববার সাপ্তাহিক ছুটি। বেশি দাম দিয়ে ইলিশ কিনলেও মাছ থাকবে না। এর অন্য কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, কলকাতার সব বাজারে এখন ইলিশের আকাল। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে গুজরাট এবং মিয়ানমারের বড় সাইজের ইলিশ ঢুকবে। তখন একটু দাম পড়তে পারে বাংলাদেশের ইলিশের।
বাংলাদেশের মাছ রপ্তানিকারক সেভেন স্টার ফিস প্রসেসিং কোম্পানির জাহিদ জানিয়েছেন, বাজার মন্দের ভালো। আজ প্রথমদিন। দেখা যাক সামনের দিনগুলো কি হয়? ঢাকা যাত্রাবাড়ীর রূপা এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী বলেছেন, অনুমোদন দেওয়া হলো প্রায় চার হাজার মেট্রিক টনের মতো। সময় দেওয়া হলো ২২ দিন। তার মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অভিযান শুরু হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে অত ইলিশ এখানে আনা সম্ভব না। ফলে অনুমোদন পাওয়া মাছ এখানে আসবেও না। তার ওপর এখানে এবার বাজার খারাপ। আমাদের প্রায় সব কার্টন পড়ে রয়েছে। তিনি অভিযোগ করে জানিয়েছেন, চাহিদার থেকে মাছ রপ্তানির বেশি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এ কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার যখন ভারত সরকারকে এই মাছের অনুমতি দেয়, তখন বাংলাদেশের মানুষ মনে করে , আমরা খেতে পারছি না সব মাছ ইন্ডিয়া খেয়ে ফেলছে। আসলে তা নয়। বরং কলকাতা থেকে এবারে বাংলাদেশের বিক্রি বেশি। কলকাতায় সেই হারে বিক্রি নেই। ফলে আমাদের লসের একটা আশঙ্কা রয়েছে।
তবে শহরের খুচরা ব্যবসায়ীরা মনে করেছেন, মাছ আরও একটু পরে এলে ভালো হতো। প্রথমত এটা পচনশীল পণ্য, ফলে বেশিদিন ধরে রাখা যাবে না। দুর্গাপূজা ২০ অক্টোবর অর্থাৎ প্রায় একমাস বাকি। তারমধ্যে মাস শেষ। সাধারণ মানুষের হাতে আর্থিক টান থাকে। যে কারণে পরপর দু’দিন ছুটি থাকার পরও শুক্রবার মাছের ব্যবসা জমে ওঠেনি। তবে নিরাশ হতে চান না কেউ-ই। ব্যবসায়ীদের কথোপকথনে বোঝা গেল, ভারতীয়দের মাছ খাওয়াতে দুপারের বাঙালি এখন কোমর বেঁধে নামতে পারে। ফলে তারা লাভের অঙ্কটা মোটা রাখবে নাকি কিছুটা তার থেকে ছাড় দেবে তা আর কিছুদিন বাদেই বোঝা যাবে।