- আন্দোলনকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা হয় আওয়ামী লীগ এমপিদের নেতৃত্বে।
- বিজিবিকে যেভাবে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে ব্যবহার করেন আসাদুজ্জামান।
- র্যাব বিলুপ্তি, বিজিবিকে শুধু সীমান্তরক্ষার কাজে ব্যবহারের সুপারিশ জাতিসংঘের
“জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যাচ্ছে, পর দিন অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার নির্দেশ দেন এবং বিশেষভাবে বলেন, বিক্ষোভের নেতাদের, দাঙ্গাবাজদের ধরুন, হত্যা করুন এবং তাদের লাশ গুম করুন।”
নিজস্ব প্রতিবেদন: জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাচকালে বিক্ষোভকারীদের হত্যা ও তাদের লাশ গুম করতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন পতিত স্বৈরাচার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ‘হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন্স অ্যান্ড অ্যাবিউজেস রিলেটেড টু দ্য প্রটেস্টস অব জুলাই অ্যান্ড আগস্ট ২০২৪ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, গণঅভ্যুত্থানের সময় গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে ‘কোর কমিটির’ একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মন্ত্রী বিজিবি কমান্ডারকে আরো সহজে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
“জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যাচ্ছে, পর দিন অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার নির্দেশ দেন এবং বিশেষভাবে বলেন, বিক্ষোভের নেতাদের, দাঙ্গাবাজদের ধরুন, হত্যা করুন এবং তাদের লাশ গুম করুন।” আন্দোলনের সময় মাঠপর্যায়ে এসব নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। ফলে ১৮ আগস্টের পরে পাওয়া নিহতের সংখ্যা তিনগুণ হয়ে যায় বলে ওএইচসিএইচআর জেনেছে। ১৮ জুলাই নিহতের সংখ্যা ১০০ জন জানা গেলেও—- পরেরদিন ১৯ জুলাই তা প্রায় ৩০০ জনে পৌঁছায়।
ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদন বলছে, “সংগ্রহ করা তথ্যউপাত্ত স্বাধীনভাবে পর্যালোচনার ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর জানতে পেরেছে যে, সাবেক সরকারের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো, আওয়ামী লীগের সহিংস গোষ্ঠীগুলো— পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল, যার মধ্যে রয়েছে শত শত বিচার-বহির্ভুত হত্যা এবং অন্যান্যভাবে হিংস্র শক্তি প্রয়োগের ঘটনা– যার ফলে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত, গ্রেপ্তার, নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্ব্যবহারের শিকার হন।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ ধরনের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্বেগ তৈরি করে, সুতরাং এগুলোর আরও তদন্ত হওয়া দরকার, যাতে করে এতে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও নির্যাতনের ঘটনা (আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের সংজ্ঞায়) কতোটা ঘটেছে- সেটির মাত্রা নির্ধারণ করা যায়। একইসঙ্গে বাংলাদেশের নিজস্ব আইনেও গুরুতর এসব অপরাধের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।
আন্দোলনকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা হয় আওয়ামী লীগ এমপিদের নেতৃত্বে
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন সংসদ সদস্যরাও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। সে সময়ের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ঘটনাগুলো তদন্ত শেষে আজ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে সাবেক সরকার এবং আওয়ামী লীগ সশস্ত্র কর্মীদের একত্রিত করে। তারা আন্দোলন দমনে ক্রমশ সহিংসতার আশ্রয় নেয় এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায়। শত শত মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা, বেআইনি বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হাজারো মানুষকে গুরুতর আহত করা হয়। নির্বিচারে ব্যাপক হারে গ্রেপ্তার, আটক ও নির্যাতন করা হয়।
বিক্ষোভ চলতে থাকলে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র কর্মীরা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে বা তাদের সঙ্গে মিলে বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা এবং অনেক সরকারি কর্মকর্তা হামলার নেতৃত্ব দেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র কর্মীদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের কারণ ছিল— যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখা। বেআইনি উপায়ে পরিকল্পিতভাবে তারা বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেন।
“জুলাইয়ের প্রথম দিক থেকেই বিগত সরকার ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ধরে নিয়েছিল যে আন্দোলনে রাজনৈতিক বিরোধীরা ‘অনুপ্রবেশ’ করেছে। তারা বুঝতে পেরেছিল যে, অজনপ্রিয় ওই সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে এ বিক্ষোভ বড় ধরনের রাজনৈতিক হুমকি হতে পারে,” – এতে আরও বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, “বিগত সরকার ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমন্বয় ও নির্দেশনায় পুলিশ, আধাসামরিক, সামরিক, গোয়েন্দা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শাখা একসঙ্গে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়ন চালিয়ে যায়। সুতরাং, এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সঙ্গে তখনকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব সরাসরি জড়িত থাকার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।”
জাতিসংঘ বলছে, “বাংলাদেশের আইনে বাধ্যতামূলক থাকলেও, সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে নিরাপত্তা বাহিনীর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে কোনো তদন্ত পরিচালিত হয়নি। নিপীড়ন ও নির্যাতনের অভিযোগও তদন্ত করা হয়নি। সাবেক কর্মকর্তারা তখনকার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে দাবি করেন, কোনো ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়নি।” “তবে, বিশ্বাসযোগ্য স্থানীয়-আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার প্রকাশিত অসংখ্য প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছিল এবং সেগুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করা উচিত ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার এসব প্রতিবেদনের তথ্য পাঠিয়েছিল।”
জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “১ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের ঘটনার তদন্তের বিষয়ে বিগত সরকারের কোনো প্রচেষ্টা দেখতে পায়নি জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা তো দূরের কথা।” “জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পরিবর্তে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্য চেপে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়েছে বলে মনে হয়েছে। ডিজিএফআই, এনএসআই, গোয়েন্দা শাখা ও পুলিশ হাসপাতালে অবস্থান করে আহত-নিহতের চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ ও রেকর্ড জব্দ করেছিল,” যোগ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে আরও বলা হয়, “কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ হত্যাকাণ্ড গোপন করার জন্য হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে লুকিয়ে রাখে বা পুড়িয়ে ফেলে। কিছু ক্ষেত্রে, মরদেহের গুলির চিহ্ন সরিয়ে কোনো রেকর্ড ছাড়াই পুলিশের কাছে সরবরাহ করা হয়।”
বিজিবিকে যেভাবে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে ব্যবহার করেন আসাদুজ্জামান
গত ১৮ জুলাই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ‘কোর কমিটি’ নামের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যাতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে তিনি অন্যান্য শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সামনে বিজিবি কমান্ডারকে আরও সহজে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিতে বলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন এবং র্যাব যেভাবে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিল, ঠিক সেভাবে আন্দোলনকারীদের ভয় দেখাতে আরও হেলিকপ্টার মোতায়েনের বিশেষ দাবি করেছিলেন তিনি।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের প্রকাশিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত প্রতিবেদনে সাবেক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ‘কোর কমিটি’ নামের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যাতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে তিনি অন্যান্য শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সামনে বিজিবি কমান্ডারকে আরও সহজে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিতে বলেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত একজন ওএইচসিএইচআর- এর সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য অনুযায়ী, পরের দিন অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে শেখ হাসিনাও আন্দোলন দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদেরকে আন্দোলনকারীদের হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে ‘আন্দোলনের মূল হোতাদের, সমস্যা সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তার, তাদের হত্যা এবং তাদের লাশ গুম করার’ নির্দেশ দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯ জুলাই ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীকে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ডের সঙ্গে স্পষ্টই অসামঞ্জস্যপূর্ণ’। এদিকে, নিয়মিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘কোর কমিটি’র বৈঠক হচ্ছিল। এসব বৈঠকে সামগ্রিক নীতি, বাহিনী মোতায়েন এবং কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ অভিযান নিয়ে আলোচনা করা হতো। মন্ত্রীর সভাপতিত্বে ‘কোর কমিটি’র বৈঠকে ব্লক রেইডসহ গণহারে গ্রেপ্তার অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। দ্রুতই প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশের প্রতিফলন দেখা যায়। ওএইচসিএইচআর-এর হিসাব অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা ১৮ জুলাই প্রায় ১০০ জনের থেকে ১৯ জুলাইয়ে প্রায় ৩০০ জনে পৌঁছায়।
