বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: দুর্নীতি ও অর্থ পাচার করেও পার পেয়ে যাচ্ছে ‘ব্যাংকখেকোরা’। দেশের অন্যতম দুর্বল ব্যাংক পদ্মাকে একীভূত করার চুক্তি করেছে শরিয়াভিত্তিক এক্সিম ব্যাংক। তবে দুই ব্যাংক এক হলেও পদ্মার কোনো পরিচালক এক্সিমে পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছে ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দুই ব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্থ ও অর্থ পাচারকারী আওয়ামী সরকারের ছত্রছায়ায় থাকা চেয়ারম্যানদের বিচার সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের উচ্চবাচ্য করেনি। তার মানে দাঁড়াচ্ছে দুই ব্যাংকের তিন চেয়ারম্যানই এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক একীভূতকরণের আওতায় ‘সেফ এক্সিট’ পেয়ে গেল।
গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক একীভূতকরণ চুক্তি হয়। এসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন। এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আফজাল করিমসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হকও উপস্থিত ছিলেন। চুক্তি শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আজ থেকে পদ্মা ব্যাংকের দায় দেনা, সম্পদ, লোকবল- সবই এখন এক্সিম ব্যাংকের। আর পদ্মা ব্যাংকের ঋণ খেলাপিরা ছাড় পাবে না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুই ব্যাংকের সম্পূর্ণ একীভূতকরণের আইনি প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে জানান তিনি। তবে পদ্মা ব্যাংক আর এক্সিম ব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অর্থ পাচারকারী চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা নিয়ে কোনো কথা বলেননি তিনি।
দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তিনজন হচ্ছেন এক্সিম ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ফারমার্স ( পদ্মা ব্যাংকের আগের নাম) ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাবেক পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রতিষ্ঠার মাত্র চার বছরের মধ্যে পদ ছাড়তে বাধ্য হন। ফারমার্স ব্যাংকের তৎকালীন এই চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। তার সময়ের এই ব্যাংকটি কার্যত আর্থিক দুরাবস্থার কারণে ধুঁকছে। এটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চারটি সরকারি ব্যাংক ও রাষ্ট্র খাতের ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) টাকা মূলধন হিসেবে জোগান দেওয়া হয়। যে ব্যাংকের স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়াই ছিল যৌক্তিক উপসংহার, সেটিকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা হয় রাজনৈতিক ও নিয়ন্ত্রকের সিদ্ধান্তে। তবে ফারমার্স ব্যাংক আর্থিক খাতে এরই মধ্যে এতটাই দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে যে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এসে সেটির নাম পাল্টাতে হয়।
ফারমার্স ব্যাংক কাগজে-কলমে আর সাইনবোর্ডে পদ্মা ব্যাংক হলেও এই ব্যাংকে গুণগত কোনো পরিবর্তন আসেনি। তা চোখে আঙুল দিয়ে বোঝাতে খুব বেশি সময় লাগেনি। পদ্মা ব্যাংক যারা নিয়ন্ত্রণ করতেন, তারা আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ব্যবহার করে নানা রকম ছাড় নিতে শুরু করেন। বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, এমন মুলা ঝুলিয়ে এসব সুবিধা আদায় করে ব্যাংকটি। কিন্তু প্রতিশ্রুত সেই বিনিয়োগ কখনোই আলোর মুখ দেখেনি। এরই মধ্যে পদ্মা আরও শুকিয়েছে। আর আস্থা হারিয়েছেন আমানতকারীরা।
নিজেদের ওয়েবসাইটে পদ্মা ব্যাংক বেশ অহংকার করেই বলেছে, গ্রাহকদের ‘আর্থিক সম্পদের বিশ্বস্ত অভিভাবক’ হতে চায় তারা। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষে এই ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এর মধ্যে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মতো। কিন্তু ব্যাংকটির দেওয়া ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ঋণের ৬২ শতাংশই খেলাপি। আয় দিয়ে আর আমানতের সুদ পরিশোধ করতে পারছিল না পদ্মা ব্যাংক। সুতরাং বিশ্বস্ত অভিভাবকের দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকটি। শেষ পর্যন্ত বড় আমানত শেয়ারে রূপান্তরের চেষ্টা চালিয়েছিল পদ্মা, কিন্তু ইতিবাচক সাড়া পায়নি।
