রাজীব ঘোষ: দলটা বাঙালিদের নয়। দলের কালচার সম্পূর্ণ অবাঙালি। আদতে হিন্দি বলয়ের পার্টি। রাজ্যের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে একাধিকবার এই অভিযোগ করা হয়েছে। দলটির নাম ভারতীয় জনতা পার্টি। এবার বাঙ্গালীদের পার্টি হিসেবে প্রমাণ করার জন্য সম্পূর্ণ চেষ্টা শুরু করে দিল রাজ্য বিজেপি শিবির। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে বাংলার রাজনৈতিক পরিসর বাড়ানোর জন্য বিজেপি এই কৌশল নেওয়া শুরু করল বলেই মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
বাংলার রাজনীতির প্রেক্ষাপটে একটা বিষয় প্রায়ই শোনা যায় বিজেপি আদতে হিন্দি বলয়ের পার্টি। সেই দলের মধ্যে বাঙ্গালীদের গুরুত্ব অনেক কম। ফলে এই কারণে বিজেপিকে রাজনৈতিক ভাবে যথেষ্ট সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্য থেকে বিজেপি ১৮ টি আসনে জয়লাভ করেছে। তারপর থেকে তৃণমূল সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাংসদ, বিধায়ক, নেতা-নেত্রীরা একে একে বিজেপিতে যোগদান করতে শুরু করেন। যদিও তাদের মধ্যে বেশ কিছু নেতা-নেত্রী পরবর্তীতে ফের তৃণমূলে ফিরে যান।
তবে রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিরোধী শক্তি হিসেবে বিজেপি এই মুহূর্তে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যাপক রাজনৈতিক লড়াই শুরু করেছে। বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভার্চুয়াল জনসভার মাধ্যমে রাজ্যের নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে রেশনে অনিয়ম, ত্রাণ দুর্নীতিসহ একাধিক অভিযোগে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচী শুরু করা হয়েছে।
ফলে রাজ্যে নির্বাচনের অনুকূল হাওয়া বুঝতে পেরে অবাঙালিদের সরিয়ে দিয়ে পার্টিতে বাঙালি মুখ সামনে আনার কৌশল নিয়েছে গেরুয়া শিবির।বিজেপির রাজনীতি যেখান থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় সেই কলকাতা সাংগঠনিক জেলাতেও অবাঙালিদের প্রাধান্য কমানো হচ্ছে। সম্প্রতি সদ্য গঠিত রাজ্য কমিটি থেকে তিনজন অবাঙালি পদাধিকারী কে বাদ দিয়েছে বিজেপি। সেই জায়গায় বেশ কিছু প্রাক্তন তৃণমূল নেতাকে তুলে আনা হয়েছে। দক্ষিণ এবং উত্তর কলকাতার সাংগঠনিক জেলার অবাঙালি সভাপতি কে সরিয়ে দিয়ে বাঙালি মুখ আনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাদের ভাষণে বারবার বাঙালির আবেগ কে গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য রাখছেন। জানা গিয়েছে, অমিত শাহ বাংলাও শিখছেন। এর থেকে পরিষ্কার ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা দখল একমাত্র লক্ষ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। সেই কারণে পুরনো ব্যবস্থা বদলে বাংলার ঘাস ফুলের মাটিতে পদ্ম চাষ করতে উঁচু থেকে নিচু তলার নেতৃত্বে বাঙ্গালীদের প্রাধান্য দিতে চলেছে বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজ্য বিজেপির এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।