লন্ডন, ১৭ জুলাই- রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, আসাম, দিল্লির মতো বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোয় বাংলাভাষী শ্রমিক দেখলেই হেনস্থা করা হচ্ছে। বাংলা কথা বললেই ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে বাংলাদেশে পুশইন করা হচ্ছে। এমনকি অবৈধ বাংলাদেশি বলে এনআরসি নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশকিছু ইন্ডিয়ানকে বাংলাদেমি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়েও দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
পরপর বেশ কিছু এমন ঘটনা সামনে আসার পরেই ভিন রাজ্য বাঙালিদের উপরে অত্যাচারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বাঙালি হেনস্থার প্রতিবাদে বুধবার (১৬) কলেজ স্কয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত বৃষ্টিতে ভিজে মিছিল করেন তিনি। রীতিমতো হুংকার দিয়ে মমতা বলেন, “বাংলায় কথা বললেই গ্রেপ্তার করবে বলছে। ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দিচ্ছে। ইয়ার্কি হচ্ছে! আমি এসব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করব। আমি ঠিক করেছি, আরো বেশি বাংলায় কথা বলব। ক্ষমতা থাকলে আমাকেও ডিটেনশন শিবিরে রাখুন।”
এদিন মিছিল শেষে ধর্মতলায় ঝাঁঝাল বক্তৃতায় বিজেপিকে আক্রমণের পাশাপাশি, কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা। বলেন, “ভারত সরকার ও বিজেপির আচরণে আমি অত্যন্ত দুঃখিত, লজ্জিত, ব্যথিত। একটা প্রবাদ আছে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়, শাড়ির চেয়ে গামছা, মন্ত্রীর চেয়ে আমলা বড়, নেতার চেয়ে চামচা!”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ভারত সরকার একটি গোপন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেটি আমরা চ্যালেঞ্জ করব। গোপন বিজ্ঞপ্তিটি বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে পাঠিয়েছে। সেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, যাকেই সন্দেহ হবে, বাংলায় কথা বলে, তাকে গ্রেপ্তার করবে, ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলেও এমন করা হচ্ছে। ২২ লাখ মানুষের ওপর অত্যাচার চলছে। বাঙালিদের ওপর এই অত্যাচার আমি মানব না।”
সোমবার (১৬ জুন) বিধানসভায় দেওয়া বক্তব্যে বিজেপির ‘বাংলা-বিরোধী’ মানসিকতার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনের ইঙ্গিতও দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। বিধানসভায় দেওয়া বক্তব্যে মমতা বলেন, ‘বাংলা ভাষায় কথা বললে বাংলাদেশি বলা হচ্ছে। বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লজ্জা করে না আপনাদের! আধার কার্ড, প্যান কার্ড এবং অন্য পরিচয়পত্র থাকার পরেও শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে মহারাষ্ট্রে বিজেপি সরকার এই কাজ করেছে। আমি তাদের ধিক্কার জানাই।’
সম্প্রতি ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে পুশইন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজিবির হিসাবে, গত ৭ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত পুশইন করানো হয়েছে ১ হাজার ২৪৪ জনকে। দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর বৈঠক এবং কূটনৈতিক তৎপরতার পরও তা বন্ধ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, সীমান্তে পুশইন না করে বাংলাদেশি নাগরিকদের কূটনৈতিকভাবে ফেরত পাঠাতে ভারতীয় হাইকমিশনারকে জানানো হয়েছে।
আনন্দ বাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, মহারাষ্ট্রে কাজ করতে যাওয়া তিন পরিযায়ী শ্রমিককে সম্প্রতি বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে মুম্বাই পুলিশ। পরে তাদের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করা হয়। বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের নজরে এলে রাজ্য প্রশাসনের সহযোগিতায় ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের মাধ্যমে তাদের ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, এই তিনজনই পশ্চিমবঙ্গেরই বাসিন্দা। এদের দুই জন মুর্শিদাবাদের আর একজনের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানে।