এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পাওয়া দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশের বাইরে। সারা দেশে নেতাকর্মীদের নামে অসংখ্য মামলা। এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দেড় বছর ধরে ঘরোয়া কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে দলটির কার্যক্রম। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবে বিএনপি- এমন পরিকল্পনার তথ্য জানিয়েছেন নেতারা। এ জন্য অন্যান্য বিরোধী দল এবং সংগঠনের সঙ্গে দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে।
দলটির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিরোধী শিবিরে থাকা অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে কথা বলার জন্য। এ ছাড়া খুব শিগগিরই ২০দলীয় জোটকে পুনর্গঠনের উদ্যোগও নিবে দলটি। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হওয়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, বড় প্রকল্পে দুর্নীতিসহ কয়েকটি ইস্যুতে জোরালো ভূমিকা রাখতে চায় দলটি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আন্দোলন সংগ্রাম ছাড়াও দলের পক্ষ থেকে জনসম্পৃক্ত বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি। চলতি মাসে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে নিমগাছের চারা রোপণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। এ ছাড়া লকডাউনে নেতাকর্মীদের নিজ উদ্যোগে জনসম্পৃক্ত কাজ করার মৌখিকভাবে বলা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। এদিকে আসন্ন লকডাউনে সাধারণ মানুষ যাতে যথাযথভাবে খাদ্য সহায়তা পায় সেজন্য সারা দেশের জেলা প্রশাসক ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপি’র।
সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন আর সময় নেই। আগামী দিনের জন্য নিজেদের তৈরি করে ফেলুন। শক্ত হয়ে দাঁড়াই আমরা নিজেদের পায়ে। দাঁড়িয়ে আমরা জনগণকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে আসি। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করি।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমরা দলকে সংগঠিত করছি। সারা দেশের কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হচ্ছে। তবে করোনা মহামারির কারণে এসব কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হলো। এরমধ্যেও ভার্চ্যুয়ালি যা করা সম্ভব সেটা করছি। আমরা ইতিমধ্যে বলেছি- এই সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবো না। তাই এই অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে জনগণকে সংগঠিত করে ভবিষ্যৎ আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি বিএনপি নিচ্ছে।
দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা সব সময় বলে আসছি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটা নির্বচন হোক। করোনার কারণে আন্দোলন সংগ্রাম ওইভাবে করা যাচ্ছে না। তবে আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
দল পুনর্গঠন: আগামীর আন্দোলন সংগ্রামের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারা দেশে বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হচ্ছে। তবে করোনা মহামারির কারণে গত ১লা এপ্রিল দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে বিএনপি। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানা গেছে। এদিকে রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় দলের মহাসমাবেশ হয়েছে। সিলেট, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ময়মনসিংহের মতো মহানগরগুলোতে সমাবেশ করার কথা ভাবছে তারা।
জানতে চাইলে বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, সবচেয়ে সত্য কথা হচ্ছে বিএনপি কখনোই ক্ষমতার রাজনীতি করেনি, করবেও না। বিএনপি সব সময় জনগণের জন্য রাজনীতি করে। এই করোনাকালীন সময়ে আমরা সাধ্যমতো সাধারণ মানুষের পক্ষ দাঁড়িয়েছি। যেখানে অন্যায়, দুর্নীতি হচ্ছে এসব বিষয়ে সরব ভূমিকা পালন করছি। পাশাপাশি একটি যুগপৎ আন্দোলনের জন্য দলকে সুসংগঠিত করা হচ্ছে। যদিও করোনার কারণে সবকিছুই ওলটপালট হয়ে গেছে।
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন: আগামীতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য নিজেদের প্রস্তুতির পাশাপাশি অন্যান্য বিরোধী দল এবং সংগঠনকে কাছে টানার কাজ করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দল এবং নেতার সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়া নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে উদ্যোগী হয়েছে বিএনপি। সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় রাখার চেষ্টা চলছে। ২০১৬ সালে কমিশন গঠনেও অপরাপর দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল দলটি। যা ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে ভূমিকা রেখেছিল। এ বছরও সেই প্রক্রিয়ায় সার্চ কমিটি ও কমিশনের সম্ভাব্য নাম প্রণয়নের চিন্তা আছে দলের শীর্ষ নেতাদের।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কথা বলছি। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও আলোচনা করছি। তারাও বিভিন্নভাবে একই দাবি করছে। কিন্তু করোনার কারণে কেউই মাঠে নামতে পারছে না। আমরা সবার মধ্যে জনমত তৈরির চেষ্টা করছি। আশা করবো এর মধ্য দিয়ে একটা জনমত তৈরি হবে। আর শিগগিরই আমরা গণআন্দোলন নিয়ে মাঠে নামতে পারবো।