বিহার ভ্রমণ এবং পর্যটন রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বিক্ষিপ্ত বহু সংখ্যক পর্যটক গন্তব্যের প্রস্তাব দেয়। পূর্ব গাঙ্গেয় সমভূমি বরাবর এটি উত্তর ভারতে অবস্থিত। বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের জন্মভূমি হওয়ায় বিহার ভারতের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান।পর্যটকরা এই স্থানে কিছু চমৎকার মুঘল ও হিন্দু স্থাপত্য দেখতে পাবেন। বিহার একটি সমৃদ্ধ প্রাচীন সভ্যতার দোলনা ছিল, একটি উপকেন্দ্র যেখানে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের মত ভারতের কিছু অন্যতম প্রধান ধর্মের উৎপত্তি ঘটে এবং হিন্দুধর্ম গতি লাভ করে।
এই রাজ্যের নাম ‘বিহার’ থেকে উদ্ভুত হয়েছে, যার অর্থ হল বৌদ্ধ মঠ, কারণ অতীতে এই স্থান বৌদ্ধ ধর্মের একটি প্রধান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল।
বিহারের প্রাচীনত্ব ষষ্ঠ শতাব্দী খ্রিস্টপূর্বাব্দ পুরনো। এইখানেই বৈশালীতে ভগবান মহাবীর জন্মগ্রহণ করেন এবং প্রভু বুদ্ধ বোধগয়ায় বোধি বৃক্ষের নিচে ‘জ্ঞানলাভ’ করেন। এই ভূমি বহু রাজবংশের উত্থান এবং পতন দেখেছে; যেমন – গুপ্ত, পাল ও পরবর্তীকালে মুসলিম শাসন।
পবিত্র গঙ্গা নদী, এই রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এই রাজ্যকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। এটি জমিকে উর্বর ও ফলনশীল করে তোলে। বিহারের ভূগর্ভস্থ খনিজ পদার্থ জাতীয় সম্পদ সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
বিহার একটি সুপরিচিত তীর্থ কেন্দ্র। এক বৃহৎ সংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী গন্তব্যের ফল স্বরূপ এটি তাদের জন্য একটি তীর্থকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে যারা পুরানো ধ্বংসাবশেষ এবং প্রাচীন ধর্মীয় লিপির টানে বিহারে আসেন।বহু সংখ্যক লোক হিন্দু এবং জৈনদের পবিত্র স্হানসমূহের আকর্ষণে বিহার ভ্রমণে আসে।
বিহারে পৌঁছানোর উপায়
সুবিধাজনকভাবে ভারতের পূর্ব অংশে অবস্থিত, বিহার একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য, যেখানে ভারতের যে কোন অংশ থেকে সহজেই পৌঁছানো যায়। বিহার বিমান, সড়ক ও রেলপথের একটি জালবিন্যাসের সাথে ভারতের বাকি অংশের সাথে সুসংযুক্ত।
বিহার পৌঁছানোর উপায়- আপনাকে বিহারের শহরগুলিতে পৌঁছানোর উপায় খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
বিমানপথ দ্বারা
বিহারের রাজধানী শহর পাটনায় একটি বিমানবন্দর আছে যা দিল্লি, মুম্বাই, লক্ষ্ণৌ, কলকাতার সাথে বিমান দ্বারা সুসংযুক্ত। এছাড়া নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুও পাটনার সাথে নিয়মিত বিমান দ্বারা সুসংযুক্ত।
ভারতের প্রধান বিমানসংস্থাগুলি, যেমন – ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স, স্পাইস জেট,জেট এয়ারওয়েজের, ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স এবং অন্যান্য বহু বিমানসংস্থা পাটনা থেকে নিয়মিত আসা যাওয়ার বিমান চালনা করে।
রেলপথ দ্বারা
রাজ্যের মধ্যে বহু সংখ্যক মুখ্য ও গৌণ স্থান গুলি ভারতীয় রেলওয়ের রেল পরিষেবা দ্বারা সুসংযুক্ত। এমনকি এই রাজ্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ অতি দ্রুত ট্রেন দ্বারা পরিষেবিত, যেমন – রাজধানী এক্সপ্রেস এবং শতাব্দী এক্সপ্রেস।
