শিরোনাম
শুক্র. ডিসে ৫, ২০২৫

ব্যাংক খাতে বড় বিপর্যয়, নেপথ্যে যত কারণ

  • রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ব্যাংক ব্যবস্থা ধ্বংস করছে
  • দুর্বল ব্যাংক একীভূতের চেয়ে অবসায়ন ভালো: ড. সালেহউদ্দিন

ঢাকা অফিস: রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ব্যাংক দেয়ার পর থেকেই এই খাতের বড় বিপর্যয় শুরু হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পরিচালকদের অনৈতিক চর্চা, লুটেরাদের দৌরাত্ম্য এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতাও সমানভাবে দায়ী বলে মনে করেন তিনি। শনিবার (৩০ মার্চ) সকালে এক ছায়া সংসদের আলোচনায় সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কেবল একীভূতকরণ নয়, সুশাসন ফেরাতে হলে হাত দিতে হবে সমস্যার মূলে।

অর্থনীতির আলোচনার পুরোটাই যেন এখন ব্যাংক খাত ঘিরে। সঙ্কট কাটাতে একের পর এক উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়নের আগেই হাজির হয় নতুন সমস্যা। ফলে একরকম অধরাই থেকে যাচ্ছে এই ব্যবস্থার কার্যকর উন্নয়ন। সম্প্রতি একীভূতকরণ নিয়েও শুরু হয়েছে নানামুখী সমালোচনা। যা জোরালোভাবে তুলে ধরলেন তরুণ বিতার্কিকরাও।

এক বিতার্কিক বলেন, এই নীতিমালা মূলধন বৃদ্ধি করবে। খেলাপি ঋণের হার কমাবে। সর্বোপরি, সুশাসন জোরদার করবে। আরেক বিতার্কিক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে আমাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গণনায় তা ৩ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা।

পক্ষে-বিপক্ষের মতামত শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ব্যাংক আসার পর থেকেই বড় বিপর্যয়ের শুরু। যা আরও ত্বরান্বিত হয়েছে পারিবারিক মালিকানা, লুটেরাদের দৌরাত্ম্য আর নিয়ন্ত্রক সংস্থার গাফিলতির কারণে। তিনি বলেন, ব্যাংকের পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণ আলাদা। কিন্তু তিন স্তরেই ধস নেমেছে’।

এ সময় বক্তারা ব্যাংক খাতের সুশাসন ফেরাতে ব্যাংকের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা আলাদা করার সুপারিশ করেন।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকের মালিকানা পারিবারিক হয়ে গেছে। এই খাতের সুশাসনের অন্তরায় এটি। বাংলাদেশ ব্যাংক উল্টো রথে গেছে। আমার সময়ে পরিবার থেকে দুজন ছিলেন পরিচালক। পরে করা হয় ৪ জন। এখন করা হয়েছে ৩ জন। যাদের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে নাকি ৯ বছর’।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘যারা ব্যাংক দুর্বল করেছে, একীভূতকরণের ফাঁকে যাতে তারা পালিয়ে যেতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। ওরা যাতে আরও অর্থপাচার না করতে পারে, সেজন্য তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় ব্যাংক আরও দুর্বল হতেই থাকবে। আর অন্য আলোচকরা বলেন, সুশাসন ফেরাতে কেবল একীভূতকরণ নয়, সংস্কার শুরু করতে হবে সমস্যার মূল থেকে’।

দুর্বল ব্যাংক একীভূতের চেয়ে অবসায়ন ভালো: ড. সালেহউদ্দিন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রয়োজনের তুলনায় দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়েছে। এ সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ৬১টিতে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে দেশের মধ্যে যেসব ব্যাংক দেওয়া হয়েছিল তার কোনোটাই ভালো করছে না। সেসব ব্যাংকের উদ্দেশ্যই ছিল ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করা। পদ্মা ব্যাংকের মতো এগুলোকে নাম বদলে একীভূতের নামে ভালো করার চেষ্টা না করে লিকুইডেট (অবসায়ন করা) করে দেওয়াটাই ভালো ছিল।

শনিবার (৩০ মার্চ) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি অয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাতে সুশাসন জোরদারে ব্যাংক একীভূতকরণ’ বিষয়ক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর।

‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ব্যাংকব্যবস্থা ধ্বংস করছে’

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রশ্ন রেখে বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এত ব্যাংক দিলেন কেন? অনেক আগেই তুলে ধরে ছিলাম বলেছিলাম এত ব্যাংকের অনুমোদন দিলে মার্জারের (একীভূত) সিদ্ধান্তে যেতে হবে। দেরিতে হলেও মার্জার অ্যাকুইজেশনের সিদ্ধান্তটা ভালো। তবে মার্জারের মাধ্যমে ব্যাংকলুটেরা বা দুর্নীতিবাজরা যাতে পার না পেয়ে যায় সে বিষয়ে খুবই নজর রাখতে হবে। এটা না হলে প্রলেপ (আবরণ) দিয়ে ব্যাংক খাতের চিকিৎসা করা যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে ভালো ব্যাংক যেন দুর্বলের প্রভাবে নড়বড়ে না হয়। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাতকারী গ্রাহকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সাবেক এ গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকে। কিন্তু কোনো অ্যাকশন হয় না। আবার ব্যাংকের পরিচালকরা তাদের ঋণ ভাগাভাগি করতে থাকে। একটি অর্থনীতির জন্য এটা খুবই খারাপ। এ জন্যই ব্যাংকের আইনে কিছু সংস্কার প্রয়োজন। অন্যথায় যে আইন আছে সেটার যথাযথ বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।

ডলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডলার রেটের অস্থিরতা চলছে কেন? কেন লাগাতার ডলার বিক্রি? রিজার্ভ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছে। বাইরে দেখাবেন আমার টাকা খুব শক্তিশালী, এটা সবাই বোঝে। ওরা কি জানে না টাকার মূল্য উইক। আজ ভুলের কারণে ব্যাংক থেকে ডলার নেওয়া লাগছে। সোয়াপ-টোয়াপ করে কী হবে, এসব তো সাময়িক।

তিনি বলেন, বর্তমানে যিনি রাজনীতি করেন তিনি ব্যবসা করেন। এমনকি মিডিয়া হাউজের মালিকও তিনি। অথচ জনগণের পক্ষে কাজ করার কথা বলা হচ্ছে। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি যখন সবগুলো একসঙ্গে চালাবেন তখন মনের ভেতর একটা কিছু থাকবে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *