বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর বাজারে মাছ, মাংস, সবজিসহ নিত্যপণ্য যার কাছ থেকে যত বেশি দামে পারা যায়, সেভাবেই নিচ্ছেন বিক্রেতারা। এই পরিস্থিতিতে দোকানগুলোতে মূল্য তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা ছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। কিন্তু এ নির্দেশনার তোয়াক্কা করছেন না বেপরোয়া ব্যবসায়ীরা। তালিকা না টাঙিয়ে ইচ্ছে মতো দামে বেচাকেনা চলছে। তবে কোনো কোনো দোকানে মূল্য তালিকা থাকলেও সেটি নামে মাত্র রাখা হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজার, কৃষি মার্কেট, ঢাকা উদ্যান মনির মিয়ার বাজার, গুলশান-২ নম্বর কাঁচাবাজার, রামপুরা বাজার, শান্তিনগর বাজার, কাওরান বাজার, হাতিরপুল বাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পণ্যের মূল তালিকা লাগানো নেই। থাকলেও ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রিতে সেগুলো অনুসরণ না করে ইচ্ছে মতো দাম নিচ্ছে।
অন্যদিকে কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ ঢাকার দক্ষিণ ও ঊত্তর সিটি করপোরেশন থেকে বার বার বলার পরও মূল্য তালিকা টাঙানো হয়নি। আর টাঙানো থাকলেও নেই কোনো কার্যকারিতা। এছাড়াও বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি মনিটরিং সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
বাজারের মূল্য তালিকা প্রতিদিন প্রকাশ করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বড় সাইন বোর্ডে মূল্য তালিকা টানিয়ে দেওয়া হয়।
ক্রেতারা বলছেন, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজারের অস্থির পরিস্থিতি বন্ধ করার চেষ্টা করলেও নেই তেমন কোনো কার্যকারিতা। বরং ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত কারসাজি করে যাচ্ছেন।
ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা সরকারি বিধান মেনে মূল্য তালিকা অনুযায়ী পণ্য বিক্রি করছেন।
হাতিরপুল বাজারের ক্রেতা অসীম তালুকদার বলেন, বর্তমানে বাজারের অবস্থা অনেক খারাপ। এর মধ্যে সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে বিক্রি করছে না কোনো পণ্য। যার কাছ থেকে যত বেশি দাম রাখতে পারে নিচ্ছে। মূল্য তালিকা না টাঙিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ী।
অসীম তালুকদার বলেন, বাজারে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা নেই। বাজারে গেলেই মানুষের কষ্টের কথা শোনা যায়। বিক্রেতারা তালিকার কোনো তোয়াক্কা না করে নিজের মতো করে মানুষকে ধোকা দিচ্ছেন।
রামপুরা বাজারে সৈয়দ হোসেন নামে এক ক্রেতা বাজার করতে এসে বলেন, আমরা ফেসবুক, ইউটিউব, পত্রিকাসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখতে পাচ্ছি বাজার নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তদারকি করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো ব্যবসায়ীই বাস্তবে সরকারের নির্দেশনা মানছে না।
সৈয়দ হোসেন বলেন, ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বাজারে গেলেই দেখা যায় এক টাকা দাম বাড়লে ব্যবসায়ীরা দুই টাকায় বিক্রি করে। এটা আসলে খুবই দুঃখজনক ব্যপার!
কাওরান বাজার এলাকার মাছ বিক্রেতা মাইদুল ইসলাম বলেন, ক্রেতারা একদামে কিনতে চায় না। তালিকা দেখে আমাদেরকে বলে আমরা নাকি ভুয়া মূল্য তালিকা টাঙিয়েছি। তো আমরা কী করবো?
রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. খালেদ মিয়া বলেন, কাস্টমার দামাদামি করে কিনতে পছন্দ করে। পণ্য তালিকা বিশ্বাস করে না।
রামপুরা বাজারের মাংস বিক্রেতা দেলোয়ার কসাই বলেন, পণ্য তালিকা টাঙালেও ক্রেতারা ঝগড়া করে, না টাঙালেও ঝগড়া করে। তো আমরা কী করবো! আমরাও এর জন্য তালিকা লাগাই না।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মানুষের যদি একটু সন্দেহও থাকে সেই সন্দেহ দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের আরও একটু ভালো করে তদারকি করে পণ্যের মূল্য প্রকাশ করা উচিত। অতীতের ভুলত্রুটি সব সুন্দরভাবে ঘুছিয়ে বিভিন্ন বাজারে মূল্যতালিকা টানানো নিশ্চিত করা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আ ন ম তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সব সময় মূল্য তালিকা নিয়ে বাজার নজরদারিতে রাখি। এটা ঠিক যে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই মূল্য তালিকা টাঙায় না। এজন্য মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে মূল্য তালিকা নিয়ে কাজ হচ্ছে। মূল্য তালিকা থাকার পরেও যারা না টাঙিয়ে ব্যবসা করছেন অবশ্যই তাদের মোবাইল কোর্ট দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।