।। কাইয়ূম আবদুল্লাহ ।।
লুৎফুর রহমান। বৃটিশ রাজনীতিতে এই মূহুর্তে অন্যতম একটি আলোচিত নাম। বার বার ইতিহাস গড়া এক লড়াকু বাঙালির নাম! গত ৫ মে’র নির্বাচনে বিপুল সমর্থনে অভূতপূর্ব ও অকল্পনীয় বিজয় ছিনিয়ে আনতে যিনি সক্ষম হয়েছেন। ২০১০ সালে ৫১.৭৬%, ২০১৪ ৫৫.০২% এবং ২০২২ সালে এসে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬৫.৫১% পর্যন্ত পৌঁছা, ভোটের এই পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান। আর এবারের প্রায় ৪১ হাজার ভোটের মধ্যে বহু অবাঙালিও যে রয়েছেন তা সহজেই অনুমেয়। যে তিনি এতোদিনে রাজনীতির মাঠ ছেড়ে পর্দার অন্তরালে থাকার কথা ছিলো। সেই তিনি আগের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে অর্থাৎ আগের দুইবারের নির্বাচনের চেয়ে বেশী জনসমর্থন পেয়ে বীরদর্পে ফিরলেন ক্ষমতায় তথা টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র পদে। এমন উদাহরণ বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি আছে কীনা জানা নেই। আর তাই লুৎফুর রহমানের ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই বিজয়ে বিস্মিত প্রায় সবাই। এমনকি বিস্মিত তাঁর বিরোধীপক্ষ এবং কঠোর সমালোচকরাও। যদিও তিনিই হচ্ছেন বিএএমই কমিউনিটি থেকে প্রথম নির্বাচিত নির্বাহী মেয়র। এমন কি এখনো তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদভূত মেয়র, যিনি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত এবং নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী। তাঁর এই উত্থানযুদ্ধ কখনোই মসৃণ ছিলো না। একমাত্র ব্যক্তি ইমেজ নিয়ে বহুমুখী আক্রমণ ও বিরোধীতা মাড়িয়ে তৃতীয়বারের মতো বাঙালি পাড়া টাওয়ার হ্যামলেটসের ইতিহাস সৃষ্টিকারী নির্বাহী মেয়র।
সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া বৃটেনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর ব্রিটিশ রাজনীতির প্রভাববিস্তারি দলগুলোর নীতিনির্ধারণী বডি তাদের অর্জন, অবস্থান এবং আগামী দিনের করণীয় নিয়ে ভাবনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। নির্বাচনী ব্যাটল ফিল্ড তথা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া কাউন্সিল ও কাউন্টিগুলোর পরিবেশ এখন শান্ত ও স্বাভাবিক। যারা ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে যারা শত চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি তারা দীর্ঘ নির্বাচনী ক্লান্তি মুছতে ভালো করে ঘুমিয়ে শরীর ও মননকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। আর যারা সফল হয়েছেন ক্লান্তি আসবে কি, বরং বিজয়ের সঞ্জিবনী টনিক তাদের ফুরফুরে মেজাজে একধরনের স্বর্গীয় শান্তি ও সুবাস বইয়ে যাচ্ছে। এই যখন পুরো বৃটেনের অবস্থা, ঠিক তখন টাওয়ার হ্যামলেটস কউন্সিল সেখানে ব্যতিক্রম। এ বারা নির্বাচনের আগে যেমন ব্যাপাক আলোচনা-সমালোচনায় মুখর ছিলো। নির্বাচনের কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও সে সম্পর্কে কথাবার্তা অব্যাহত রয়েছে। সেটি যেমন স্থানীয় পরিসরে তেমনি জাতীয় বিভিন্ন পর্যায়েও। আর সেটির মূল কারণ বিপুল গণরায়ে আলোচিত-সমালোচিত ব্রিটিশ-বাংলাদেশি রাজনীতিক লুৎফুর রহমানের তৃতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হওয়া। বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাপকভাবে বিরোধীতার শিকার লুৎফুর রহমানের প্রথম ও দ্বিতীয়বারের চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়া যেমন নিজের এবং তাঁর সমর্থক, শুভাকাঙ্খী বারার বৃহৎ জনগোষ্ঠির জন্য গর্বের কারণ হয়েছে তেমনি তারও চেয়ে বেশী বিস্ময় ও মনোকষ্টের কারণ হয়েছে তাঁর বিরোধী ও সমালোচকদের জন্য। ইতোমধ্যে অনেক বোদ্ধা সমালোচক তাঁর বিপুল বিজয়কে মেনে নিয়ে তাকে অভিনন্দিত করেছেন। আর কারো কারো এমন বিজয় মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে এবং কিছু-কিন্তুর মধ্যে এখনো ঘুরপাক খাচ্ছেন। লুৎফুর রহমানের বিজয়ে মনে হচ্ছে ডানপন্থী ব্রিটিশ মিডিয়াগুলো প্রচন্ড নাখোশ। তা না হলে লুৎফুর রহমানের ব্যাপক জনসমর্থনে বিস্মিত না হয়ে তারা তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিগতদিনের অভিযোগগুলোর মধ্যে এখনো জাবর কাটতো না।
ব্রিটিশ রাজনীতিতে এতো যে আলোচনা—সমালোচনার জন্মদাতা, সেই লুৎফুর রহমানও দোষে-গুণে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ। কিন্তু দেখতে হবে তাঁর এই দোষের পরিধি কতটুকু, উত্থাপিত অভিযোগগুলোর ভিত্তি এবং বিচারের সামঞ্জস্যতা ও সামগ্রিক প্রেক্ষাপট। তবে এটি নির্ধিদ্বায় বলা যায়, এমন বিজয়ের ব্যাপারে লুৎফুর রহমান আকাশ সমান আশা ও আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান ছিলেন। তা না হলে শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, চরম ডানপন্থী মিডিয়াগুলোর জোটবদ্ধ প্রপাগাণ্ডা এবং তাকে অযোগ্য ঘোষণা দেয়া প্রভাবশালী ব্রিটিশ কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এমন চ্যালেঞ্জিং ইতিহাস গড়া হয়তো তাঁর পক্ষে সম্ভব হতো না। আর তাই নির্বাচনের কয়েক দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি টাওয়ার হ্যামলেটস ছাড়িয়ে গোটা বৃটেন এবং বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বাসকারী বাংলাদেশীদের কাছে নন্দিত ও আলোচিত। অপরদিকে তাঁর প্রতিপক্ষরা ফলাফল প্রকাশের পরই মাইক্রস্ক্রুপ লাগিয়ে দোষ খোঁজা শুরু করে দিয়েছেন। শক্ত প্রতিপক্ষ কনজারভেটিভ কাউন্সিলার পিটার গোল্ডসের প্রতিক্রিয়ার ধরণধারণ দেখে মনে হচ্ছে আমরা যতোই ব্রিটিশ হই না কেন, আমাদের আসলতো বাঙালি! তাই প্রশ্ন রাখতে চাই— জনগণ যদি বাঙালিদের ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি বানায়, সেটা কি খারাপ কিছু? আর যদি তা—ই হয়, তাহলে গণতন্ত্রেরইবা দরকারটা কি? বিশেষ করে ডানপন্থী ব্রিটিশ মিডিয়াগুলো জনরায়কে সম্মান জানানোর বিপরীতে যা করছে তা সভ্যতার পরিপন্থী।
