|| হাসনাত আরিয়ান খান ||
সম্প্রতি ‘চ্যানেল এস’ এর ফাউন্ডার চেয়ারম্যান জ্বনাব মাহী ফেরদৌস জলিল তার ‘COVID-19’ বিষয়ক লাইভ প্রোগ্রামে অসাধু ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে অযাচিতভাবে কিছু মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ❛এই যে আমরা দেশ থাকি আইছি, আমরার যে হিন্দুইজম রক্ত ভিতরোর মাঝে রইছে, কম জাতের রক্ত ভিতরে থাকার কারণেই…হিন্দুইজম রক্ত কমজাতোর রক্ত… রক্ত যদি ভালা থাকে তে পরিচয় পাইলাইবা মাতোর মাঝে আর কামোর মাঝে আর রক্ত বাদ থাকলেই ও দেখবা দোকানো গেলে পান ৫টার বদলে দিলাইবো ৩টা আর নাইলে পচা একটা ঢুকাই দিবো…মানে তার মাথার মাঝে সব সময় চিন্তা হইলো আপনারে কিলা চুনা লাগাইবো, আপনারে কিলা ঠগিয়া খাইতো।❜ এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হলে পরদিন তিনি তার এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ❛আমি এমন মহামারি কিতা কইছি, আমি কইছি জাতের মাঝে কম জাত আছে। কম জাত কিতা কেউ মাছ ধরে, কেউ তোমার জুতা সিলাই করে, কেউ তোমার দাড়ি ফালায়, কেউ তোমার চুল ফালায়। আই ডিড নট সে এনিথিং অফেন্সিভ…কমজাত হিন্দু কিতার লাগি কইছি বিকজ আমরা হিন্দু থাকি কনভার্টেড মুসলমান। আই ডিড নট সে এনিথিং ব্যাড। এখন যদি আপনারা মনে করেন এগো কইছি প্লিজ ডু হোয়াট এভার ইউ ওয়ান্ট টু ডু। এরা আদাব নমস্কার কয়, তারা নিজের ইতিহাস জানেনা। ইতিহাস আপনার পড়তে হইবো, ইতিহাস আপনার জানতে হইবো। এখন যদি ইতিহাস আপনি না জানেন কথা বুঝতায় নায় আরেকজনের.. এই যে চৌধুরী হগল এরা সব হিন্দু থাকি মুসলমান অইছে। আমি ইতিহাস জানিয়া কইরাম…।❜মাহী ফেরদৌস জলিলের এই বক্তব্যের পরে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করলে এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশি তিন এমপি ও টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলের মেয়র এই ঘটনায় তাদের নিন্দা প্রকাশ করে মাহী ফেরদৌস জলিলকে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানালে তিনি সর্বশেষ ভিডিও বার্তায় হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে বলেন,❛…আমার আনইনটেনশনালি ভুলের লাইগে আমি আবারো আপনারার কাছে ফরগিভনেস সিক করলাম। আপনারা পোয়া মনে কইরা আমারে ক্ষমা করিয়া দিলাইবা, ভাই মনে করিয়া ক্ষমা করিয়া দিলাইবা।❜ পরবর্তীতে চ্যানেল এস কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে এই অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য কমিউনিটির মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
এই ঘটনার এখানেই শেষ হলে ভালো হতো। কিন্তু না প্রবাসে এক বাংলাদেশ নেই, সব জেলা উপজেলা তৃনমূল পর্যন্ত সবাই বিভাজনে আছে। এই গ্রুপিংয়ের বিষবাষ্প কম বেশি সবাইকে আক্রান্ত করেছে। এই ঘটনার সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছেন। কেউ কেউ অকারণ সিলেটি নন সিলেটি ইস্যু টেনে এনেছেন। আবেগের ঠেলায় কেউ একজন তার নিজ কাগজে লেখা কলামে সিলেটের স্বাধীনতাও ঘোষণা করেছেন। কেউ মাহী ফেরদৌস জলিলকে সাপোর্ট করছেন কেউ আবার এমন কুরুচিপূর্ণ ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জন্য মাহি ফেরদৌস জলিলের শাস্তি দাবি করছেন। মানবিক হিসেবে পরিচিত একটি রাষ্ট্রে বসে টেলিভিশন চ্যানেলে কিভাবে প্রকাশ্যে তিনি এ ধরণের মন্তব্য করতে পারেন তা আমাদের বোধগম্য নয় বলে অনেকে আবার বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা কেউ কেউ দর্শকদের ‘চ্যানেল এস’ বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। কেউ অফকমে অভিযোগ দিয়েছেন, কেউ লাইসেন্স বাতিলের কথা বলেছেন। কেউ একজন বিষয়টি সংসদের আলোচ্য সূচিতে তুলতে এবং চ্যানেল এস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করতে একটি অনলাইন পিটিশন স্বাক্ষরের আয়োজন করেছেন। ইতিমধ্যে সেই পিটিশনে ৪৩৫৯ জন স্বাক্ষর করেছেন। আ্যলায়েন্স আ্যগেইনস্ট রেইসিজম আ্যন্ড রিলিজিয়াস হেইট্রেড সহ লন্ডন ভিত্তিক বেশ কয়েকটি কমিউনিটি সংগঠন শুধুমাত্র ক্ষমা নয় মাহী ফেরদৌস জলিলকে ‘চ্যানেল এস’ থেকে অপসারণসহ চার দফা দাবী পেশ করেছেন। ‘চ্যানেল এস’ থেকে মাহি ফেরদৌস জলিলকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা না হলে, তারা পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুমকি দিয়েছেন।
মানুষে মানুষে কত রেষারেষি। হিন্দু, মুসলিম, সিলেটি, নন-সিলেটি, জাত-পাত, বর্ণ-বিত্ত, রক্ত-বংশ, পেশা-বৃত্তি ইত্যাদি বিষয়ে মানুষে মানুষে কত দ্বন্দ্ব, কত বিবাদ, কত দূরত্ব, কত অমিল। ভাবতে বড় অবাক লাগে আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসেও, বিলেতের মত বিশ্বের অবাধ উঠোনে দাঁড়িয়েও এখনো আমরা হিন্দু, মুসলমান, সিলেটি, নন-সিলেটি, সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ এইসব বিষয় নিয়ে মেতে আছি। অথচ এই সময়ে আমাদের গ্রেইট বেঙ্গল নিয়ে ভাববার কথা ছিলো। করোনাভাইরাস এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে আমাদের মেতে থাকবার কথা ছিলো। স্বাধীন দেশের কতটুকু অগ্রগতি হলো না হলো, এই নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার ছিলো। অথচ আমরা করছি ঠিক তার উল্টোটা। সাম্প্রদায়িক ও সিলেটি নন-সিলেটি বিতর্কের অবসান হবে না যদি না সবাই সোচ্চার হন।
লক ডাউন উঠে গেলে আমি মুখোমুখি অবস্থানে থাকা হিন্দু-মুসলিম, সিলেটি-নন সিলেটি সব গ্রুপের কাছেই যাবো। এক সাথে সকালের নাস্তা করতে করতে সব গ্রুপকেই বলবো, মাহী ফেরদৌস জলিলের কথাগুলো কিভাবে সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে রুপ নিলো? কিভাবেই বা এই ইস্যুটা সিলেটি –নন সিলেটি ইস্যুতে পরিণত হলো? ভাই আপনারা পারেনও। আসুন বিলেতে ছ’লাখের মত বাঙালির আমাদের যে সমাজ আছে তাতে সিলেটি, নন সিলেটি এবং সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানো সবাই বন্ধ করি।
নাস্তা শেষ করে ‘আ্যলায়েন্স আ্যগেইনস্ট রেইসিজম আ্যন্ড রিলিজিয়াস হেইট্রেড’ এর আহবায়ক পুস্পিতা গুপ্ত’র বাসায় যাবো। পুস্পিতা দিদিকে বলবো, মাহী ফেরদৌস জলিলের অযাচিত মন্তব্যে আমরা হিন্দু, মুসলিম, বিভিন্ন পেশাজীবি নির্বিশেষে সবাই খুবই মর্মাহত। গণমাধ্যমে এ ধরনের আপত্তিকর বক্তব্য আপনার আমার মত পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে থাকা হাজারো বাংলাদেশি এবং বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের বিমূঢ় করে দিয়েছে। তার বক্তব্যটি হিন্দু সম্প্রদায়ের চেয়ে বাংলাদেশে শত শত বছর আগে সকল ধর্মান্তরিত মুসলমানদেরকে আরো বেশি অপমানিত করেছে। মাহী ফেরদৌস জলিল ইতিহাস বিদ্যায় অজ্ঞ। তিনি যা বলেছেন তা তার নিজের অজ্ঞতা থেকে বলেছেন, জ্ঞানের সীমাবদ্বতা থেকে বলেছেন। এজন্য পরে তিনি নিজে লাইভে হাত জোড় করে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ‘চ্যানেল এস’ কর্তৃপক্ষও রীতিমত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিউনিটির মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। মাহী ফেরদৌস জলিলের খারাপ কোন উদ্দেশ্য ছিলো না। কমিউনিটির ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতির বৃহত্তর স্বার্থে আসুন আমরা মাহী ফেরদৌস জলিলকে এবারের মত ক্ষমা করে দিই। ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ। কেউ স্বীকার করুন আর না করুন কমিউনিটি আজ যে পর্যায়ে এসেছে তাতে ‘চ্যানেল এস’ এর অনেক অবদান আছে। কাজেই পিটিশন, অফকমে আবেদন, চ্যানেল বর্জনের আহ্বান থেকে সরে এসে আসুন বিষয়টি আমরা এখানেই শেষ করি। একজন ব্যক্তির অপরাধের দায়তো আর পুরো কমিউনিটি নিতে পারেনা। ‘চ্যানেল এস’ বন্ধ হয়ে গেলে বিলেতে আমাদের বাঙালি কমিউনিটির সুনাম বাড়বেনা। কাজেই আশা করি সব কিছু ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আশা করি মাহী ফেরদৌস জলিল এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিবেন।
পুস্পিতা দিদির বাসা থেকে সোজা মাহী ফেরদৌস জলিলের বাসায় যাবো। বসতে বলুক আর না বলুক বলবো, জলিল ভাই এত জাত পাত নিয়ে কেমনে ঘুমানরে ভাই? যেটা জানেন না সেটা নিয়ে কথাই বা বলতে হবে কেনো ভাই? আপনি শুধু হিন্দু মুসলিম জাতের মধ্যেই আপনার জ্ঞান সীমাবদ্ব রাখেন নাই বরং নতুন আরো কিছু জাত আবিষ্কার করেছেন। এই যেমন মাছ ধরা জাত, জুতা সিলাই করা জাত, দাড়ি ফালানো জাত, চুল ফালানো জাত। লাইভের মাধ্যমে আপনার এই অর্জিত জ্ঞান আপনি কমিউনিটিতে ছড়িয়েও দিয়েছেন। আপনি পেশাগত কাজ দিয়ে মানুষের জাত বিচার করেছেন! আপনার সেই হিসাবে আপনি হইলেন ফাউন্ডার চেয়ারম্যান জাত, আপনার একটু নীচে আহমেদুস সামাদ চৌধুরী ভাই চেয়ারম্যান জাত, আরেকটু নীচে তাজ চৌধুরী ভাই এমডি জাত, নিউজরুম পার্সনরা নিউজ জাত, স্টুডিও পার্সনরা স্টুডিও জাত, ক্যামেরা পার্সনরা ক্যামেরা জাত। এক ‘চ্যানেল এস’ এ কত কত জাত। প্রেস্টিজ অটো গ্রুপের সদস্যরা আবার ভিন্ন ভিন্ন জাত। হিন্দু জাত, মুসলমান জাত, চেয়ারম্যান জাত, ক্যামেরা জাত, মাছ ধরা জাত, জুতা সিলাই জাত এত জাত পাত নিয়ে কমিউনিটিকে কিভাবে ঐক্যবদ্ধ করবেন ভাই? আপনার ‘চ্যানেল এস’ আর প্রেস্টিজ অটো গ্রুপে কর্মরতদের ঐক্যবদ্ধ করতেই আপনি হিমশিম খাবেন ভাই। আল্লাহর বান্দা আমরা সব এক জাত। আমরা হলাম মানুষ জাত। মানুষের জাত পাত নাই তবে মানুষের ভালো মন্দ আছে ভাই। আপনি ভালো মানুষকে ভালো বলেন, খারাপ মানুষকে খারাপ বলেন কোন সমস্যা নাই। অহেতুক জাত পাতের কথা কেনো বলেন ভাই? এত জাতে কেনো মানুষকে ভাগ করেন ভাই? জাত পাত, পদ পদবি জরুরি না, জরুরি হচ্ছে মানুষের শিক্ষা, কর্ম, আচার-আচরণ, চলাফেরা ও কথাবার্তার ধরনধারণ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাঙালি জাতির জন্য সবচেয়ে বেশি করেছেন কিন্তু পরবর্তিতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বংশধরেরা ভিক্ষা করে খেয়েছেন। এখন তাদের কেউ যদি ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হন আপনি তাদের কী বলবেন? ছোট জাত হিন্দু বলবেন? এখানে একটা উদাহরণ দিলাম। এরকম আরও অনেক উদাহরণ আছে ভাই। চৌধুরীদের ইতিহাস নিয়ে আপনি যে কথা বলেছেন! এখন যদি ‘পত্রিকা’ সম্পাদক এমাদ ভাই (এমদাদুল হক চৌধুরী) আর ‘এক্সেলসিওর সিলেট’ এর এমডি সাঈদ ভাই (সাঈদ চৌধুরী) নিজেদের দ্বন্ধ ভুলে দুই চৌধুরী ভাই একসাথে আপনার বিরুদ্বে লাগেন আপনি একা মানুষ কয়দিকে সামাল দিবেন ভাই? ভাইরে, জাত বংশ নয়, ব্যক্তি চরিত্রই মানুষকে অভিজাত করে তোলে কথাটা ভালোভাবে মনে রাইখেন ভাই। আর পারলে বেশি বেশি ইতিহাস পইড়েন। জানার কোন শেষ নাই। ইতিমধ্যে আপনি ইতিহাস বিষয়ক যে বইগুলো পড়েছেন লাইব্রেরীতে গিয়ে সে বইগুলো বদলে ফেলেন। নতুন বই পড়েন। বিত্তে, ঔদ্ধত্তে, বংশ গরিমা, রক্তের বিশুদ্ধতায় নয় মানুষের পরিচয় তার শিক্ষায়, মানবিকতায়। জাত পাত রক্ত তারাই বলেন যারা জাতের মেয়ে কালো বলে বিয়ের সময় ফর্সা পাত্রী খোঁজেন। বুঝেছেন?
দুপুরে খাবারের জন্য যাবো, রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরীর বাসায়। খেতে দিক আর না দিক বলবো, শোয়েব ভাই সব ব্যাপারে আপনাকেই কেনো কথা বলতে হবে ভাই? সিলেট স্বাধীন হলে আপনার কী এমন লাভ হবে ভাই? এক সাগর রক্ত দিয়ে কেনা বাংলাদেশ, কথাটা ভুলে যায়েন না ভাই। আপনি বলেছেন, ‘লন্ডনে বাংলা কমিউনিটির যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তার সবটুকু প্রশংসার দাবীদার আমাদের পূর্ব পুরুষরা, আমাদের বাবা চাচারা। সিলেটের বাইরের লোকেরা ক্রীম খেয়েছেন। সিলেটিদের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খেয়েছেন। সিলেটেরও কিছুসংখ্যক অশিক্ষিত মানুষরা আছেন যারা সিলেটের বাইরের লোকদেরকে তোষামোদি করে চলে। আমাকে একবার এক নন–সিলেটি মহিলা জিজ্ঞেস করেছিলেন আপনার পরিবারে কি সংগীত চর্চা করেন। আমি বলেছিলাম না আমি গান গাইনা গান গাওয়াই। আমি নাচিনা আমি নাচাই। পরবর্তীতে তিনি হিসেব পেয়ে আমাকে বলেছিলেন আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। মনে মনে বলেছিলাম চিনতে না পারলে কথা বলবেন কেন? চেহারা ছুরতের কোনো বালাই নেই, লম্বা লম্বা কথা। নন সিলেটি কিছু মানুষ আছে এই লন্ডনের সমাজে এমনভাব দেখায় যেন সে অনেক কিছু, আসলে খুঁজলে তো কিছুই পাওয়া যায়না।‘ – শোয়েব ভাই, এইগুলা কী কোন সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষের কথা হলো ভাই? সিলেট তো আপনার একার না ভাই? সিলেট বাংলাদেশের আধাত্মিক রাজধানী ভাই। আপনার পূর্বপুরুষ আমারও পূর্বপুরুষ। আমার পূর্বপুরুষ আপনারও পূর্বপুরুষ। সিলেট যেমন আপনার সিলেট তেমনি আমার। সিলেটের মানুষ এবং প্রতি বর্গ ইঞ্চি মাটি আমার। শুধু সিলেটই না মাওলানা ভাসানীর মত করে বলি, ‘আসাম আমার, ত্রিপুরা আমার,কলকাতা আমার এইগুলো ছাড়া বাংলাদেশের মানচিত্র পুর্ণতা পাবেনা।’ আমরা ভারতের কাছে শেষ নবাবের অংশ পুরোটাই ফেরত চাই। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলে গেছেন, ‘বাঙালি যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে- ‘বাঙালির বাংলা’ সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করবে।’ কথাগুলো একটু ভালোভাবে ভাবেন ভাই। আমি আপনার দু‘টা কলামই পড়েছি। আপনার কলামের সূত্র ধরে বলছি, সিলেটি ভাষাকে নিয়ে যারা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করেন তারা ভুল করেন। আঞ্চলিক ভাষা কখনোই মূল ভাষার প্রতিবন্ধক নয়। আঞ্চলিক ভাষাগুলো বরং মূল ভাষাকে সমৃদ্ধ করে। এটা আমাদের গর্বের বিষয় যে আমাদের অনেকগুলো আঞ্চলিক ভাষা আছে। আপনি বলেছেন, ‘গাফফার ভাই যেদিন সিলেটিদের ‘ লাঙ্গল টু লন্ডন’ বলেছিলেন, সেদিন কিন্তু অন্য জেলার যারা লন্ডনে বসবাস করেন তারা প্রতিবাদ করেননি।’ প্রতিবাদ করেননি আপনাকে এটা কে বলেছে ভাই? যান সে সময়ের পত্র পত্রিকাগুলো খুঁজে দেখেন ভাই। আপনি এক কলামে লিখেছেন, ‘সিলেটিদের সাথে মিশেই দেখুন তারা মানুষ হিসাবে খারাপ না।’ আবার অন্য কলামে লিখেছেন, ‘এত অপবাদ এত সমালোচনা যেখানে- সেখানে তো ঘর সংসার করা যায়না। জলন্ত বিছানায় কেউ শুইতে পারেনা। আমাদেরকে আমাদের মত করে থাকতে দিন প্লিজ। আমরা আপনাদেরকে বিরক্ত করতে চাইনা। আশা করি আপনারাও বিরক্ত করবেন না। আমি বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মাননীয় সরকার সিলেট কে কি আলাদা করে দেয়া যায়? কারণ আমি যা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে সমস্যা হবে। সমস্যা হলে তখন স্বাধীনতার ঘোষণা আসবে। আমার মনে হয় সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা যদি এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেন তাহলে খুবই উপকার হবে। কি দরকার সম্পর্ক নষ্ট করার? অষ্ট্রেলিয়ান ষ্টাইলে সরকার চলতে পারে। প্রয়োজনে আমরা সিলেটিরা বাংলাদেশ সরকারকে অষ্ট্রেলিয়া কানাডার মত টেক্স দিলাম। যেমনি ভাবে বৃটেনের রয়েল ফ্যামেলিকে ওরা টেক্স দেয়। বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো।’ – শোয়েব ভাই এইগুলা কী বলেন ভাই? আপনি সব সময় এরকম কন্ট্রাডিকটরি কথা কেনো বলেন ভাই? রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক কথা কেনো বলেন ভাই? আপনি ‘লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব’ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ‘ইউকে বাংলা প্রেসক্লাব’ করেছেন। সাংবাদিক সমাজকে বিভক্ত করেছেন। সিলেটের স্বাধীনতা দিলেও তো আপনি সন্তুষ্ট থাকবেন বলে মনে হয় না ভাই। আপনি তখন সিলেট থেকে বিয়ানী বাজার, বিয়ানী বাজার থেকে মৌলভী বাজারের স্বাধীনতা চাইবেন ভাই। মানুষ এইসব বুঝে ভাই। কাজেই এইসব আজে বাজে কথা বাদ দিয়ে ভারতের কবল থেকে কিভাবে ‘আসাম’ উদ্ধার করা যায় সেই চিন্তা করেন। রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলে বার্মিজরা আরাকান থেকে বিতাড়িত করেছে যান বুকের পাটা থাকলে আরাকানে গিয়ে বার্মিজদের চোখে চোখ রেখে বলেন, ‘ইফ দে আর বেঙ্গলি ল্যান্ড ইজ আওয়ারস।’ কাজের কাজ কিছু করেন ভাই। আল্লাহর দোহাই লাগে কমিউনিটিকে বিভক্ত কইরেন না ভাই। সিলেটি-নন সিলেটি কার্ড খেলা বন্ধ করেন ভাই।