মহীউদ্দীন খান আলমগীরের প্রস্থানের পর পদ্মা ব্যাংকের ৬৮ শতাংশ শেয়ার এখন চার সরকারি ব্যাংক ও আইসিবির হাতে। চরম সংকটে থাকা ব্যাংকটিতে ২০১৮ সালে ৭১৫ কোটি টাকা ঢেলেছিল এই প্রতিষ্ঠানগুলো। সেই সময় সাবেক অর্থ মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকে নানাবিধ সুবিধা নিয়েছে। অর্থমন্ত্রীকে সরাসরি অর্থ দিতে না পারলেও লোটাস কামাল টাওয়ারে পদ্মা ব্যাংকের অফিস করা হয়েছে। প্রতি বর্গফুট অতি উচ্চমূল্যে ভাড়া দিয়ে যাচ্ছে পদ্মা ব্যাংক ম্যানেজম্যান্ট। তবে ব্যাংকটি মূলত নিয়ন্ত্রণ করতেন কিছুদিন আগে পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফত। সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই ব্যবসায়ীর সময়ে পদ্মা ব্যাংকের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।
গত জানুয়ারি মাসের পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের চৌধুরী নাফিজ সরাফত। ‘ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যগত কারণ’ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন তিনি। পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডার হিসেবে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম পদ্মা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত চেয়্যারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন।
২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর চার বছর না যেতেই সংকটে পড়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকটি। এদিকে দুর্নীতি আর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ক্ষমতার চূড়ায় পৌঁছেছিলেন নাফিজ সরাফাত। ফলে আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতের অন্যতম আলোচিত চরিত্র ছিলেন তিনি। তাকে স্পর্শ করা যে কারো জন্য অসম্ভবের কাতারে পড়ছিল। ধারণা করা হয়, তাকে নিয়ে আঁকা কার্টুনের জন্যই কার্টুনিস্ট কিশোরকে জেলে যেতে হয়েছিল। কার্টুনিস্ট কিশোর পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে নিয়ে কার্টুন এঁকে লিখেছিলেন সারাফাত, ব্যাংক খাওয়ার ধারাপাত। কিশোর ও তার বয়জ্যেষ্ঠ বন্ধু লেখক মোশতাক আহমেদকে ২০২০ সালের মে মাসে ঢাকায় রেপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (রেব) ইউনিট-৩ এর সদস্যরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ আছে অতিরিক্ত পুলিশী অত্যাচারে জেলখানায় লেখক মোশতাক আহমেদের মারা যায় । কিশোরসহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং করোনভাইরাস মহামারি সম্পর্কে গুজব ছড়ানো এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য অপবাদ, বিভ্রান্তি ও বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়।
অন্যদিকে এক্সিম ব্যাংক ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর নিজের চারটি প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেন। তথ্য জেনেও নীরব থেকেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া চার বছর আগে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ব্যয়বহুল এলাকা কেনসিংটনের তার পাচার করা অর্থের প্রায় ২৫০ কোটি টাকার দুইটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়।
লন্ডনের ফিলিমোর গার্ডেন এবং ব্রান্সউইক গার্ডেনে বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও তার মেয়ের মালিকানাধীন কোম্পানির নামে বিলাসবহুল দুটি বাড়ির রয়েছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে এই দুটি বাড়ি কিনতে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড। তখনকার হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ছিল ২৩১ কোটি টাকা পাউন্ড। বর্তমান দর অনুযায়ী যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকায়। কোনো রকম মর্টগেজ সুবিধা ছাড়াই নগদ টাকায় এ মূল্য পরিশোধ করেছেন তারা। ব্রিটিশ সরকারের ল্যান্ড রেজিস্ট্রি দপ্তর ও ব্রিটিশ কোম্পানি হাউসের নথিপত্রে এমন তথ্য উঠে এসেছে। দেশের অর্থ পাচারকারী ধনকুবের এই বাবার মেয়ে আনিকা ইসলাম স্থায়ীভাবে লন্ডনেই বসবাস করছেন।
তথ্যমতে, ফিলিমোর গার্ডেনে ‘এএনডব্লিউ লন্ডন প্রোপার্টিজ লিমিটেড’ কোম্পানির নামে মালিকানাধীন বাড়িটি কেনা হয়েছিল ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। নিবন্ধিত নথিতে যার পরিচিতি নম্বর রয়েছে বিজিএল ৩৭৩৬৬। বাড়ির পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা: ৩০ ফিলিমোর গার্ডেনস, কেনসিংটন, লন্ডন ডব্লিউ৮ ৭কিউ ই। ৫০০ বর্গমিটারের (৫৩০০ বর্গফুট) এ বাড়িটি কেনা হয় ৯৯ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে। যেখানে ৫টি বেডরুম, ৪টি বাথরুম ও ৪টি রিসিপশন রুম রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচারসহ দেশের আর্থিক খাতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম সংঘটিত করার অভিযোগ উঠেছিল শিল্পপতি নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে তার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হয়। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ও আমদানি-রপ্তানিতে জালিয়াতির মাধ্যমে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নাসা গ্রুপ ও এর অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নজরুল ইসলাম মজুমদার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
