- বাংলাদেশ বিষয়ে আগের অবস্থানেই জাতিসংঘ
বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ বিষয়ে জাতিসংঘের আগের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা অতীতে যা বলেছে, তা অপরিবর্তিত আছে। গত সোমবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের কার্যালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক তাঁর প্রশ্নে বলেন, আবার ক্ষমতায় আসায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানানোর মাধ্যমে জাতিসংঘ মহাসচিব কি মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভুয়া নির্বাচনের বিষয়কে অবজ্ঞা করেননি? এটি কি জাতিসংঘের আগের অবস্থান, নির্বাচনের অগণতান্ত্রিক প্রকৃতির বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনারের বিবৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় কি?
জবাবে স্টিফেন ডুজারিক বলেন, না। তিনি (জাতিসংঘ মহাসচিব) প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেমনটা তিনি বিভিন্ন সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান পুনর্নির্বাচিত হলে পাঠিয়ে থাকেন। এখান (পোডিয়াম) থেকে তাঁরা অতীতে যা বলেছেন, মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার যা বলেছেন, তা অপরিবর্তিত আছে।
ব্রিফিংয়ে আরেক সাংবাদিক তাঁর প্রশ্নে বলেন, মুখপাত্র জানেন যে বাংলাদেশ ২০১৭ সাল থেকে প্রায় ৭ বছর ধরে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। প্রত্যাবাসনে অগ্রগতির অভাব সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। তারা ক্রমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। অন্যদিকে মানবিক তহবিল, আন্তর্জাতিক…মানবিক মনোযোগ—সবকিছু সংকুচিত হচ্ছে। এই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতিসংঘ মহাসচিবের পরিকল্পনা কী?
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, প্রথমত, কাউকে কখনো প্রত্যাবাসন করা উচিত নয়। কোনো শরণার্থীকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রত্যাবাসন করা উচিত নয়। তাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষা করে, এমন পদ্ধতিতে স্বেচ্ছায় তা করা দরকার। এটা তাঁদের (জাতিসংঘ) কাছে স্পষ্ট যে মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করছে না।
স্টিফেন ডুজারিক আরও বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজার পরিদর্শন করেছেন। আমাদের যা দরকার, তা হলো কক্সবাজারের বাসিন্দাদের মতো যেসব মানুষ উদারভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য বিশ্বব্যাপী সংহতি বাড়ানো। কারণ, আমাদের সংহতিটা শরণার্থীদের দরকার। আমাদের সংহতিটা আশ্রয়দাতাদের দরকার। এসবের জন্য আমাদের বর্ধিত তহবিল দরকার।’
বাংলাদেশ বিষয়ে আগের অবস্থানেই জাতিসংঘ
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে তাদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের কার্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ওই আহ্বান জানানো হয়। এতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি চারটি আহ্বান জানান।
এগুলো হচ্ছে-
১/ অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে সুশীল সমাজ এবং রাজনৈতিক কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে যাদের কোনো অভিযোগ ছাড়াই বা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ অভিযোগে আটক করা হয়েছে। ফৌজদারি অপরাধের জন্য অভিযুক্তদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
২/ বিচার ব্যবস্থার অখণ্ডতা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
৩/ মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, অবাধ ও বাধাবিহীন অনুশীলনের নিশ্চয়তা দেবার অনুরোধ করেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক সমাবেশে অযথা বিধিনিষেধ আরোপ করা থেকে বিরত থাকতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। একই সাথে এই মৌলিক স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন করা হলে, কেন করা হলো, তার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৪/ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সমালোচনামূলক প্রতিবেদনের বিপরীতে হুমকি, শারীরিক ও অনলাইন সহিংসতা বা বিচারিক হয়রানি এবং ফৌজদারি বিচার থেকে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমরা মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে শক্তিশালী করার জন্য এই এবং অন্যান্য পদক্ষেপের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন ও পরামর্শ দিতে প্রস্তুত। ওই বিবৃতির প্রথমে বলা হয়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং অন্যান্য কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থার অভাব প্রকাশ করে নির্বাচন বয়কট করেছে। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছি, যেখানে তাদের কথিত অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে দ্রুত এবং স্বাধীন তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনের বিপজ্জনক অবক্ষয় ঘটেছে। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হওয়ার কারণে আমরা শঙ্কিত। এটি দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করছে, যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিপন্ন করতে পারে।
আমরা সরকারকে মানবাধিকার সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিতে, মৌলিক স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অবাধ ও নিরাপদ প্রয়োগের জন্য একটি সক্ষম পরিবেশ তৈরি করার জন্য এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য অনুরোধ করছি।