বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: ২০২২-২৩ অর্থ বছর থেকে উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন এবং সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে বা সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে ভর্তি করাতে বা ক্রেডিট কার্ড থাকলে বা নতুন কার্ড নেওয়াসহ ৩৮ ধরনের সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) আয়কর রিটার্ন দাখিলে বাধ্য করতে এরকম ৩৮ ধরনের ক্ষেত্রে প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে বাজেটে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য এই বাজেট প্রস্তাব সংসদে তোলেন। উল্লেখ্য, সারা দেশে ৭৫ লাখ ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) ধারীর মধ্যে মাত্র ২৪ লাখ তাদের ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেন।
এসব ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ হিসেবে তিন ধরনের নথির যে কোনো একটি জমা দিলেই চলবে। ১. আয়কর রিটার্ন জমার বিষয়ে এনবিআরের প্রাপ্তিস্বীকার পত্র, ২. করদাতার নাম, টিন, কর দেওয়ার বছর উল্লেখ করে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এনবিআরের দেওয়া সনদ, অথবা ৩. করদাতার নাম, টিন, কর দেওয়ার বছর উল্লেখ করে কর উপ কমিশনারের দেওয়া সনদ।
আগামী ১ জুলাই থেকে যে ৩৮ সেবা নিতে হলে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে, সেগুলো মধ্যে রয়েছে-
(১) ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণের জন্য আবেদন;
(২) একটি কোম্পানির পরিচালক বা স্পনসর শেয়ারহোল্ডার হতে;
(৩) একটি আমদানি নিবন্ধন সনদপত্র বা রপ্তানি নিবন্ধন সনদ পেতে;
(৪) সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স পেতে বা নবায়ন করতে;
(৫) সমবায় সমিতির নিবন্ধন পেতে;
(৬) সাধারণ বীমার সার্ভেয়ার হিসাবে লাইসেন্স পেতে বা তালিকাভুক্তি নবায়ন করতে;
(৭) সিটি কর্পোরেশন বা জেলা সদর বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের পৌরসভা (পৌরসভা) এর মধ্যের (যেখানে দলিল মূল্য দশ লাখ টাকার বেশি) জমি, বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির নিবন্ধন, স্থানান্তরের দলিল, বায়নানামা বা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি পেতে,
(৮) ক্রেডিট কার্ড পেতে বা বহাল রাখতে;
(৯) ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট বা সার্ভেয়ার বা অন্য কোন অনুরূপ পেশা হিসাবে পেশাদার সংস্থার সদস্যপদ পেতে বা বহাল রাখতে;
(১০) মুসলিম বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ (নিবন্ধন) আইনের অধীনে নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসাবে লাইসেন্স পেতে করা এবং বহাল রাখতে;
(১১) কোন বাণিজ্য বা পেশাদার সংস্থার সদস্যপদ পেতে বা বহাল রাখতে;
(১২) ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স এবং ছাড়পত্র পেতে বা নবায়ন করতে;
(১৩) যে কোন এলাকায় গ্যাসের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগ পেতে বা বহাল রাখতে এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গ্যাসের আবাসিক সংযোগ পেতে বা বহাল রাখতে;
(১৪) লঞ্চ, স্টিমার, ফিশিং ট্রলার, কার্গো, কোস্টার এবং ডাম্ব বার্জ, ইত্যাদি সহ যেকোন জলযানের জরিপ সার্টিফিকেট পেতে বা বহাল রাখতে যাওয়া;
(১৫) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বা পরিবেশ অধিদপ্তরের দ্বারা ইট তৈরির অনুমতি পেতে বা অনুমতি নবায়ন করতে;
(১৬) যে কোনো সিটি কর্পোরেশন, জেলা সদর বা পৌরসভায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক পাঠ্যক্রম বা জাতীয় পাঠ্যক্রমের ইংরেজি মাধ্যমের অধীনে শিক্ষা প্রদানকারী একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিশু ভর্তি করতে;
(১৭) সিটি কর্পোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে বা বহাল রাখতে;
