পার্বত্য চুক্তির ২৪ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) পক্ষে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এ চুক্তিতে সই করেছিলেন জেএসএসের প্রধান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা। তিনি চুক্তি বাস্তবায়নের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন সাংবাদিক পার্থ শঙ্কর সাহার সঙ্গে।
পার্থ শঙ্কর সাহা: পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ কমিটি আছে। এর কার্যক্রম করোনাকালে কেমন চলল? কমিটিতে নতুন আহ্বায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাও তিন বছর আগে। আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
সন্তু লারমা: চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর। সেই থেকে আজ পর্যন্ত কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। সুতরাং আমরা বলতে পারি, করোনাকালে কমিটির দৃশ্যমান আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম নেই। আমার অভিজ্ঞতা এত সুখকর নয়। কেননা, বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা ও অনীহা দেখা যায়। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় বাজেটও বরাদ্দ করা হয় না। তাই এসবের কারণে চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির কাজে গতি আনা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
পার্থ শঙ্কর সাহা: পার্বত্য চুক্তিতে এ অঞ্চলকে ‘উপজাতীয় অঞ্চল’ হিসেবে স্বীকার করা হয়। এ অঞ্চলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের প্রতি এটি একটি স্বীকৃতি। আজ চুক্তির ২৪ বছরে কতটুকু রক্ষিত হয়েছে সেই বৈশিষ্ট্য? সেই বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখতে রাষ্ট্র কতটুকু যত্নবান ছিল?
সন্তু লারমা: চুক্তিতে ক, খ, গ, ঘ—এই চারটি খণ্ড রয়েছে। ক খণ্ডের ১ নম্বর ধারায় পার্বত্য অঞ্চলকে ‘উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চল’ হিসেবে বিবেচনা করে এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু চুক্তির ২৪ বছরে পাহাড়ের জনমিতির উল্টো চিত্র দৃশ্যমান। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ (পাহাড়ি জাতিসত্তার মানুষ) শাসকগোষ্ঠীর আগ্রাসনের কবলে পতিত। জুম্ম জনগণ ক্রমান্বয়ে কোণঠাসা ও সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। তাদের সার্বিক জনজীবন ও অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। অতএব রাষ্ট্র জুম্ম জনগণের স্বকীয়তা রক্ষায় যত্নবান ছিল না, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
পার্থ শঙ্কর সাহা: চুক্তি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আপনি কয়েকবার প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন। আপনারা আসলে কী বলতে চান? চুক্তি করার সময় কি আপনাদের মধ্যে কোনো শঙ্কা ছিল?
সন্তু লারমা: আমি আগের প্রশ্নের উত্তরে বলেছি চুক্তির ৪টি খণ্ড রয়েছে। এটি নিছক কাগুজে দলিল নয়। এই চুক্তির সঙ্গে সততা, আন্তরিকতা ও পারস্পরিক বিশ্বাসের বিষয়টি গভীরভাবে জড়িত। লিখিত চুক্তির বাইরেও অলিখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। আমরা শঙ্কা ও অবিশ্বাসের বেড়াজাল ভেঙে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, কোনো সরকারই সততা, আন্তরিকতা ও বিশ্বাসের প্রতিদান দেয়নি। চুক্তি স্বাক্ষরের পর যতগুলো সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারা কেউই চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে সদিচ্ছা দেখায়নি।
পার্থ শঙ্কর সাহা: চুক্তির একটি পক্ষ ছিল আজকের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। তারপরও বর্তমান সরকার চুক্তির বিষয়ে কতটুকু অগ্রসর হয়েছে?
সন্তু লারমা: বর্তমান সরকারসহ অতীতের সব সরকারই কার্যত উগ্র জাত্যভিমানী ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার মুখে চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিকতা ও সক্রিয়তা দেখালেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার টানা প্রায় ১৩ বছর ক্ষমতায়। ১৯৯৭ সালে এই আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গেই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু সরকার তথা শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণবিরোধী মানসিকতার পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছে। সেই কারণে চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে বর্তমান সরকারের সততা ও আন্তরিকতা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন।
- চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা প্রশ্নের মুখে। * ১৯০০ সালের শাসনবিধি এখনো একটি জীবিত আইন। * চুক্তি বাস্তবায়নে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর আশানুরূপ ভূমিকা নেই। * ভূমি কমিশনের বিধিমালা এখনো হয়নি। * পাহাড়ি মানুষের ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে সমীক্ষা দরকার।
পার্থ শঙ্কর সাহা: ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৯০০ সালের বিধিমালা’ এ অঞ্চলের স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় একটি আইনি রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত। এখন এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কিছু বলবেন?
