হাবিবুর রহমান, ঢাকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের জন্য বছরব্যাপী অনুষ্ঠান করার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। করোনা মহামারির কারণে অনেক আয়োজনই সংক্ষিপ্ত করে নিয়ে আসতে হয়েছে। এবার সেই আয়োজনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলো সরকার। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের অনুষ্ঠান আগামী বছরের (২০২২ সাল) মার্চ পর্যন্ত বাড়বে। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।
পদ্মা সেতু উম্মুক্ত হবে ৩০ জুন: আগামী বছর (২০২২ সাল) ৩০ জুন বা এর কাছাকাছি কোনও সময়ে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ২০২০- ২১ অর্থ বছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদের কাছে এ প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়। বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ।
ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতু। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
জেলা পরিষদ আইনের সংশোধনী অনুমোদন: মেয়াদ শেষ হলে পদ ছেড়ে সরে দাঁড়াতে হবে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের। বসানো যাবে প্রশাসক। এমন বিধান রেখে ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০২১’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের ৫ বছরের মেয়াদ শেষে নির্বাচন না হলে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা হচ্ছে সংশোধিত আইনে। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে- উপজেলার চেয়ারম্যান ও পৌর সভার মেয়ররা জেলা পরিষদের সদস্য থাকবেন। এ ছাড়া কোনো পৌরসভার মেয়াদ শেষ হলে এই আইন অনুযায়ী প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে আইনে।
জেলা পরিষদের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, পরিষদ গঠন হওয়ার আগ পর্যন্ত সরকারের নিয়োগ পাওয়া প্রশাসক দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কিন্তু পরিষদ গঠনের পর মেয়াদ শেষ হলেও পরবর্তী নির্বাচিত পরিষদের প্রথম বৈঠক পর্যন্ত বিদ্যমান পরিষদকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। আইনটি সংশোধন হওয়ায় এ সুযোগ আর থাকছে না।
বিদ্যমান জেলা পরিষদ আইনের মোট আটটি ধারায় সংশোধন আনার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। জেলা পরিষদ আইনের ৩৯(১) উপধারার নিয়মানুযায়ী ‘সচিব’ পদ নামটি থাকছে না। বিদ্যমান নিয়মানুযায়ী জেলা পরিষদে উপসচিব মর্যাদার একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব পদে একজন কর্মকর্তাসহ অন্যরা দায়িত্ব পালন করেন। প্রস্তাবিত সংশোধনে ‘সচিব’ পদবির পরিবর্তে ‘নির্বাহী কর্মকর্তা’ পদবির প্রস্তাব করা হয়েছে।
সনদ ছাড়া চলচ্চিত্র দেখালে জেল-জরিমানা: ব্যক্তি সংশ্লি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের সনদ ছাড়া কোনো চলচ্চিত্র প্রদর্শন করলে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন, ২০২১’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এতদিন আমাদের সিনেমাগুলো অনুমোদন করা হতো সেন্সরসিপ অব ফিল্ম অ্যাক্ট-১৯৬৩ এবং ১৯৭২ সালে একটি অ্যামেনমেন্ড করা ছিল। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে আইনটিকে সংশোধন করা হয়েছিল। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে এটাকে মোডিফিকেশন করা হয়েছে যে, আইনটি একচুয়েলি সেন্সরশিপ আইন থাকা ঠিক হবে না, এটা সার্টিফিকেশন আইন হওয়া উচিত। তার একটা পার্ট থাকবে সেন্সর। শুধু সেন্সর থাকলে এখানে অন্য রকম অসুবিধা হয়।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এখন সার্টিফিকেশন আইন। সার্টিফিকেশন আইনে গেলে সেখানে সেন্সর একটা পার্ট থাকবে। সেজন্য উনারা একটা অ্যামেনমেন্ড নিয়ে এসেছিলেন। এখানে খুব বেশি বা ম্যাসিভ কোনো চেঞ্জ হয়নি। সেন্সরশিপ যে আইনটি ছিল, তার সঙ্গে কিছু কিছু যোগ করে এ আইনটা নিয়ে আসা হয়েছে।’ শাস্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি সার্টিফিকেশনবিহীন কোনো চলচ্চিত্র বা প্রতীকবিহীন কোনো সার্টিফিকেশন পাওয়া চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন তাহলে সে অপরাধে তিনি অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর কোনো ব্যক্তি যদি কোনো চলচ্চিত্রের সার্টিফিকেশন পাওয়ার পর কোনো টেম্পারিং করেন…অনেক সময় যে সিনগুলো সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত না বা সেন্সর না সেগুলো যোগ করেন, তাহলে দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা দুই লাখ টাকা জরিমানা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বোর্ডে আগের মতোই একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। ১৪ জন সদস্যসহ মোট ১৫ জনের একটি বোর্ড থাকবে, যারা সার্টিফিকেট দেবে। চলচ্চিত্রের সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে শ্রেণিবিন্যাস ও মূল্যায়ন পদ্ধতি করা হবে। সেটি বিধি নিয়ে নির্ধারণ করা হবে। সাত সদস্যের একটি আপিল বোর্ড থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে আগের মতোই মন্ত্রিপরিষদ সচিব সভাপতি থাকবেন।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ভাষণের খসড়াও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী বিষয়ে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি। তিনি জানান, আগামী বছর (২০২২ সাল) প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণে বিষয়বস্তু থাকবে ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর’।