অভিন্ন নদীগুলোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচের কাজে জলের ব্যবহার নিয়ে এবার প্রতিবেশী দেশ নেপালের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ল ভারত।
নেপাল-ভারত সীমান্তে গন্ডক নদীর ওপর যে ব্যারাজ আছে, তার রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নেপাল বারবার বাধা দেওয়ার পর বিহার সরকার এ ব্যাপারে দিল্লির জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছে।
কিন্তু ভারতের উত্তর সীমান্তে চীনের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনার মধ্যেই এবারে বিভিন্ন নদী নিয়ে কেন প্রতিবেশীর সঙ্গে ভারতের বিরোধ?
বস্তুত লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পুয়াধারার মতো সীমান্তের বিতর্কিত এলাকাগুলোকে নেপাল নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার জেরে দিল্লি ও কাঠমান্ডুর মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই – এখন তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে গন্ডক ব্যারাজ নিয়ে দুদেশের বিরোধ।
বহু বছরের সমঝোতা অনুসারে সীমান্তবর্তী এই ব্যারাজটি ভারতই বরাবর রক্ষণাবেক্ষণ করে এসেছে – কিন্তু এই মরশুমে টানা দশদিন চেষ্টা চালানোর পরও ভারতীয় প্রকৌশলীরা সে কাজে সফল হননি, বুধবারও তাদের ব্যারাজ থেকে ফিরে আসতে হয়েছে।
বিহারের জলসম্পদ মন্ত্রী সঞ্জয় কুমার ঝা বলছেন, “বাল্মীকিনগর জেলায় গন্ডকের ওপর যে ব্যারাজ আছে তাতে মোট ছত্রিশটা গেট আছে – আঠারোটা ভারতের দিকে, আঠারোটা নেপালের দিকে।”
“এখন নেপালের দিকে যে আঠারো নম্বর বা শেষ গেট, সেখানে তারা হঠাৎ প্রাচীর তুলে দিয়েছে।”
“ফলে বন্যা মোকাবিলার সরঞ্জাম নিয়ে আমাদের ইঞ্জিনিয়ার ও শ্রমিকরা ওদিকে যেতেই পারছেন না, বাঁধের ডানদিকের অংশ বা অ্যাফ্লাক্সটা বিরাট ঝুঁকিতে পড়েছে।”
“গন্ডক দিয়ে রোজ রাতে এখন দেড় লাখ কিউসেক জল প্রবাহিত হচ্ছে – কিন্তু আমরা যদি মেরামত আর মনিটরিংয়ের কাজই না-করতে পারি তাহলে পুরো উত্তর বিহারই ভীষণ বন্যার বিপদে পড়বে।”
উদ্বিগ্ন বিহার সরকার এরপরই এই সঙ্কটে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়ে বুধবার দিল্লিতে জরুরি বার্তা পাঠিয়েছে।
ভারতের সুপরিচিত পরিবেশকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট মেধা পাটকর বলছিলেন, “বিহার সরকারই বা বাঁধ মেরামতের কাজ এই জুন মাসে, এত দেরিতে শুরু করল কেন? এটা তো অনেক আগে, সেই শীতেই করা দরকার ছিল।”
“আসলে এই নদী, জলধারা বা হিমবাহ তো কখনও একটা নেশন স্টেটের সম্পত্তি হতে পারে না, সেখানে সবার আগে দাবি মানুষের। সেইটা ভুলে গিয়ে যদি আমরা সেই মানুষগুলোকেই কোণঠাসা করি, সেটা খুবই অন্যায়।”
লাদাখ সীমান্তে চীনের সঙ্গে সামরিক সংঘাত ও মানচিত্র নিয়ে নেপালের সঙ্গে বিরোধ আগে থেকেই দিল্লিকে অস্বস্তিতে রেখেছে।
এখন দেখা যাচ্ছে, উত্তর সীমান্তের কোনও কোনও অভিন্ন নদীও প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ এনে হাজির করছে। সূত্র: বিবিসি