বিকেলে কফি খেতে যাবো কবি দিলু নাসেরের বাসায়। গরম ধোয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিয়ে বলবো, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর সাথে আপনার একটা বিশেষ সম্পর্ক ছিলো বলে অধুনালুপ্ত সঙ্গীতার শাহিনুর ভাইয়ের কাছে শুনেছিলাম। আজকে অবশ্য সেসব নিয়ে কথা বলতে আসিনি। আজকে ফেইসবুকে আপনার একটা কবিতা পড়ে এসেছি। আপনি আপনার ‘লন্ডনে লাইভ চ্যারিটি’ নামক ছড়া/কবিতায় লিখেছেন, চ্যারিটির অর্থে হয় যদি ভাই অপ-সংস্কৃতি প্রসার, প্রশ্ন তাহলে এই কর্মের কে নেবেন দায়ভার? খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন। কিন্তু আমার প্রশ্ন সেটা না। আমার প্রশ্ন, চ্যারিটির অর্থে কিভাবে অপ-সংস্কৃতির প্রসার হয় ভাই? কোন চ্যারিটি, নাম কী ভাই? আমি যতটা জানি, এখানকার চ্যারিটি সংস্থ্যাগুলোকে নানা নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। চ্যারিটি কমিশনের মাধ্যমে তাদের নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। তারপরও কারা কিভাবে চ্যারিটির টাকায় অপ-সংস্কৃতির প্রসার ঘটান যদি একটু খুলে বলতেন। কারণ আমি লাইভ চ্যারিটি’র একজন ডোনার। চিনিলাম আপনারে আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়; সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো, তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো।’
সন্ধ্যায় লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে গিয়ে মুহাম্মদ জুবায়ের ভাইকে বলবো, শুকরিয়া আপনি মানুষ হয়েছেন। মানুষ হয়ে আপনি আপনার মত অন্যদেরকেও মানুষ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ‘আসুন আবার আমরা মানুষ হই’ শিরোনামে সবাইকে বার্তা পাঠিয়েছেন। আপনি করোনা ভাইরাস থেকে করুনার শিক্ষা নিয়েছেন। মাথা নত রাখতে শিখেছেন। আহাদ ভাইয়ের মত কেউ কিছু বললেও সেসব গায়ে মাখতে নিষেধ করেছেন, সমাজ-সংসারে বাড়াবাড়ি বাদ দিতে বলেছেন। বিভাজন, হিংসা-ঘৃণা পরিহার করে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা, নীতি-নৈতিকতা আর সহমর্মিতার জয়গান গাইতে বলেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার সেই মেসেজ পড়ে আহাদ চৌধুরী বাবু ভাই সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং আপনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনিও আপনার মত মানুষ হয়েছেন। আহাদ চৌধুরী বাবু ভাই আপনার থেকে এত বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছেন যে, আপনার সেই মেসেজ তিনি তার নিউজ পোর্টালে হুবহু শেয়ার করেছেন। এবার আশাকরি, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের যে গ্রুপ থেকে আহাদ ভাইয়ের নাম্বার আপনি রিমুভ করেছেন/ আহাদ ভাইকে বহিস্কার করেছেন সেই গ্রুপে আপনি আবার তাকে ফিরিয়ে নিবেন। বাড়াবাড়ি বাদ দিয়ে, ঘৃণা পরিহার করে আহাদ ভাইয়ের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিবেন। আর হ্যাঁ, আপনারা তো কোথায় কে কাকে কী বললো, কী লিখলো প্রায় সবই অবজার্ভ করেন। মাহী ফেরদৌস জলিল ইস্যুতে প্রেসক্লাবের অবজারভেশন কী দয়া করে সবাইকে জানাবেন।
