নিজস্ব প্রতিনিধি: বান্দরবান সদর উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে ঘুরে জমি, বাগান ও ফসলের ক্ষতি করছে একটি হাতির পাল। এতে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ওইসব পাহাড়ের বাসিন্দারা।
বনবিভাগ ও পাহাড়িরা জানান, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের কয়েকটি পাড়ায় ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে ছোট-বড় ১১ হাতির ওই পাল। প্রতি রাতেই পটকা ফুটিয়ে ও মশাল জ্বালিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন তারা।
একেক রাতে একেক পাড়ায় গিয়ে কৃষকের ক্ষেত নষ্ট করছে হাতিগুলো। ফলে সংকটে পড়েছেন তিন পাড়ার প্রায় ২০০ পরিবার। এর মধ্যে রাজবিলা ইউনিয়নেরর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাংকাপাড়ার ৭১ পরিবার, তাইংখালীর ৫০ পরিবার এবং রাবার বাগান ৯ নম্বর ব্লকে ৬৭ পরিবারের বসবাস।
ঝাংকাপাড়ার কারবারি (গ্রামপ্রধান) অংশৈ প্রু মারমা বলেন, তার নিজের ৮০০টি কলাগাছ, চার মণ কচু, মরিচ, দুই মণ আদা এবং চার একর জায়গায় ফুলঝাড়ুর ঝাড় ছিল। দুই রাতেই সব নষ্ট করেছে হাতির পাল।
তিনি আরও বলেন, ফুল ঝাড়ু বিক্রি করেই চার-পাঁচ লাখ টাকা পাই। এত বড় ক্ষতি মেনে নেয়া যায় না। হাতি তাড়ানোর আর কোনো উপায়ও নাই। এই পাড়ায় আমরা ৭১টি মারমা পরিবার। কমবেশি সবারই এক অবস্থা।
এদিকে বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বনবিভাগের রাজবিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, ‘হাতির ওই পাল দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে রয়েছে। আমি নিজেও সেখানে গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছি। এখন রাজবিলা ইউনিয়নের রাবার বাগানের ৯ নম্বর ব্লক এলাকায় পালটি অবস্থান করছে।’ নিজেদের ক্ষতি হলেও হাতির ক্ষতি না করে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের তিনি সহাবস্থানের পরামর্শ দিচ্ছেন।
জানা গেছে, রাজবিলা এলাকার পাহাড়গুলো খুব উঁচু নয়। ছোট ছোট টিলার মত। ঝাংকা ও নাইক্য খাল দুটি বেশ প্রবাহমান। দুটি খালেই বেশ পানি ও পাথর রয়েছে। খালের দু’পাশে রয়েছে ব্যক্তিগত কলাবাগান, পাহাড়ি ফুলঝাড়ুর ঝাড় এবং আদা-হলুদের ক্ষেত।
বিভিন্ন বাগান ও ফসলি জমি ঘুরে মনে হল যেন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে গেছে। গোড়া থেকে উপড়ে ফেলা হয়েছে পাহাড়ি কচু ও ফুলঝাড়ুর ঝাড়। আশপাশের কলা, পেঁপে, কুল ও সবজি বাগানের কমবেশি একই চিত্র।
কৃষক অংসাচিং মারমা নিজের ক্ষতিগ্রস্ত কলাবাগান দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে ৬০০টির মত কলাগাছ ছিল। এ ছাড়া তিন মণ আদা ও ছয় মণ কচু লাগানো ছিল। হাতির পাল সব ধ্বংস করে দিয়েছে।’
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত চাষি পাইথুইঅং মারমা বলেন, ‘সজনে বাগানে ১০০টি গাছ ছিল। কোনো কোনো গাছ একেবারে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলেছে। কোনোটা ভেঙে দিয়েছে। গাছগুলো বড় ছিল আর ভালো ফুলও এসেছে। কয়েক মাস পর সজনে ভালো দামে বিক্রি করতে পারতাম। হাতির পাল শেষ করে দিয়েছে।’
স্থানীয়রা জানান, ১০-১৫ বছর আগে একবার এ এলাকায় হাতির পাল এসেছিল। তখন একটা নির্দিষ্ট এলাকায় দীর্ঘদিন এভাবে থাকত না। কয়েক দিন অবস্থান করার পর আবার দ্রুত চলে যেত। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। যদিও মানুষের ক্ষতি এখনও করেনি।
কৃষকদের ধারণা, হাতির পালটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বনবিভাগের অধীন দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য থেকে আসা। সম্প্রতি সেখানকার একটি বড় অঞ্চল প্রভাবশালীর দখলে চলে গেছে। ফলে সেখানকার বন-জঙ্গল ধ্বংস হয়েছে। বিপদে পড়ে হাতির পালটি স্থানচ্যুত হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজবিলা রেঞ্জ কর্মকতা কামাল হোসেন জানান, কেউ যদি হাতির আক্রমণে মারা যায় তাহলে সরকারি বিধি মোতাবেক তিনি ৩ লাখ টাকা পাবেন। আবার কেউ গুরুতর আহত হলে পাবেন ১ লাখ টাকা। তাছাড়া কারও যদি ক্ষেতের ফসল বা বাড়িঘর নষ্ট হলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পায়। এটা সরকারে বিধিবিধান আছে এবং একটা কমিটিও আছে।