সড়কপথ দ্বারা
বহু সংখ্যক জাতীয় সড়কের একটি বিস্তৃত জালবিন্যাস, যেমন – জাতীয় সড়ক নং ২-নং জাতীয় সড়ক, ২৩-নং জাতীয় সড়ক, ২৮-নং জাতীয় সড়ক, ৩০-নং জাতীয় সড়ক, ৩১-নং জাতীয় সড়ক এবং ৩৩-নং জাতীয় সড়ক এবং রাষ্ট্রীয় মহাসড়কগুলি এই রাজ্যের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, যা সারা ভারত জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলির সাথে সংযুক্ত। রাজ্যের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ পাটনাকে, বৈশালী (৫৫ কিলোমিটার), নালন্দা (৯০কিলোমিটার), বুদ্ধ গয়া (১১০কিলোমিটার) এবং অন্যান্য পর্যটক গন্তব্যের সাথে সংযুক্ত করে। বিহার রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগম (বি.এস.টি.ডি.সি) বিহার রাজ্যের পর্যটকদের যাতায়াতের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নেয়।
বিহারে পরিদর্শনমূলক স্থান
বিহার পর্যটন প্রাচীন সভ্যতা, ধর্ম, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির এক অনন্য সংমিশ্রণের প্রস্তাব দেয় যা ভারতের সাথে সম্পর্কিত। এই রাজ্য ভারতের কিছু প্রধান রাজবংশের উত্থান এবং পতনের সাক্ষ্য বহন করে, যেমন – মৌর্য, গুপ্ত এবং পাল। ৫-ম ও ১১-তম শতাব্দীর মধ্যে এখানে বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। যার ধ্বংসাবশেষ বিহারের এক অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। বৌদ্ধ ধর্মের কিছু পবিত্র স্থান এখানে অবস্থিত। এছাড়াও হিন্দু, শিখ এবং জৈন ধর্মের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান এখানে অবস্থিত।
পরিদর্শনের সেরা সময়
বিহার ভ্রমণের সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ যখন আবহাওয়া স্বাস্হ্যকর থাকে।
বিহারের দর্শনীয় স্থান
বিহারের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
- প্রেতশিলা পাহাড়।
- আহিরাউলি।
- হাসানপুর।
- চম্পারণ।
- রামচুরা।
- মানের শরিফ।
- রাজগির।
- বাল্মীকি নগর।
- পাবাপুরী।
- তাড় রামায়ণ, ইত্যাদি।
* এই উপরিউক্ত পর্যটন স্থলগুলির বিষয়ে নীচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে –
প্রেতশিলা পাহাড়
শ্রেণী : প্রকৃতি
গয়া হিন্দুদের একটি সুপরিচিত স্থান বা ‘ধাম’ অথবা তীর্থযাত্রার জন্য সবচেয়ে পবিত্র স্থান যা প্রেতশিলা পাহাড় দ্বারা এক দিক দিয়ে পরিবেষ্টিত। প্রেতশিলা পাহাড়ের বিপরীতে আবার রামশিলা পাহাড় অবস্থিত।
প্রেতশিলা গয়া বিহারের একটি পৌরাণিক স্থান। এটা বলা হয় যে এখানে গয়া নামক এক দৈত্য বাস করত, যিনি মৃত্যু দ্বারা সৃষ্ট মর্মপীড়ায় মর্মাহত হয়েছিলেন। তিনি তার দুঃখ ভগবান বিষ্ণুকে প্রকাশ করেন। একটি দৈত্যের এরকম করুণ হৃদয় দেখে ভগবান বিষ্ণু খুব খুশি হন এবং তাকে একটি আশীর্বাদ করেছিলেন যে এই পুণ্য দ্বারা তিনি পাপীদের ক্ষমা করতে পারবেন।
বিহারের গয়ার প্রেতশিলা পাহাড় পাটনার দক্ষিণে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এই প্রাচীন শহর গয়া হিন্দু ও বৌদ্ধদের মধ্যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
বিহারের গয়ার প্রেতশিলা পাহাড় ফল্গু নদীর খুবই নিকটে অবস্থিত। এই নদীর বিশেষত্ব হল যে এই নদীর জল বাইরে থেকে দেখা যায় না। এটা সর্বদাই পলি ও বালির একটি পুরু স্তরের মধ্যে ঢুকে থাকে। যারা গয়া যায় তারা এই নদীতে গর্ত খনন করে জল বের করে।