আমাদের সবার জানার কথা যে, লুৎফুর রহমান শুরু থেকে যুদ্ধ করে আসছেন। বড় বড় শক্তির বিরুদ্ধে এভাবে যুদ্ধ করে যাওয়ার জন্য তাঁর নৈতিক মনোবলকে স্যালুট জানানো উচিৎ। তাঁর প্রথম যুদ্ধ শুরু হয়েছিলো স্বীয় রাজনৈতিক দল স্থানীয় লেবার পার্টির কূটচালের বিরুদ্ধে। সেই যুদ্ধজয়ের ইতিহাস প্রায় সবার স্মরণে থাকার কথা। তাঁর নিজ দল লেবার পার্টি অবিচার ও নানা কূটকৌশল করেছিলো বলেই স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেও জনগণের বিপুল সমর্থনে তিনি ২০১০ সালে টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রথম নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। প্রথম মেয়াদের মেয়রশীপে নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে সন্তুষ্ট বারার বাসিন্দারা ২০১৪ সালেও তাকে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত করেন। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই তাকে পদচ্যুত করার সবল চেষ্টা শুরু করে তাঁর বিরুদ্ধবাদীরা এবং সেক্ষেত্রে তারা সফলও হয়। তাকে নিয়ে বিবিসি‘র প্যানারমা প্রোগ্রামসহ কিছু মিডিয়ার ধারারবাহিক নেতিবাচক প্রতিবেদন এবং একজন বাঙালিসহ চারজন অভিযোগকারীর অভিযোগ আমলে নিয়ে সরকারের তৎকালীন ডিপার্টমেন্ট ফর কমিউনিটিজ এণ্ড লোকাল গভর্ণমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেকেটারি অফ স্টেইট এরিক পিকলসের নির্দেশে তদন্ত শুরু করে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ একাউন্টেন্সি ফার্ম প্রাইসওয়াটারকুপার (পিডব্লিউসি)।
২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৬ মাস সময় নিয়ে তদন্ত করে পিডব্লিউসি। তদন্তে লুৎফুর রহমানের মেয়রশীপে কাউন্সিল পরিচালনায় বেশকিছু অনিয়মও খুঁজে পায়। গ্রান্ট প্রদান, দুর্বল ম্যানেজমেন্ট এবং নিজ বলয়ের মানুষদের সুবিধা প্রদানসহ যেসব অনিয়ম ধরা পড়ে, সেসব ছিলো প্রক্রিয়াগত ভুল। তথাপি কোনো ‘দুর্নীতি’র উল্লেখ ছিলো না পিডব্লিউসি’র রিপোর্টে। কোনো ধরণের দুর্নীতি, ক্রিমিনাল অফেন্স বা ফৌজদারী অপরাধ না থাকা সত্ত্বেও বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক, ডেপুটি জাজ রিচার্ড মাওরি কিউসি ঘোষিত রায় অনেককে বিম্মিত করেছে। এই রায় অনেক বোদ্ধাজনের কাছে “লঘু পাপে গুরু দণ্ড” হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে। রাজনীতিক ও লেখক রিচার্ড সিমুর, ল’ বিষয়ক লেকচারার নাদিন এনানী এবং পলিটিক্যাল ইকোনমির সিনিয়র লেকচারার ড. অশোক কুমার জাজ মাওরি প্রদত্ত রায়ের প্রচুর সমালোচনা করেছেন। লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকে গণতন্ত্রের প্রতি অবমাননা বলে তখনই মন্তব্য করেছিলেন তারা। একই সাথে তারা এও মন্তব্য করেছিলেন যে— “লুৎফুর রহমানের গল্পটি একটি গণতান্ত্রিক সাফল্যের গল্প। রাজনৈতিক এবং মিডিয়া ক্লাসের কাছে এটি অযৌক্তিক বলে মনে হওয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত দেয় যে তারা কতদিন ধরে প্রকৃত গণতন্ত্রের মতো কিছু থেকে দূরে ছিল।” আর রায়ে “স্পিরিচু্য়াল ইনফ্লুয়েন্স”র বিষয়টির উল্লেখ করে যেভাবে ভর্ৎসনা করেছেন জাজ মাওরি, সেটিরও সমালোচনা করেছেন ২০১২-১৩ এর টাওয়ার হ্যামলেটস ফেয়ারনেস কমিশনের চেয়ার, প্যারিশ প্রিস্ট গেইলস ফ্রেইজার। তিনি সেসময় গার্ডিয়ানে বহু তথ্যসমৃদ্ধ একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখে উক্ত জাজমেন্টের কঠোর সমালোচনা করেন।