ওএইচসিএইচআর-কে দেওয়া বিজিবির আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন অনুসারে, শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে কামাল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর মহাপরিচালক এবং তার সামরিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের ‘সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের’ মৌখিক নির্দেশ দেন। প্রতিবেদনে কামালের যাত্রাবাড়ী সফরের বিষয়টিও উঠে এসেছে। এই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে কামালকে একজন পুলিশ কমান্ডার বলছেন: ‘আমাদের গুলিতে একজন মরে, বা একজন আহত হয়, শুধু সে একা পড়ে যায়। বাকি সবাই দাড়িয়ে থাকে।’ এদিকে, ওএইচসিএইচআর-এর কাছে বিজিবি তার প্রতিবেদনে বলেছে, তারা তাদের সৈন্যদের শুধুমাত্র প্রাণহানির শঙ্কা সৃষ্টি হয় এমন পরিস্থিতিতে শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছে এবং বিজিবি সৈন্যরা শুধুমাত্র সতর্ক করতে গুলি চালিয়েছে, এতে কেউ হতাহত হয়নি।
তবে বিজিবির এসব তথ্য ওএইচসিএইচআর-কে সরবরাহ করা এনএসআই-এর রিপোর্টের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ওই রিপোর্টে বিজিবির হাতে তিনটি হত্যার বিস্তারিত তথ্য এবং সম্ভাব্য আরও একটি হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেওয়া হয়েছে (বিজিবি নাকি পুলিশের হাতে এ হত্যা হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি)। এতে আরও বলা হয়, ওএইচসিএইচআর-এর সংগৃহীত প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যে ১৯ জুলাই বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) কাছে রামপুরা ও বাড্ডা এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ওপর বিজিবি ও পুলিশের যৌথভাবে প্রাণঘাতী গুলি চালানোর তথ্য পাওয়া গেছে।
অসংখ্য প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা, চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য, গোলাবারুদের প্রভাব বিশ্লেষণ এবং ওএইচসিএইচআর-এর পাওয়া ছবি থেকে জানা যায়, বিজিবি এবং বাংলাদেশ পুলিশ সরাসরি রাইফেল ও শটগান দিয়ে ওই এলাকায় আন্দোলনরত এবং চলাচলরত জনগণের দিকে প্রাণঘাতী গুলি চালিয়েছিল। এছাড়া, জাতিসংঘ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কার্যক্রম সীমিত করে শুধুমাত্র সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কাজে লাগানো এবং সে অনুযায়ী তাদের সম্পদ ও আইনি ক্ষমতা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে।
র্যাব বিলুপ্তি, বিজিবিকে শুধু সীমান্তরক্ষার কাজে ব্যবহারের সুপারিশ জাতিসংঘের
র্যাব বিলুপ্তি এবং গুরুতর লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত নন এমন কর্মকর্তাদের নিজ নিজ ইউনিটে ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ। বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন (ওসিএইচসিআর) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের নৃশংসতা নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদনে ওসিএইচসিআর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে তাদের কাজ কেবল সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলেছে এবং ডিজিএফআইকে (প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তর) সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে তাদের কাজ সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে। এটি সরকারকে আগে যেসব কর্মকর্তা র্যাব, ডিজিএফআই বা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখায় দায়িত্ব পালন করেছেন কিংবা ২০২৪ সালের আন্দোলন বা এর আগে অন্য কোনো আন্দোলন দমনে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের কাউকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য মনোনীত না করতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে একমত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
হাইকমিশন এও বলেছে যে আন্দোলনরত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে প্রাণঘাতী মেটাল লোড করা আগ্নেয়াস্ত্র বা গোলাবারুদ ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া যাবে না। কেবল গুরুতর আঘাত থেকে বাঁচতে বা প্রাণ রক্ষার্থে এটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া যাবে। এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার কাজের অংশ হিসেবে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রাণঘাতী মেটাল লোড করা শটগানসহ সজ্জিত হওয়া বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। সেইসঙ্গে পুলিশ কর্তৃক গণহারে মামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধেরও আহ্বান জানানোর পাশাপাশি জাএকটি স্বাধীন নির্যাতন প্রতিরোধ ও আটক পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা ও নির্যাতনবিরোধী ঐচ্ছিক প্রটোকল মেনে চলার বিষয়টিও বিবেচনার কথা জানানো হয়েছে।
পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও দায়িত্ব থেকে সরানোর প্রক্রিয়ার বিষয়ে জাতিসংঘ বলেছে যে এগুলি সরকার, বিরোধী দল এবং নাগরিক সমাজসহ স্বাধীন সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় পুলিশ কমিশনের নেতৃত্বে হওয়া উচিত। এটি পুলিশি কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়/পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ডের বাইরে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনেরও পরামর্শ দিয়েছে।