গয়ার প্রেতশিলা পাহাড় বিহারের একটি অঞ্চলে আবদ্ধ যেখানে অবস্থিত গয়া শহরে কেন্দ্রের প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরের এক বিখ্যাত স্থানে বোধি বৃক্ষ অবস্থিত। এই হল সেই স্থান যেখানে প্রভু বুদ্ধ জ্ঞানলাভ করেছিলেন। গয়া বহু পবিত্র মন্দিরের জন্য প্রসিদ্ধ যার মধ্যে বিশেষ উল্লেযোগ্য হল বিষ্ণুপাদ মন্দির। এর দক্ষিণে আপনি বুদ্ধ গয়া দেখতে পাবেন।
আহিরাউলি
শ্রেণী : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
বিহার রাজ্যের, বক্সার শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে আহিরাউলি নামক একটি ছোট গ্রাম অবস্থিত। এখানে দেবী অহল্যার একটি মন্দির আছে।
কিংবদন্তী অনুযায়ী দেবী অহল্যা ঋষি গৌতমের স্ত্রী ছিলেন। মহান মহাকাব্য রামায়ণের কাহিনী অনুযায়ী, ভুল করে দেবী অহল্যা একদা এক ছদ্মবেশী ব্যক্তিকে তার স্বামী বলে মনে করেন। এই দেখে ঋষি গৌতম এত ক্ষুব্ধ হন যে দেবী অহল্যাকে তিনি পাথরে পরিণত করে দেন। বিহারে বক্সারের আহিরাউলি মন্দির-দেবীর সরলতার কথা মানুষদের স্মরণ করিয়ে দেয়। অনেক বছর পরে মহান প্রভু রামচন্দ্র এই পথ দিয়ে গমন করার পথে এই শিলীভূত দেবীকে উদ্ধার করেন। প্রভুর স্পর্শে এই পাথরটি প্রকৃত দেবী অহল্যায় পরিণত হয়।
বক্সারের আহিরাউলি বিহারের এক তীর্থস্থান। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ তাদের দ্বারা জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে ঘটা সব পাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে এখানে আসে। বক্সারের আহিরাউলি বা তার নিকটে বসবাসকারী মানুষরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে প্রভু সমস্ত অভিশাপ থেকে তাদের দূরে সরায় এবং জীবনের সব প্রতিকূলতা থেকে তাদের রক্ষা করে।
আপনি বিহারের আহিরাউলি গেলে মহাকাব্য রামায়ণের প্রতি মানুষের তীব্র নিষ্ঠা ও বিশ্বাস এবং তাদের মহান নায়ক রামচন্দ্রের জন্য তাদের ভালবাসা অবশ্যই অনুভব করতে পারবেন। এটা সত্যিই আশ্চর্যজনক এবং যতক্ষণ না আপনি আহিরাউলিতে আসবেন ততক্ষণ এটা বুঝতে পারবেননা। বিহারের বক্সারে শত শত বছর পুরনো রামায়ন কাব্যের প্রভু রামচন্দ্র আজও মানুষদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
হাসানপুর
শ্রেণী : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
বিহারের হাসানপুর নামক গ্রামটি সিওয়ানের দক্ষিনে ২১ কিমি দূরে ধানাই নদীর তীরে অবস্থিত। এই স্থান তার ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য প্রসিদ্ধ এবং এর পাশাপাশি এটি একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে প্রাচুর্যপূর্ণ স্থান।
দূর দেশ আরব থেকে ভারতে মখদুম সায়েদ হাসান চিশতি নামে একজন সন্ত এসেছিলেন। ভারতের মানুষ এবং সংস্কৃতি দেখে প্রভাবিত হয়ে তিনি এখানেই থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। তিনিই বিহারে হাসানাপুর গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন।
মখদুম সৈয়দ হাসান চিশতি দীর্ঘদিনের জন্য এখানে থাকেন। তিনি ধর্ম এবং আত্মার পবিত্রতার প্রতি অত্যন্ত অনুরক্ত ছিলেন। তিনি বিহারের হাসানপুর এলাকায় খানকাহ (ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান) প্রতিষ্ঠা করেন।
বিহারের হাসানপুরে হাজার হাজার বৃহৎ মসজিদের ধ্বংসাবশেষ এবং তার পাশাপাশি বহু মহান সন্তদের সমাধি রয়েছে। আপনি সেখানে গেলে সেই মহিমান্বিত অতীত আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। বিহারের হাসানপুরে মানুষদের জীবনশৈলী এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এখানে প্রতিফলিত হয়। এই অঞ্চলের সবথেকে লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল এই স্থানটি উভয় হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ই পরিদর্শন করতে আসে। এই ব্যাখ্যা স্পষ্টতই ইঙ্গিত করে যে বিহারের হাসানপুরে পরম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে।
বিহারের হাসানপুরে একটি কবরস্থান আছে যা এই গ্রামের পশ্চিমে অবস্থিত। এখানে প্রভু বিষ্ণুর একটি ব্যাসল্ট চিত্র রয়েছে।
চম্পারণ
শ্রেণী : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
চম্পারণ বিহারের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান, যা স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ভারতের ইতিহাসে একটি অপরিমেয় গুরুত্ব পালন করেছে। এই সেই স্থান, যেখানে মহাত্মা গান্ধী ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গঠনের প্রতি তার প্রথম প্রচেষ্টা নেন।
এই স্থান মহান চম্পারণ আন্দোলনের জন্য বিখ্যাত যখন বিহার ও দেশের অন্যান্য অংশে নীলকরদের শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল। এই আন্দোলনের প্রভাব বেশ দীর্ঘ স্থায়ী ছিল।
মহাত্মা গান্ধী বিহারের চম্পারণে ভাল দিন আনার দৃঢ় প্রচেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়। এই কমিটির উপর চম্পারণে কৃষকদের অবস্থা পরীক্ষা এবং প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল।
রামচুরা
শ্রেণী : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
রামচুরা বিহারের বৈশালী ব্লকে অবস্থিত একটি বিখ্যাত জায়গা। এই স্থান ভারতের বিহার রাজ্যের রামায়ণ বর্তনীর এক প্রধান অঞ্চল। বিহারের রামচুরা বিহার এবং তার বাইরের মানুষদের কাছেও অত্যন্ত জনপ্রিয় শুধুমাত্র তীর্থযাত্রার জন্য নয় বরং এখানে আয়োজিত উৎসবের জন্য।
কথিত আছে যে প্রভু রামচন্দ্র একবার জনকপুর নামক এক স্থানে যাচ্ছিলেন। তিনি জনকপুর যাওয়ার পথে খুব ক্লান্তি অনুভব করেন এবং এই স্থানে একটি বিরতি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। এটিও বলা হয় যে প্রভু এই স্থানে স্নান করেছিলেন। এইভাবে বিহারের রামচুরা ভগবান রামের ভক্তদের জন্য এক ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়।
বিহারের রামচুরায় আপনি পাথরের উপর প্রভুর পায়ের ছাপ দেখতে পাবেন। এটি মহান সততা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে মানুষ দ্বারা পূজিত হয়। তারা মনে করেন যে, এটি তাদের জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি এনে দেবে।
বিহারের রামচুরা এখানে আয়োজিত মেলা ও উৎসবের জন্য প্রসিদ্ধ,বিশেষ করে রাম নবমী অনুষ্ঠানের জন্য। এই মঙ্গলজনক অনুষ্ঠান এখানে মহান আনন্দ এবং নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত হয়। এইদিনে প্রভু রামচন্দ্র জন্ম গ্রহণ করেন। এই দিন পৃথিবীতে ভগবান বিষ্ণুর আগমনকে চিহ্নিত করে এবং অত:পর সূর্যের কাছে সব দুর্বিষহকে শেষ হতে হয়।
