জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে বিচারবহির্ভূত হত্যার পক্ষে সাফাই গাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম জিএম কাদেরের বক্তব্যে বিচারবহির্ভূত হত্যার সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমের সমালোচনার আগে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা রাখতে হবে। আমরা সমালোচনা করবো। কিন্তু যারা কাজ করেন তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখতে হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কথামতই কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি বক্তব্যে উল্লেখ করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়।
মানুষ বিপদে পড়লে পুলিশকে আগে ডাকে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সবার উচিত এমন কিছু না করা, বা না বলা, যাতে তারা ভয়ে ভীত হয়। তাদের কাজের উৎসাহটা যাতে নষ্ট না হয়। সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এটা মাথায় রাখতে হবে। জাতীয় পার্টির অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড জিয়াউর রহমানের আমল থেকে শুরু হয়েছে। আমাদের বহু নেতা-কর্মীর লাশ পাওয়া যায়নি।
সংসদ নেতা বিচারবহির্ভূত হত্যা ঘটছে সেটা মেনে নিয়ে বলেন, সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। কীভাবে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করবো, আমরা সেই চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আমাদের মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কথা মতো কাজ করে যাচ্ছে। তারা যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছে। তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এটা করছে। সেগুলো করতে গিয়ে যদি কিছু দুর্ঘটনা ঘটে, এটা খুব অস্বাভাবিক নয়, ঘটে। তবে আমরা কাউকে ছেড়ে দিচ্ছি না। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এখানে উল্লেখ্য ক্ষমতায় যাওয়ার আগে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন পর্যায়ে ওয়াদা করেছিলেন ক্ষমতায় গেলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডে জিরো টলারেন্স দেখাবেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ব্র্যাড অ্যাডামস ‘দি ডিপ্লোমেট’-এ বাংলাদেশ ক্রসফায়ার কালচার হিটস হোম শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে গত এক দশকে ২ হাজার ৪ শত মানুষ বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। তিনি এও লেখেন, ২০০৮ সালে লন্ডনে শেখ রেহানার বাসায় শেখ হাসিনার সাথে তাঁর দেখা হয়। তখন শেখ হাসিনা প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছিলেন যে, ক্ষমতায় গেলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখাবেন। অথচ গতকাল সংসদে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের পক্ষে সাফাই গেয়ে তিনি পুলিশের এই মানবতা বিরোধী অপরাধকে প্রকৃতপক্ষে উৎসাহিত করেছেন। গতমাসে কক্সবাজারের টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে পুলিশ বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করলে দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিচারবহির্ভুত হত্যার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যে জনমত গড়ে উঠেছে তারও অবজ্ঞার সামিল।
এখানে আরো উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের পাশাপাশি বিরোধী দলের কর্মসূচিতে পুলিশ কতৃক গুলি করে খুন, বিরোধী নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে গুম করার মত মানবতা বিরোধী অপরাধ বেড়েই চলেছে। সূত্র: আমার দেশ