সন্তু লারমা: পার্বত্য অঞ্চলের জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও তাদের ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৯০০ সালে এই শাসনবিধি জারি করে। এটি এখনো বলবৎ রয়েছে। ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তিতেও এই শাসনবিধিকে আত্তীকরণ করা হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক এই শাসনবিধির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। পরিস্থিতি ঘোলা করার অভিপ্রায়ে ১৯০০ সালের শাসনবিধির কার্যকারিতা নিয়ে একটি পক্ষ অহেতুক প্রশ্ন তুলছে।
১৯০০ সালের শাসনবিধির সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের পৃথক ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমির প্রথাগত রীতি ও পদ্ধতির একটি আইনি যোগাযোগ রয়েছে।
পার্বত্য এলাকার জুম্ম জনগণের ঐতিহ্যগত সামাজিক জীবনাচারের সঙ্গেও এই বিধি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। পাহাড়ের তিন সার্কেল প্রধান, হেডম্যান এবং কারবারির প্রথাকে রাষ্ট্র এযাবৎ অস্বীকার করেনি। সরকার এই প্রথাগত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের জন্য বিশেষ সরকারি ভাতাও চালু রেখেছে। তাই ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিটি এখনো একটি জীবিত আইন এবং এ আইন পার্বত্য চট্টগ্রামে বলবৎ রয়েছে।
পার্থ শঙ্কর সাহা: চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহ কতটা রয়েছে বলে আপনার মনে হয়?
সন্তু লারমা: পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সমস্যা বাংলাদেশের একটি জাতীয় ও রাজনৈতিক সমস্যা। চুক্তির বাস্তবায়নের বিষয়টিও তাই জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অ্যাজেন্ডা হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলো চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে আশানুরূপ ভূমিকা রাখতে পারছে না। এটা অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর একটা আত্মজিজ্ঞাসার বিষয়।
আমরা জুম্ম জনগণ প্রত্যাশা করি, জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজ নিজ কর্মসূচিতে চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে এগিয়ে আসবে। আমি কামনা করি, জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও দলগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে চুক্তি বাস্তবায়নে অধিকতর সক্রিয় হবে। চুক্তি বাস্তবায়নে দেশের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো অধিকতর সহায়ক ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে, এটাই পাহাড়ের গণমানুষের চাওয়া।
পার্থ শঙ্কর সাহা: ‘আঞ্চলিক পরিষদ’ নামের অনন্য প্রতিষ্ঠানটি পার্বত্য চুক্তির ফল। এর চেয়ারম্যান আপনি। আঞ্চলিক পরিষদকে অকার্যকর করে রাখার অভিযোগ আপনি করেছেন একাধিকবার।
সন্তু লারমা: চুক্তির গ খণ্ডে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ নিয়ে বিভিন্ন ধারা-উপধারা রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আঞ্চলিক পরিষদ। সম্পাদিত চুক্তির গ খণ্ডের ১৩ নম্বর ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, ‘সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে গেলে আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে ও ইহার পরামর্শক্রমে আইন প্রণয়ন করিবেন।’ আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয়েছে ঠিকই; কিন্তু সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে ক্ষমতায়ন করছে না।
পাহাড়ে আইন প্রণয়নের প্রাক্কালে প্রায়ই আঞ্চলিক পরিষদকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তিন পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলা, উন্নয়ন ও প্রশাসনিক ক্ষমতা আঞ্চলিক পরিষদের ওপর ন্যস্ত করা হয়নি। এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে চুক্তির ২৪ বছরের মাথায় এসেও অকার্যকর অবস্থায় রাখা হয়েছে। আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি মনে করি উগ্র জাত্যভিমানী, সাম্প্রদায়িক ও স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক মহল ও আমলাতন্ত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক। আঞ্চলিক পরিষদ অকার্যকর করে রাখায় বস্তুত এ পর্যন্ত চুক্তিবিরোধী শক্তিই লাভবান হচ্ছে।
পার্থ শঙ্কর সাহা: সরকার পার্বত্য অঞ্চলে বিপুল উন্নয়নের কথা বলছে। এসব উন্নয়ন তৎপরতায় আঞ্চলিক পরিষদের অংশীদারি কতটুকু?