রামচুরার উৎসব পর্যটকদের একটি মহান আনন্দ প্রদান করে। এই দিনগুলোতে রামচুরা গ্রাম রং এবং উৎসবের আনন্দের আলোকিত হয়ে ওঠে। এই সময় মানুষ প্রভুর কাছে তাদের প্রার্থনা নিবেদন করে। তারা পূজা করার পর ফল ও মিষ্টান্ন খেয়ে তাদের উপবাস ভঙ্গ করে। বিহারের রামচুরা সত্যিই দেখার মত স্থান।
মানের শরিফ
শ্রেণী : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
মানের শরিফ বিহার রাজ্যে অবস্থিত ঐতিহাসিক অতীতের অবশিষ্টাংশ পূর্ণ এক সুবিশাল গ্রাম। এটি দানাপুরের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত। এই গ্রাম পাটনার পশ্চিমে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রাচীন কালে বিহারের মানের শরিফ এই অঞ্চলের প্রধান শিক্ষাগত এবং জ্ঞানগত অঞ্চল বলে সুপরিচিত ছিল। সুপরিচিত বৈয়াকরণিক পাণিনি এবং তার পাশাপাশি বারারুচি বিহারের মানের শরিফের বাসিন্দা ছিলেন এবং এখানে তারা তাদের শিক্ষা সম্পন্ন করেছিলেন।
বিহারের মানের শরিফে দুটি অতি জনপ্রিয় মুসলিম সমাধি রয়েছে।
যার একটি হল শাহ দৌলত অথবা মখদুম দৌলতের, যা জনপ্রিয় ভাবে ছোট দরগা বলে পরিচিত। অন্যটি হল শেখ ইয়াহিয়া মানেরি বা মখদুম ইয়াহিয়া যা বড় দরগা হিসাবে পরিচিত।
বিহারের মানের শরিফে ১৬০৮ সালে মখদুম দৌলত তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেইসময় ১৬১৬ সালে তার এক শিষ্য, বিহারের রাজ্যপাল ইব্রাহিম খান তার দরগা নির্মাণ সমাপ্ত করেন। বিহারের মানের শরিফে একটি বিস্ময়কর ভবন রয়েছে। এই ভবনের দেয়াল জটিল নকশা দ্বারা সুশোভিত। এর উপরে একটি বড় গম্বুজ রয়েছে এবং ছাদটি পবিত্র কোরানের থেকে চিত্রিত শিলালিপি দ্বারা সুসজ্জিত।
বিহারের মানের শরিফে আপনি স্থাপত্যকলার এমন বৈচিত্র পাবেন যা জাহাঙ্গীরের যুগে লক্ষ করা গিয়েছিল। এখনও পর্যন্ত বিহারের মানের শরিফ পূর্ব ভারতে মুঘলদের সেরা ইমারৎ। বিহারের মানের শরিফের প্রাঙ্গনে ১৬১৯ সালে ইব্রাহিম খান দ্বারা নির্মিত আপনি একটি মসজিদ দেখতে পাবেন।
রাজগির
শ্রেণী : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
রাজগীর মন্দির ও মঠে পরিপূর্ণ একটি স্থান এবং এটি নালন্দা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি একটি উপত্যকা বেষ্টিত অঞ্চল এবং যার ফলে এর পার্শ্ববর্তী এলাকা খুব সুন্দর দেখতে। এখানকার সবুজ বন রাজগীরের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
পাটলিপুত্র গঠন করার আগে, রাজগীর মগধ মহাজনপদের (রাজ্য) রাজধানী ছিল। এই অঞ্চলের সাথে প্রভু বুদ্ধ ও বৌদ্ধধর্মের এক দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। প্রভু বুদ্ধ রাজগীরে তার জীবনের বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছেন।
বিহারের রাজগীর জৈন মন্দিরের জন্য বিখ্যাত। প্রভু মহাবীর রাজগীরে বহু বছর অতিবাহিত করেছেন। এটি ভারতের এক অন্যতম জনপ্রিয় জৈন তীর্থকেন্দ্র।
প্রভু বুদ্ধের শিক্ষা রাজগীরে লিপিবদ্ধ করা আছে। এই শহর প্রথম বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পরিষদের স্থান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে। বর্তমানে, বিহারের রাজগীর বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীদের কাছেসবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