রয়েল কোর্ট অব জাস্টিসে ৬ সপ্তাহ বিচারিক কার্যক্রম শেষে এক পর্যায়ে লুৎফুর রহমানকে ৫ বছরের জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করে রায় প্রদান করেন বিচারক। বলা যায়, পিডব্লিউসি এবং বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন এবং বিবিসি‘র প্যানারমায় উত্থাপিত অভিযোগগুলোই ছিলো মূলতঃ “মাই লর্ড” এর ২শ’ পৃষ্ঠার রায়ের উৎস। অথচ অনেক বিজ্ঞজনের কাছে প্যানারমার ডক্যুমেন্টারিটি ‘খুবই বর্ণবাদী’ হিসেবে সমালোচিত হয়েছে। লুৎফুর রহমান যা নন, বিস্ময়করভাবে ডক্যুমেন্টারিটির পরিকল্পনায় সেসবের সমাবেশ দেখে প্যানারমার একজন নারী রিসার্চারই সেটি প্রচার হওয়ার আগে ‘হুইসেলব্লোয়ার’ হয়ে সব ফাঁস করে দেন। তাঁর এই তথ্য ফাঁস করাটা আইনের লঙ্ঘন ছিলো না, তারপরও এজন্য চাকুরিচ্যুত হতে হয় তাকে।
যতটুকু মনে পড়ে, সম্ভবতঃ শেষ জাজমেন্ট দিবসে সাংবাদিক গ্যালারিতে বসার সুযোগে খুব কাছ থেকে জাস্টিস মাওরির রায় শোনার সৌভাগ্য হয়েছিলো। লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো প্রতিবেদন প্রদান করতে না পারায় সেদিন তিনি তাঁর রায়ে মেট পুলিশকে “থ্রি ওয়াইজ মাংকি” বলে তিরষ্কার করেছিলেন। বাংলা মিডিয়াও বাদ যায়নি জাস্টিস মারওয়ারির সমালোচনা থেকে। মামলার রায়ে পুলিশকে বিষয়টি ভালো করে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু প্রায় ৪ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে মেট পুলিশ, এমনকি ক্রিমিনাল অফেন্স তদন্তে স্বীকৃত পারদশী সিটি পুলিশও কয়েকবারের তদন্ত করে লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সেই ফাইলটাই চিরতরে ক্লোজ করে দেয়।
জাজ মাওরির সমালোচিত রায় সেদিন লুৎফুর শুভাকাঙক্ষী এবং বারার ভোটারদের বৃহদাংশকে মর্মাহত করলেও ‘শত্রু’ কপোকাতের আনন্দ ছিলো বিরুদ্ধ শিবিরে। যে তারা রাজনীতি কিংবা গণতান্ত্রিক ভোটিং প্রক্রিয়ায় তাকে আটকাতে পারেনি সেই তাদের কাছে কোর্টের এমন একটি রায়ই ছিলো শত্রু নিধন এবং নিজেদের রাজত্ব কায়েমের একমাত্র অবলম্বন। সেদিনকার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী লেবারের জন বিগস তাঁর প্রতিক্রিয়ায়, টাওয়ার হ্যামলেটসের রায়কে ‘সৎ রাজনীতির বিজয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। আর লুৎফুর রহমানের টাওয়ার হ্যামলেটস ফার্স্ট তাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রায়কে দুঃখজনক মন্তব্য করে বিচার ব্যবস্থার উপর পূর্ণ আস্থা ঘোষণার পাশাপাশি মেয়র (লুৎফুর রহমান) সবধরনের অন্যায়কে অস্বীকার করেছেন বলে বিবৃতি প্রদান করা হয়। একই সাথে এই রায়ের বিরুদ্ধে জুডিশিয়েল রিভিউ বা বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার বিষয়ে আইনী পরামর্শ চাওয়ার কথা ব্যক্ত করা হয়।
কিন্তু কাঁধে পড়া প্রায় ১ মিলিয়ন পাউণ্ড মামলার খরচ পরিশোধের তাৎক্ষণিক আড়াইশ‘ হাজার পাউণ্ড দিতে গিয়েই হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থায় পড়েন লুৎফুর রহমান। মামলার এই খরচ পরিশোধ করতে তাকে নিজের বাড়ি বিক্রি করার পাশাপাশি কমিউনিটির অনেক বিত্তবান ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতা নিতে হয়েছে। তারপরও বিখ্যাত ও অভিজ্ঞ অনেক লিগ্যাল ফার্ম লুৎফুর রহমান জুডিশিয়েল রিভিউতে জেতার মতো গ্রাউণ্ড আছে বলে আশ্বস্থ করেছিলো। এই জুডিশিয়েল রিভিউ করতে গিয়েই প্রায় শত হাজার পাউণ্ড খরচ হয়েছিলো এবং এই আর্থিক ব্যয়ের সিংহভাগই তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা সাহায্য করেছিলেন। যতটুকু মনে পড়ে, মামলার খরচ নির্বাহের জন্য পাবলিকলি ঘোষণা দিয়ে ফাণ্ডরেইজও করা হয়েছিলো। কিন্তু লাখ লাখ পাউণ্ড খরচ করে একটি ব্রিটিশ কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করার মতো সামর্থ ক‘জন বাঙালির আছে? তাই তাকে একসময় অপারগ হয়ে সেদিকে এগুতে ক্ষান্ত হতে হয় এবং তিনি আর আপিল করতে যাননি। তবে তিনি যে দমে যাবার পাত্র নন, তা বিভিন্নভাবে প্রতিয়মান হয়েছে। একই সাথে হয়তো অপার এক আশা নিয়ে এমন একটি দিনের জন্য অধীর অপেক্ষা করছিলেন, যেদিন জনতাই কথা বলবে তথা সুবিচার করবে। আর সেই মাহেদ্রক্ষণটি অবশেষে ধরা দেয় লুৎফুর রহমানের জীবনে। ৫ মে’র নির্বাচনে তাঁর আশানুযায়ী আবার ভোটের মাধ্যমে কথা বলে বারার জনগণ। সবাইকে তাক লাগিয়ে জনতার বিপুল মেন্ডেডে আবার ক্ষমতায় ফিরেন লুৎফুর। তাই প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক তাকে বিজয়ী ঘোষণার পর তাঁর বক্তব্যে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রথমে সেই আসল কথাটিই বলেছিলেন— “টাওয়ার হ্যামলেটসের জনগণ আবার কথা বলেছে।” কিন্তু লক্ষ্যণীয় যে, তাঁর এ অবিশ্বাস্য ফিরে আসায় বারার সাধারণ মানুষ খুশী হলেও তাঁর পুরনো প্রতিপক্ষ চরম অখুশী এবং যে কোনো কূটচালের সুযোগের যে অপেক্ষায় তা প্রথম দিন থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে।
পরিশেষে বলতে চাই, পৃথিবীতে অনেক ব্যক্তির পলিটিক্যাল মৃত্যুর নজির রয়েছে। লুৎফুর রহমানও অবশ্যম্ভাবীভাবে তাদের একজন হওয়ার প্রায় দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো ছিলেন। প্রবল আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান সেই তিনি নিরবে নিয়তির কাছে নিজেকে সপে দেননি বলেই তাঁর হাতে ধরা দিয়েছে প্রত্যাশিত এই বিশাল প্রাপ্তি। তবে এই প্রাপ্তি বা বিজয় তখনই সার্থকতার দ্যুতি ছড়াবে যখন তিনি এর সঠিক মূল্যায়ন তথা বারার বাসিন্দাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে সমর্থ হবেন।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক। বার্তা সম্পাদক, সাপ্তাহিক সুরমা।
ইমেইল: quaium111@gmail.com