ইউএনবি: সারা জীবনের বিপুল সময় ও শ্রমের অর্জনগুলোকে ছয় থেকে আট মিনিটে প্রদর্শনের জন্য সিভি ও পোর্টফোলিওর কোনো বিকল্প নেই। কেননা এইটুকু সময়ের মধ্যে একজন নিয়োগ কর্তা কোনো একজন চাকরি প্রার্থীর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হন। তাই হাজার হাজার নথি দেখার সময় প্রথম দৃষ্টিপাতেই যদি নজর না কাড়ে, তাহলে সিভি ও পোর্টফোলিওটি হারিয়ে যেতে পারে সেই হাজার নথির ভিড়ে। তাই প্রথমেই সিভি ও পোর্টফোলিওটাকে চোখে পড়ার মত করে সুন্দর করে বানাতে হবে। আজকের ফিচারে থাকছে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ডকুমেন্টগুলো তৈরি করার কিছু অত্যাধুনিক উপায়।
ফ্রিতে প্রফেশনাল সিভি তৈরির তিন ওয়েবসাইট-
ওজবার
এই ওয়েবসাইটটিতে ফ্রিতে সিভি ও কভার লেটার দুটোই বানানোর সুবিধা আছে। এর আছে ত্রিশটি সুন্দর সুন্দর সিভি টেমপ্লেট। সেগুলোতে ডেমো কন্টেন্ট না থাকায় ব্যবহারকারীকে কিছুটা রাইটার্স ব্লকে পড়তে হতে পারে। তবে এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সিস্টেম যে কোনো ব্যবহারকারীকে তার সিভি তৈরি করার প্রতিটি পদক্ষেপে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবে। এখানে সাইন আপ করা ছাড়াই একাধিক পেজ নিয়ে একাধিক রিজুমি বানানো থেকে শুরু করে পিডিএফ ফরমেটে ডাউনলোড পর্যন্ত করা যাবে।
রিজুমি
এই সাইটটিকে বলা যেতে পারে অনলাইনের সেরা ফ্রি সিভি বিল্ডার। এর ২০ এর অধিক সিভি টেমপ্লেট খুব জাঁকজমক না হলেও প্রফেশনাল সিভি তৈরির জন্য যথেষ্ট। কারণ টেমপ্লেটগুলো চাকরি দাতাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। কভার লেটার তৈরির জন্যও এই সাইটটি বেশ উপযুক্ত। এই সাইট থেকে ফ্রিতে পিডিএফ, ডক, ডক্স, আরটিএফ ও টেক্সট ফরমেটে সিভি প্রিন্ট ও ডাউনলোড করা যায়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করা যায়।
অ্যাডোবি রেজুমি বিল্ডার
বিশ্ব বিখ্যাত ডিজাইন প্রতিষ্ঠান অ্যাডোবির এই ফ্রি টুলটি এক পৃষ্ঠার সিভি তৈরির জন্য সেরা। ১৩টি থিমের যে কোনোটি বেছে নিয়ে ইচ্ছেমতো কাস্টমাইজড করা যায়। অ্যাডোবি স্পার্কের এই সহজ-সাবলীল ইন্টারফেসে টেক্সট, ফটো, ভিডিও এবং লিঙ্ক যোগ করা যায়। শুধু তাই নয়, তৈরিকৃত সিভিটির একটি লিঙ্কও তৈরি করা যায় যেটি সরাসরি নিয়োগকর্তাকে ইমেইল করা যায়। ফেসবুক বা টুইটারে এটি শেয়ারের সুবিধা তো আছেই। এছাড়া এই সাইট থেকে সরাসরি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট বা অনলাইন পোর্টফোলিওতে সিভি সংযুক্ত করা যায়।
বিহান্স
