হাবিবুর রহমান, ঢাকা: ভারতের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে দ্রুত পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করা হবে। দুদেশের স্বাক্ষরিত এ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে ভারত ত্রিপুরা, দক্ষিণ অসম এবং মিজোরামে বিকল্প পথে মোটর স্পিরিট, হাই-স্পিড ডিজেল, সুপিরিয়র কেরোসিন তেল এবং তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসসহ পেট্রোলিয়াম পণ্য চলাচলের সুবিধা পাবে।
এর জন্য প্রতি কিলোমিটারের প্রতি টনে ১ টাকা ৮৫ পয়সা খরচ নির্ধারণ হয়। মেঘালয়ের ডাউকি থেকে বাংলাদেশের তামাবিল, সিলেট, ফেঞ্চুগঞ্জ হয়ে সিলেট বাইপাস ব্যবহার করে রাজনগর, মৌলভীবাজার, শমশেরনগর, চাতলাপুর থেকে ত্রিপুরার কৈলাশরে পৌঁছাবে। ট্যাঙ্কারগুলো বাংলাদেশের প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে। সমঝোতা স্মারকটি চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ২০১৬ সালে ত্রিপুরায় পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহের অনুমতি সংক্রান্ত একই ধরনের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
চলতি বছর ভারী বর্ষা উত্তর-পূর্ব ভারতে রাস্তার অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যার ফলে অসমের মধ্য দিয়ে পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটছে। এতে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য ত্রিপুরা, দক্ষিণ অসম এবং মিজোরামে পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখার জন্য একটি জরুরি বিকল্প পথের জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এদিকে পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশের সৈয়দপুর বিমানবন্দরের পাশাপাশি খুলনার মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের জন্য নেপালকে আবারো প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেপালের সফররত সংসদীয় প্রতিনিধি দল শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে এ আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নেপাল আমাদের মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে সুবিধা নিতে পারে।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নেপালের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন নেপালের ফেডারেল পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারপারসন পবিত্র নিরুওলা খারেল।
বাংলাদেশ সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তুলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপালসহ প্রতিবেশী দেশগুলো বিমানবন্দরটি ব্যবহার করতে পারবে।বৈঠকে উভয়পক্ষ পারস্পরিক সুবিধার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুসংহত করার আগ্রহ প্রকাশ করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশকে সমর্থন করায় নেপালের নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, নেপালসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাকে তার সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। প্রধানমন্ত্রী নেপালী প্রতিনিধি দল ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর এবং বাংলাদেশ সংসদ পরিদর্শন করা এবং বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু হয়ে টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার প্রেক্ষিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বৈঠকের শুরুতে নেপালের প্রতিনিধি দল তাদের জন্য চমৎকার কর্মসূচি আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন যে, নেপাল ও বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক উপভোগ করে আসছে। তারা উল্লেখ করেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপনের জন্য এ বছরটি উভয় দেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।তারা আশা প্রকাশ করেন যে, দুই দেশ বিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ, পর্যটন, শিক্ষা, আইসিটি, সংযোগ এবং জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের মতো খাতে তাদের সহযোগিতা আরও সুসংহত করতে পারে। তারা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করতে নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের সফরের ওপর জোর দেন।
প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রশংসা করেন, যাকে তারা অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক বলে অভিহিত করেন।নেপালি প্রতিনিধি দলে ছিলেন- সংসদ সদস্য চাঁদতারা কুমারী এমপি, ড. দীপক প্রকাশ ভট্ট এমপি, দেব প্রসাদ তিমলসেনা এমপি, লীলা দেবী সিতৌলা এমপি, নারদ মুনি রানা এমপি এবং সরলা কুমারী যাদব এমপি।