(১৮) সংস্থা বা কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পেতে বা বহাল রাখতে;
(১৯) অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে বা বহাল রাখতে;
(২০) আমদানির উদ্দেশ্যে ক্রেডিট লেটার (এলসি) খুলতে;
(২১) পাঁচ লাখ টাকার বেশি পোস্টাল সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে;
(২২) দশ লাখ টাকার বেশি ক্রেডিট ব্যালেন্স সহ যেকোনো ধরনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে বা বহাল রাখতে;;
(২৩) ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র (সঞ্চয়পত্র) কিনতে;
(২৪) উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন বা জাতীয় সংসদের যেকোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে;
(২৫) মোটর গাড়ি, স্থান বা অন্য কোন সম্পদ ব্যবহার করে অর্থনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করলে।
(২৬) ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনিক কার্যে নিযুক্ত যে কোনও ব্যক্তি বা উৎপাদন কার্যের কোনও তত্ত্বাবধায়ক পদে নিযুক্ত যে কোনও ব্যক্তির দ্বারা “বেতন” শিরোনামে শ্রেণীবদ্ধযোগ্য প্রাপকের আয়ের অর্থ গ্রহণ করলে;
(২৭) সরকারের কোনো কর্মচারী বা কর্তৃপক্ষ, কর্পোরেশন, সংস্থা বা সরকারের কোনো আইন, আদেশ দ্বারা গঠিত সরকারের ইউনিট থেকে “বেতন” শিরোনামের শ্রেণীবদ্ধযোগ্য প্রাপকের আয়, যদি এ আয় বছরের যেকোনো সময়, ষোল হাজার টাকা বা তার বেশি মূল বেতন হয়;
(২৮) মোবাইল ব্যাংকিং বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক উপায়ে অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বা মোবাইল ফোন অ্যাকাউন্টের রিচার্জ সংক্রান্ত কোনো কমিশন, ফি বা অন্যান্য অর্থ গ্রহণ করতে;
(২৯) পরামর্শ পরিষেবা, ক্যাটারিং পরিষেবা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পরিষেবা, জনশক্তি সরবরাহ বা নিরাপত্তা পরিষেবার জন্য কোনও সংস্থার কাছ থেকে কোনও বাসিন্দা অর্থ গ্রহণ করালে;
(৩০) মাসিক পেমেন্ট অর্ডারের (এমপিও) অধীনে সরকারের কাছ থেকে কোনো অর্থ গ্রহণের ক্ষেত্রে, যদি পেমেন্টের পরিমাণ প্রতি মাসে ষোল হাজার টাকার বেশি হয়;
(৩১) একটি বীমা কোম্পানির এজেন্সি সনদপত্রের নিবন্ধন বা নবায়ন;
(৩২) দুই এবং তিন চাকার গাড়ি ব্যতীত যেকোনো ধরনের মোটর গাড়ির নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন;
(৩৩) এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোতে নিবন্ধিত একটি বেসরকারী সংস্থা বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির লাইসেন্সধারী একটি মাইক্রো ক্রেডিট সংস্থাকে বিদেশী অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে;
(৩৪) বাংলাদেশের ভোক্তাদের কাছে যেকোনো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কোনো পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করতে;
(৩৫) কোন ক্লাবের সদস্যপদের জন্য আবেদন জমা দিতে
(৩৬) পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন, বা পরিষেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে একজন বাসিন্দার দরপত্র নথি জমা দিতে;
(৩৭) বাংলাদেশ থেকে আমদানি বা রপ্তানির জন্য একটি বিল অফ এন্ট্রি জমা দিতে;
(৩৮) রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (সিডিএ), খুলনা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেডিএ) এবং রাজশাহী ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (আরডিএ), বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার উদ্দেশ্যে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা পেশ করতে।
তবে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সাধারণ বা বিশেষ আদেশের মাধ্যমে যেকোন ব্যক্তিকে রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাদকতা থেকে অব্যাহতি দিতে পারে।