নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল অঙ্কের টাকা বৈধ করার ম্যাজিক বক্স। এই বাজেটকে ‘ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর কিছু নেই। তবে তিনি ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের পাচার হয়ে যাওয়া অবৈধ অর্থ-সম্পদকে বৈধতা দেওয়ার লাইসেন্স দিয়ে পুরো দেশ ও জাতির যে অপূরণীয় ক্ষতি করা হচ্ছে, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন।
বিএনপি মহাসচিবের ভাষ্য, এই বাজেটে লুটের টাকা, বিশেষ করে বিদেশে পাচার করা অবৈধ অর্থকে সামান্য কিছু করের বিনিময়ে বৈধতা দিয়ে দুর্নীতির দুয়ার অবারিত করা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও দেশের প্রচলিত আইনের বিরোধী। সরকার এর মাধ্যমে ‘দুষ্টের পালন, শিষ্টের দমন’ নীতি গ্রহণ করছে। এটি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’বিরোধী। আর তাই দেশবিরোধীও বটে।
সরকারের লুটেরা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী স্বজনদের অর্থ পাচার করার সুযোগ করে দিতেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম কমানোর কোনো কার্যকর কৌশল না নিয়েই শুধু নিজেদের বিত্তবৈভব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই বাজেট প্রণীত হয়েছে।
গত ১৪ বছর সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজনই বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করে নিয়েছেন বলে দাবি করেন ফখরুল। তিনি বলেন, এখন এ ঘোষণার মাধ্যমে সরকার পাচারকারীদের অবৈধ অর্থ বৈধ করার ঢালাও সুযোগ করে দিল। এর আগেও বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এবার পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। প্রথমবারের মতো পাচারকারীদের এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক—যেকোনো মানদণ্ডেই অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পাচার করা টাকা বৈধ করার এ ঘোষণার তীব্র নিন্দা এবং এটি বাতিল করার জোর দাবি জানান মির্জা ফখরুল। পাশাপাশি অনতিবিলম্বে পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাদের অর্জিত অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান তিনি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ব্যবসায়ীবান্ধব উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, জনকল্যাণের কোনো কথাই এতে স্থান পায়নি। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতিতে মানুষের যখন নাভিশ্বাস, তাদের স্বস্তি দেওয়ার কোনো কথা এ বাজেটে নেই। করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি, স্বস্তি পায়নি মধ্যবিত্ত। বাজেটে যেসব পণ্যের আমদানি কর বাড়ানো হয়েছে, সেগুলোর ভোক্তা মূলত মধ্যবিত্তরাই। অতিদরিদ্রদের কাছে ১০ টাকা দরে যে সামান্য কিছু চাল বিক্রি হতো, তার মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে ১৫ টাকা। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে ১৬০ টাকার সয়াবিন তেল এখন সরকারই নির্ধারণ করে দিল ২০৫ টাকা। ৩৫ দিনের মাথায় এ নিয়ে দুইবার সয়াবিন তেলের দাম বাড়ল।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।