ডিজাইন ইন্ডাস্ট্রিতে কম্যুনিটি ও ব্র্যান্ডিং-এর জন্য এটি অনলাইনে সেরা সাইটগুলোর একটি। এখানে প্রোফাইল তৈরির সময় ডিজাইনগুলো প্রোজেক্ট আকারে আপলোড করা হয়, যেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকে ছবি ও ভিডিও থেকে শুরু করে বিভিন্ন ডিজিটাল সামগ্রী। প্রতিটি প্রোজেক্টের আলাদা আলাদা লিঙ্ক তৈরি হয় যা ইন্টারনেটের বিভিন্ন জায়গায় শেয়ার করা যায়। এছাড়া বিহান্সের আরেকটি বড় পরিচয় হলো, এটি পুরোদস্তুর একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বিহান্সে ডিজাইনারদের কাজগুলো এত দৃষ্টিনন্দন ভাবে প্রদর্শিত হয় যে প্রমোশনের জন্য আলাদা কোনো টুলসের দরকার হয় না।
জিমডো
শুধু পোর্টফোলিও থিমকে কেন্দ্র করে মাত্র দুই থেকে তিনটি টেমপ্লেট থাকলেও, এর ফ্রি ফিচারগুলো অন্য যে কোনো খ্যাতনামা ব্যয়বহুল পোর্টফোলিও বিল্ডার থেকে উত্তম। এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ইন্টারফেস মিনিটের মধ্যে পুরো পোর্টফোলিও কাস্টমাইজড করতে সহায়তা করে। জিমডো দিচ্ছে পিডিএফ, জিআইএফ, জেপিজি, পিএনজি, এসভিজি, সিএসএস ফাইলগুলো আপলোড ও ডাউনলোড করা সুযোগ। তবে ফ্রি প্ল্যানের ক্ষেত্রে ফাইল সাইজ ১০এমবির বেশি হওয়া যাবে না। জিমডো সর্বমোট ৫০০ এমবি স্টোরেজ জায়গা, ২ জিবি ব্যান্ডউইথ ফ্রিতে দিয়ে থাকে।
কন্টেন্টলি
ডিজাইনারদের জন্য বিহান্স যা, রাইটারদের জন্য কন্টেন্টলি ঠিক তাই। এরপরেও ফ্রিল্যান্স রাইটারদের পাশাপাশি এখানে ভীর হয় ডিজাইনার, ফটোগ্রাফার, ভিডিওগ্রাফারদের। সাইটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এখানে নতুন ফ্রিল্যান্সাররা একদম ফ্রিতে পরিপূর্ণ পোর্টফোলিও তৈরি করতে পারে। এরপর সাইটটির পিডিএফ ফরমেটে পোর্টফোলিও আপলোড করাটা আরেকটা চমৎকার ব্যাপার। এটি নতুন ফ্রিল্যান্সার বা ডিজাইনারদের জন্য বেশ কাজে লাগে, কারণ তাদের অনেকেরই কাজের কোনো অনলাইন কপি থাকে না। সব মিলিয়ে এখানে বিভিন্ন ফরমেটে মোট দশটি প্রোজেক্ট যুক্ত করা যায়।
পরিশিষ্ট
উপরোক্ত ছয়টি সাইটের সঙ্গে বোনাস হিসেবে থাকলো আরেকটি সাইট, যার নাম ক্যানভা। বেশ কয়েক বছর ধরেই গ্রাফিক্সের সকল অধিকাংশ আইটেমগুলোর ফ্রিতে প্রদানের জন্য কন্টেন্ট নির্মাতাদের প্রিয় সফটওয়্যারে পরিণত হয়েছে এটি। এই ক্যানভাতে সিভি ও পোর্টফোলিও বানানো যায় এবং খুব নজরকাড়া গ্রাফিক্স দিয়েই। স্যাম্পল টেমপ্লেটের পাশাপাশি এর ড্রাগ-অ্যান্ড-ড্রপ ইন্টারফেসের মাধ্যমে খুব সহজেই যে কেউ তার সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে পারে।