সন্তু লারমা: চুক্তির গ খণ্ডের ৯(ক)-তে উল্লেখ আছে, ‘পরিষদ তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে পরিচালিত সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমন্বয় করাসহ তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন ও ইহাদের ওপর অর্পিত বিষয়াদি সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করিবে।’ এ ছাড়া ৯(গ)-তে আছে, ‘তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়নের ব্যাপারে আঞ্চলিক পরিষদ সমন্বয় সাধন ও তত্ত্বাবধান করিতে পারিবে।’ সুতরাং চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আঞ্চলিক পরিষদকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বাস্তবে আমরা এর বিপরীত প্রক্রিয়া দেখি।
সরকার ঘটা করে পাহাড়ে উন্নয়নের কথা প্রচার করছে। কিন্তু সবকিছুতেই আঞ্চলিক পরিষদকে অন্ধকারে রাখা হচ্ছে। অথচ পার্বত্য অঞ্চলের সব উন্নয়ন আঞ্চলিক পরিষদের তত্ত্বাবধানে হওয়ার কথা। চুক্তিতে সেই বিধান রাখা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়েছে এবং একটা আইনও করা হয়েছে। বস্তুত, এই উন্নয়ন বোর্ড একান্তই অপ্রয়োজনীয়। কারণ, পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়নের দায়দায়িত্ব তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের ওপর ন্যস্ত রয়েছে। অথচ উন্নয়ন বোর্ডের সামগ্রিক কার্যক্রম আমলাদের মাধ্যমে পরিচালিত ও পার্বত্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। ফলে সরকারি উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় আঞ্চলিক পরিষদের যথাযথ সংশ্লিষ্টতা না থাকায় জুম্ম জনগণ উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়নের নামে নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে।
পার্থ শঙ্কর সাহা: ভূমি পার্বত্য অঞ্চলের বড় একটি সমস্যা। ভূমি কমিশন গঠিত হয়েছে। কিন্তু এটি কার্যকর নয় কেন?
সন্তু লারমা: চুক্তির একটি অন্যতম দিক হচ্ছে পাহাড়ের ভূমি সমস্যার নিষ্পত্তি করা। সেই লক্ষ্যে চুক্তি মোতাবেক ভূমি কমিশন আইন সংশোধন করা হয়েছে। একটি ভূমি কমিশনও গঠিত হয়েছে। কিন্তু ভূমি কমিশনের বিধিমালা এখনো প্রণীত হয়নি। অনেক দিন যাবৎ ভূমি কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মতো ভূমি কমিশনের কার্যক্রমও থমকে আছে। প্রকৃতপক্ষে ভূমি কমিশন কার্যকর করার বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। ভূমি কমিশনের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ ও পৃথক বাজেট বরাদ্দ করা হচ্ছে না। ফলে শাখা অফিসগুলোও স্থাপন করা যাচ্ছে না।
পার্থ শঙ্কর সাহা: করোনাকালে পার্বত্য জনজীবন কেমন চলছে? এই মহামারির প্রভাব সর্বব্যাপী। পার্বত্য অঞ্চলে এর প্রভাবকে কীভাবে দেখেন?
সন্তু লারমা: করোনাকালে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনজীবন বিপর্যস্ত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষ করে দূর পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে করোনা মহামারির বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া পাহাড়ের স্বাস্থ্য খাত বরাবরই অবহেলিত। পাহাড়ের মানুষ কত শতাংশ টিকার আওতায় এসেছেন, সেটিরও একটি সঠিক পরিসংখ্যান থাকা দরকার। কোভিড-১৯ মহামারিতে পাহাড়ের জনজীবনে সার্বিক কী প্রভাব পড়েছে ও উত্তরণে কী করণীয় হতে পারে, তার জন্য একটি সমীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি।
পার্থ শঙ্কর সাহা: চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের কাছে আপনি পথরেখার দাবি করছেন। চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে আপনাদের বিকল্প কী পরিকল্পনা আছে?
সন্তু লারমা: চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করার জন্য আমরা বারবার সরকারের কাছে দাবি উত্থাপন করে চলেছি। এটি শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর দাবি নয়, দেশের একটি জাতীয় দাবিও বটে। দেশের নাগরিক সমাজ, জাতীয় রাজনৈতিক নেতাবৃন্দ, আদিবাসীবিষয়ক সংসদীয় ককাস এই দাবির সপক্ষে ভূমিকা রেখে চলেছে। আমরা আশা করব, সরকার শিগগিরই চুক্তি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করবে এবং চুক্তি বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। চুক্তি বাস্তবায়ন তথা অস্তিত্ব সংরক্ষণে জুম্ম জনগণের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।