রাতে আনাস পাশা ভাইয়ের বাসায় গিয়ে ডিনার করবো। বিরুন চালের ভাতের সাথে গরুর মাংসের কালা ভুনা, খাসির রেজালা, মুরগীর রোস্ট, সরিষা ইলিশ, রূপচাঁদা ভাজা, গলদা চিংড়ি দোপেঁয়াজা ও টাকি মাছ ভর্তা দিয়ে ডিনার শেষে ডিজার্ট খেতে খেতে বলবো, বড় ভাই ড্রোন উড়িয়ে আপনার ‘ঈদ ইন দ্যা ব্যাক গার্ডেন’ ঈদ জামাতের ছবি তুলে পত্রিকায় দেওয়ার আইডিয়াটা আমার খুবই ভালো লেগেছে। আপনার ব্যাক গার্ডেন, ড্রোন, পান্জাবি, পায়জামা, জায়নামাজ সবই আমার পছন্দ হয়েছে। আগামী ঈদের জন্য আপনার এই জিনিসগুলো আমাকে লিজ দেন। আপনি সত্যবাণীতে দিয়েছেন আমি সমকালে দিবো। সমকাল সম্পাদক মোস্তাফিজ শফি ভাইয়ের ফোন নাম্বার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয় নাই। আগামী ঈদের পর সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং বজায় রেখে সব একসাথে দিবো, ইনশাআল্লাহ।
সবশেষে মাঝ রাতে আড্ডা দিতে ‘সাপ্তাহিক বাংলা পোস্ট’ এর অফিসে যাবো। সেখানে সম্পাদক তারেক ভাই, এমডি তাজ ভাই ও প্রুফ রিডারকে বাংলা পোস্টের গত সপ্তাহের লিড নিউজ ‘আম্ফান ও করোনায় ভিষন কষ্টে মানুষ’ দেখিয়ে বিনীতভাবে বলবো, ‘আম্ফান’ না শব্দটা হবে ‘উমপুন’ আর ‘ভিষন’ না সঠিক বানান হবে ‘ভীষণ’। একটা পত্রিকার ভেতরে দু’চারটা বানান ভুল থাকতেই পারে। আমি নিজেও যে খুব সঠিক বানানে লিখি ব্যাপারটা তাও না। কিন্তু সামান্য এক বাক্যের একটা লিড নিউজে এত বড় ভুল মেনে নেওয়া যায়না। পত্রিকার দিকে তাকালেই সবার প্রথম এই নিউজটাই সবার চোখে পড়বে। এটা থেকে বাচ্চারা কী শিখবে বলেন? দশবার বলেন, ‘উমপুন’। দশবার বলেন ‘ভীষণ’। এরপর বাংলা পোস্টের স্টিকার সাঁটানো মগে চা খেতে চাইবো। চা খাওয়াবেন? মনে হয়না কিপ্টা তারেক ভাই চা খাওয়াবেন। বাংলা পোস্ট অফিস থেকে বাসায় ফিরে চা খেয়ে তাহাজ্জুদ পড়ে সবার জন্য মন খুলে দোয়া করবো এবং পরদিন একটা সুসংবাদ শোনার আশায় ঘুমিয়ে যাবো।
বি: দ্র:- সকল বিভেদ পরিহার করে আমাদের অবশ্যই সামগ্রিকভাবে কমিউনিটির উন্নয়নের স্বার্থে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিভক্তির সংস্কৃতি আমাদের বেশি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে না, এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। ইন্ডিয়ান পাকিস্তানীরা এদেশে আমাদের পরে এসেও আমাদের চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। প্রায় ব্রিটিশ ‘সূর্য’ স্পর্শ করছে। আমাদেরও সকল সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে এসে, সকল বিভাজন থেকে মুক্ত হয়ে সেই ‘সূর্যকে’ ছিনিয়ে আনতে হবে। আমরা যদি বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে, সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে একতাবদ্ধ থাকি আমরা পারবো ইনশাআল্লাহ।
লেখক: সম্পাদক, গবেষক, আহবায়ক- অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন (United Bengal Movement)