একটি ধর্মীয় কেন্দ্র হওয়ার পাশাপাশি রাজগীর একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসেবেও জনপ্রিয়। রাজগীরের গরম জলের পুকুরের কিছু ঔষধি গুরুত্ব আছে যা চর্ম সমস্যা নিরাময় করতে পারে।
বাল্মীকি নগর
শ্রেণী : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
বিহারের বাল্মীকি নগর পশ্চিম চম্পারণের একটি ছোট গ্রাম। এটি ভারত ও নেপাল সীমান্তে অবস্থিত। এই গ্রাম বাগাহা থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।
বিহারের বাল্মীকি নগরে মহান ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণের রচয়িতা মহর্ষি বাল্মীকির নামানুসারে একটি বাল্মীকি আশ্রম আছে। এটি বলা হয় যে, তিনি প্রথম জীবনে এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যিনি অন্যদের জিনিস ছিনিয়ে নিজের জীবন চালাতেন, তখন তাঁকে রত্নাকর নামে অভিহিত করা হত। কিন্তু পরে তিনি অনুতাপ করেন এবং প্রায়শ্চিত্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। তারপর তিনি প্রভুর জীবন সঙ্কলন করার আশীর্বাদ ও নির্দেশ পান।
মকর সংক্রান্তির সময়ে বিহারের বাল্মীকি নগরে প্রতি বছর একটি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
গন্ডক নামক নদী বিহারের বাল্মীকি নগরের সৌন্দর্য্যকে আরও প্রভাবিত করে। সেচ ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করার জন্য, সরকার গন্ডক নদীর উপরে একটি বাঁধ তৈরি করেছেন।
পাবাপুরী
শ্রেণী : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
বিহারের পাবাপুরী বিশেষত জৈনদের জন্য একটি পবিত্র স্থান। এটি রাজগীর থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরত্বে এবং পাটনা থেকে ১০১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এটি সেই স্থান যেখানে, শেষ তীর্থঙ্কর এবং জৈনধর্মের প্রতিষ্ঠাতা প্রভু মহাবীর, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিহারের পাবাপুরী সেই স্থান যেখানে ৫০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দে মহান প্রভুর শবদাহ করা হয়।
দূর দুরান্ত থেকে মানুষ প্রভু মহাবীরের শেষকৃত্য চিতার কাছাকাছি স্থান থেকে এত ছাই গ্রহণ করে যে সেখানে একটি জলাধার তৈরি হয়ে গেছে। তারপর এই জলাধারের উপর ‘জলমন্দির’ নামক একটি মার্বেল পাথরের মন্দির নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এটি পাবাপুরী এবং চারপাশের জৈনদের জন্য এক তীর্থকেন্দ্রের রূপ নিয়েছে। এছাড়াও আপনি এখানে সামোশরণ নামক এক জৈন মন্দির দেখতে পাবেন।
পাবাপুরী সফরের শ্রেষ্ঠ সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চ মাস। যখন পাবাপুরীতে থাকাকালীন আপনি নিম্নলিখিত জায়গা গুলি দেখার একটি সুযোগ পেতে পারেন –
- জলমন্দির।
- সামোশরণ।
পাবাপুরী থেকে নিম্নলিখিত প্রধান দৃশ্যপটগুলি পরিদর্শনের পরিকল্পনা করা যেতে পারে –
- রাজগির।
- গয়া।
- বোধগয়া।
বিহারের পাবাপুরীতে মানুষ দূর-দূরান্তে থেকে দেখতে আসে –
- রাজগির নৃত্য উৎসব।
- ছট্ পূজা।
- চারু ও কারুশিল্প।
আপনি পাবাপুরী পৌঁছতে পারেন –
- বিমান দ্বারা : পাটনা ১০১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এখানকার নিকটতম বিমানবন্দর। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স পাটনা থেকে কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, রাঁচি এবং সেইসাথে লক্ষ্ণৌ যাওয়ার বিমান পরিষেবা প্রদান করে।
- রেলপথ দ্বারা : এখানকার নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল রাজগীর কিন্তু প্রধান রেললাইনের শেষপ্রান্ত হল পাটনা।
- সড়কপথ দ্বারা : আপনি পাটনা, রাজগীর, গয়া ইত্যাদি জায়গা থেকে একটি বাস বা ট্যাক্সি গ্রহণ করে এখানে পৌঁছাতে পারেন।
তাড় রামায়ণ
শ্রেণী : ইতিহাস ও সংস্কৃতি
ভগবান রাম, প্রভু বিষ্ণুর অবতার এবং হিন্দু মহাকাব্যের রামায়ণের মহান নায়ক, বিহারের ভোজপুরের তাড় নামক স্থানের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। এই স্থানটি যেই অঞ্চলে অবস্থিত তা পিরোর উত্তর পশ্চিমে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে।
ভোজপুরের এই তাড় গ্রামটিকে তাড়কা রাক্ষসীর নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে। এই রাক্ষসীকে মহাকাব্যে অত্যন্ত নির্দয় চরিত্রে দেখা গেছে যিনি ঋষির এবং তার পাশাপাশি নির্দোষ সাধারণ মানুষদের ক্ষতি করতেন।
এটা বলা হয় যে বিহারের ভোজপুরের তাড় অঞ্চল রাক্ষসী তাড়কার কুস্তি খেলার স্থল ছিল। তিনি খুব শক্তিশালী ছিলেন এবং কেউ তাকে পরাজিত করার কথা কল্পনাও করতনা। রাক্ষসী তাড়কা তখনকার দিনে ঋষিদের দ্বারা সম্পাদিত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে বাধার সৃষ্টি করত।
সবাই তাড়কাকে ভয় করত। তারা রাক্ষসী তাড়কার নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভগবান বিষ্ণুর কাছে প্রার্থনা করতেন। তারপর রাক্ষসী তাড়কা ভগবান রামের সম্মুখীন হন এবং প্রভুর ব্যাপক শক্তির কাছে তাকে পরাজিত হতে হয়। এই রাক্ষসীকে প্রভুর হাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হয়।
বিহারের ভোজপুরের তাড় নামক গ্রামটি মহান নায়ক শ্রী রাম এবং তিনি কিভাবে হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করেন সেই কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই এলাকার সাধারণ মানুষরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে প্রভু এখানে সর্বদা বিরাজ করেন এবং তিনি বিপদের দিনে তাদেরকে উদ্ধার করবেন। হয়তো এই বিশ্বাস এবং রামায়ণের পাশাপাশি প্রভু রামের জনপ্রিয়তা ভোজপুরের তাড়কে ভারতের একটি প্রখ্যাত স্থানের রূপ দান করেছে।
বিহারে কেনাকাটা
একটি সূক্ষ্ম খরিদ্দারের জন্য বিহারে কেনাকাটা একটি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা হতে পারে যদি আপনি জানেন যে কি কিনতে হবে এবং কোথায় কিনতে হবে।
বিহারের হস্তশিল্প
মধুবনী চিত্রকলা বিদ্যালয় বিহারের এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং অত্যন্ত বিখ্যাত হস্তশিল্পের জন্য সুপরিচিত। বিহারী নারীরা সাধারণত বংশানুক্রমে এই লোক চিত্রকলার বিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত থাকে। এটি পৌরাণিক বিষয়বস্তু, স্থানীয় দেবদেবীর একত্রিত চিত্র ও তার পাশাপাশি হিন্দু দেব-দেবীর চিত্রকে প্রকাশ করে।
বিহারের জনপ্রিয় কেনাকাটার জিনিস –
বিহারে কেনাকাটা করার সময়, আপনি নিম্নলিখিত ব্যাপক বৈচিত্র্যের জিনিসগুলি পাবেন –
- পাথর এবং পুঁতির-গহনা।
- হাতে আঁকা ওয়াল হ্যাঙ্গিং।
- কাগজ ও পাতার তৈরি ক্ষুদ্রচিত্র।
- কাপড়ের উপর অ্যাপলিক্ – এর কাজ।
- প্রস্তর পাত্র।
- বাঁশ ও বেতের কাজ।
- কাষ্ঠাসন।
- চামড়াজাত পণ্য।
- ‘তিলকুট’ – এক ধরনের মিষ্টি, ইত্যাদি।