সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আত্মসাতের মামলায় দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। আজ সোমবার সুনামগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাগিব নুরের আদালত আসামিদের জামিন না মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন, শান্তিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার দরগাপাশা ইউনিয়নের বাঘেরকোনা গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান (৬৩), সাবেক ডেপুটি কমান্ডার পাথারিয়া ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা রাধাকান্ত তালুকদার (৬৫)। এ ছাড়া ভাতা আত্মসাতে সহায়তাকারী অপু পালকেও (৪০) কারাগারে পাঠানো হয়। অপু পাল দরগাপাশা ইউনিয়নের কাবিলাখাই গ্রামের নিত্যানন্দ পালের ছেলে।
এর আগে গত ১৬ মার্চ ওই তিনজনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে ভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আদালত গত ৯ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে সোমবার আদালতে হাজির হয়ে আসামিরা জামিন চাইলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জ আদালতের পরিদর্শক মো. বদরুল আলম তালুকদার বলেন, ‘দুই মুক্তিযোদ্ধাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিআইডি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করার পর আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। সোমবার তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তাদের জামিন বাতিল কলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।’
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের কাবিলাখাই গ্রামের পরিমল পাল বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দেশ স্বাধীনের কয়েক বছর পর তিনি ও তার দুই ভাই ভারতে চলে যান। বাংলাদেশে পরিমল পালের স্ত্রী, সন্তান কেউ নেই। কিন্তু দোয়ারাবাজার উপজেলার গুরেশপুরের সাধন পালের ছেলে সন্তোষ পাল মুক্তিযোদ্ধা পরিমল পালের ছেলে সেজে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা ভাতা উত্তোলন করেন। সন্তোষ পালের মা রেনু বালা পাল জীবিত থাকলেও উত্তরাধিকার সনদে মাকে তিনি মৃত দেখিয়ে ভাতা উত্তোলন করেন।
একইভাবে তথ্য গোপন করে উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা যতীন্দ্র কুমার দাসের ভাতা উত্তোলন করেন তার ভাতিজা বিধুভূষণ দাসের ছেলে নান্টু দাস। যতীন্দ্র কুমার অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও নান্টু কান্ত দাস তার ছেলে দাবি করে ভাতা উত্তোলন করেন।
ভুয়া সন্তান সেজে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা উত্তোলনকারী সন্তোষ পাল ও নান্টু দাসকে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার কমান্ডার আতাউর রহমান, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার রাধাকান্ত তালুকদার ও কাবিলাখাই গ্রামের অপু পালের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় কাবিলাখাইয়ের পার্শ্ববর্তী সলফ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা গেদা আলীর ছেলে ইসমাইল আলী চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি শান্তিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি। মামলাটি তদন্ত শেষে এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ভাতা আত্মসাতকারী সন্তোষ পাল ও নান্টু দাসকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছিল সিআইডি। পরে তারা আদালত থেকে অস্থায়ী জামিন পান।