এতে আরও বলা হয়, শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে যে পরিমাণ আমদানি করা হয়েছে, রপ্তানি হয়েছে তার চেয়ে অনেক কম। এভাবে গত চার বছরে কমপক্ষে ২১০ কোটি টাকা যুক্তরাজ্যসহ একাধিক দেশে তিনি পাচার করার অভিযোগ আছে। যদিও শেষ পর্যন্ত অদৃশ্য কারণে ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, অধিক প্রভাবশালী ও সরকার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ওই সময় উত্থাপিত অভিযোগটি অধিকতর তদন্ত না করেই অনেকটা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে, যা আজও আলোর মুখ দেখেনি।
এভাবে দিন দিন দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে, জাতিসংঘের তথ্য বলছে, গেল ডিসেম্বর থেকে দেশের অন্তত ৪০ শতাংশ পরিবার ঋণ করে খাদ্য কিনছে। দেশে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও কোটিপতির সংখ্যা বাড়া নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি টাকা রয়েছে দেশে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় এক লাখ ১৭ হাজার।
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশের ৪৩ শতাংশ পরিবারকে ঋণ করে খাবার কিনতে হয়েছে। আর মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ ছিল খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়। এর আগে, গত বছর ডিসেম্বরে ঋণ করে খাবার কিনতে হয় ৪০ শতাংশ পরিবারকে। ওই মাসে মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ ছিল খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়। তার আগের মাস নভেম্বরে ঋণ করে খাবার কিনতে হয় ৪২ শতাংশ পরিবারকে। আর মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ ছিল খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়।
এদিকে, ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা পিষ্ট। সাধারণ মানুষ এখন সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে ব্যাংকে টাকা জমানোর চেয়ে অনেকে আগের জমানো অর্থ ভেঙে খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতেও একটি শ্রেণির মানুষের আয় বেড়েছে। এরা হচ্ছে বিত্তশালী বা বড় প্রতিষ্ঠান।
এদিকে, বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দীর্ঘমেয়াদী হচ্ছে। যে কারণে দেশের পুষ্টিবিদরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে চললে ভবিষ্যতে নেতিবাচক ফল পেতে হবে। বিশেষ করে, শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। ফলে অতিমাত্রায় খর্বকায় শিশু দেখা যাবে। দেশে কর্মহীনতা বাড়বে। দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে জনমিতিক লভ্যাংশেও। দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে মানুষের কার্যক্ষমতা কমে যাচ্ছে। আর কর্মক্ষম মানুষ কমে গেলে দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মানুষের মৌসুমকেন্দ্রিক আয়ের সুযোগ ক্রমশ বিপর্যস্ত হচ্ছে, বহুমুখী বিপদ খাবারের টেবিলে খাবারের পরিমাণকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষ কর্মচ্যুতও হচ্ছে। সব মিলিয়ে সঞ্চয় কমে গেছে, জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে যেসব পণ্য না কিনলেই নয়, বিশেষ করে চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য মানুষ ঋণ করে কিংবা সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ছাড়াও মানুষ অন্যান্য পণ্যও কেনা কমিয়ে দিয়েছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোও বাধ্য হয়ে তাদের কর্মী ছাঁটাই করবে।
ডব্লিউএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে তীব্র শীতের কারণে নিম্নআয়ের মানুষ বিশেষ করে দৈনিক মজুরিতে কাজ করা শ্রমিক, রিকশা ও ভ্যানচালকরা বেশিরভাগ দিন কাজে যেতে পারেননি। এছাড়া নারীপ্রধান পরিবারগুলোতে খাবার জোগানোর ক্ষেত্রে অক্ষমতা বেড়েছে। এ সময়ে পুরুষের তুলনায় নারী শ্রমিকরা তুলনামূলক কম বেতন পেয়েছেন। কিছু পরিবার তাদের আত্মীয়স্বজন কিংবা কাছের মানুষের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে চলতে হয়েছে বলে উঠে এসেছে জরিপে।
সংকটের কারণে প্রতি দশ পরিবারের মধ্যে সাতটি পরিবার জীবন-জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে টাকা ধার করে চলা, উৎপাদনশীল সম্পদ বিক্রি করে দেওয়া, খাদ্য কেনার জন্য ঋণ নেওয়া প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে মধ্যবিত্তের জন্য এটি আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। আমরা মনেকরি পর্যাপ্ত খাবার ছাড়া পুষ্টিহীন একটি প্রজন্ম গড়ে ওঠার সম্ভাবনা বাড়ছে।