- তারেক রহমানের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি!
- চাঁদা না দিলেই করা হচ্ছে হত্যা মামলার আসামি!
- রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠনকারী এক দুর্বৃত্তের হাতে বিএনপি।
- আতঙ্কগ্রস্ত জেলার নানান শ্রেণী-পেশার মানুষ!
- আওয়ামী লীগের মামলা পরিচালনা করছে বিএনপি।
- জেলা বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটি গঠনের দাবি।
মিনহাজুল আলম মামুন, ১৬ নভেম্বর- মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অত্যন্ত সৎ, মেধাবী ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের মানুষ ছিলেন। খন্দকার আবদুল হামিদ, ডা. সেরাজুল হক, নওয়াব আলী খান (খান স্যার), আবদুর রাজ্জাক ও জাহেদ আলী চৌধুরীর মত সৎ, মেধাবী ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের মানুষদের নিয়ে তিনি শেরপুরে বিএনপি গড়েছিলেন। শেরপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মৃত্যুর পরেও তুলনামূলক পরিচ্ছন্ন ইমেজের মানুষেরাই এই দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। যে কারণে মাঝখানে কিছুটা উত্থান-পতন থাকলেও শেরপুর বিএনপি ইমেজ সংকটে ভুগেনি। অশিক্ষিত, অসৎ ও অপরিচ্ছন্ন মানুষেরা শহীদ জিয়ার বিএনপিতে যোগ দেওয়ার সাহস পায়নি, বিএনপি তাদের কদর করেনি। কিন্তু নিকট অতীতে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়া হাইব্রিড নেতাদের, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠনকারীদের, ঋণখেলাপিদের, ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎকারীদের, হলমার্ক কেলেংকারীর সাথে জড়িত আওয়ামীপন্থী লোকদের ও ফাপরবাজ, মিথ্যাবাদী, চাঁদাবাজ এবং ধান্ধাবাজদের কদর করায় ভয়াবহ ইমেজ সংকটে ভুগছে শেরপুর জেলা বিএনপি। এদের কারণে সমাজের শিক্ষিত, সজ্জন, ভালো মানুষেরা এবং এই দলের নি:স্বার্থ ত্যাগী সমর্থকেরা দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
এ নিয়ে গত ১৮ অক্টোবর, শুক্রবার ‘শেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দৌরাত্ম্য চাঁদা না দিলেই করা হচ্ছে হত্যা মামলার আসামি!’ শিরোনামে দৈনিক খবরের কাগজ এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই শেরপুরে চলছে অবাদ চাঁদাবাজি। নানা কৌশলে চলছে এমন কর্মকাণ্ড। বিষয়টি এখন জেলাবাসীর মুখে মুখে ফিরছে। ছোটখাটো ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিগত ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী কারও যেন নিস্তার নেই এই চাঁদাবাজদের হাত থেকে। এর ফলে বড়-ছোট ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হাজারের গণ্ডি পেরিয়ে লাখ, আবার লাখের গণ্ডি পেরিয়ে কোটি টাকা চাওয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীর নির্দেশে তার কিছু লোক এসব চাঁদাবাজি করে আসছে। চাঁদা দিতে কেউ অপারগ হলে তাকে মামলায় তালিকাভুক্ত করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে হযরত আলী নীরবে এসব চাঁদাবাজি করছেন। বিষয়টি শুধু শহরেই সীমাবদ্ধ নয়, গ্রামেগঞ্জে, হাট-বাজারেও প্রতিদিন কোটি টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে হযরতের নির্দেশে। তবে এত কিছুর পরেও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও অর্থের বিনিময়ে নিজেদের রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বিগত বছরগুলোতে নিজেদের কুকর্ম ঢাকতে প্রভাবশালী এসব চাঁদাবাজদের ম্যানেজ করেই জনসম্মুখে চলছেন তারা। শুধু তাই নয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরাসরি বিরোধিতাকারী আওয়ামী সমর্থিত নেতাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান আইনি পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়টি ভিন্ন চোখে দেখছেন সাধারণ মানুষ।
শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুরে নিভৃত পল্লিতে অবস্থিত মুর্শিদপুর পাক দরবার শরিফের খাজা মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীর। সুউচ্চ সীমানা প্রাচীর ঘেরা ২৫০ একর জমিতে লাগানো রয়েছে নানা ধরনের গাছ। সম্প্রতি এই পরীরে আস্তানা বন্ধ করে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে হেফাজত ইসলামসহ অনেক নেতা-কর্মী। কিন্তু দোজা পীরের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে সেই আস্তানা বহাল রাখতে চায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী। এ নিয়ে হেফাজত ইসলামের সদস্যরা এর প্রতিবাদ করতে গেলে স্থানীয় বিএনপির কর্মীরা হেফাজত কর্মীসহ অন্য নেতা-কর্মীদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এ ছাড়া অনেককে ভয় দেখিয়ে জমি দখল, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিরও অভিযোগ রয়েছে হযরত আলীর বিরুদ্ধে।
এদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি (শেরপুর-৩ আসন) মাহমুদুল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীর বিরুদ্ধে সেনাপ্রধানসহ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ দিয়েছে জয়নাল আবেদীন নামে এক ধান-চাল ব্যবসায়ী। এমন এক চিঠি খবরের কাগজের হাতে এসেছে। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী শেরপুরে থাকা মিল-কারখানা, গার্মেন্ট, দোকানপাট ও মুদির দোকান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা হাতিয়ে নিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ভয়ে অনেকেই টাকা দিচ্ছে। কিন্তু টাকা না দিলে হত্যা মামলায় নাম বসিয়ে টাকা আদায় করছে। তাদের একটা সিন্ডিকেট রয়েছে। প্রতিদিন ছাত্রদল, যুবদলের সন্ত্রাসীরা বিভিন্নজনের বাসায়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করছে। পরে মানুষ বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে।’
চাঁদাবাজির শিকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অনেকে প্রতিবেদককে বলেন, কার বিচার, কাকে দেব? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো পুরোদমে মাঠে নেই। কোথায় অভিযোগ করলে প্রতিকার পাওয়া যাবে, সেটাও জানা নেই। এ ছাড়া অভিযোগ করলে বিপদ আরও বাড়তে পারে। তাই বাঁচার জন্য অনেকেই চুপ থাকছেন।
মিথ্যা মামলার শিকার হওয়া ভুক্তভোগী রিয়াজুল ইসলামের ভাই সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মামলায় আমার ভাইয়ের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে বিএনপির নেতারা। অথচ আমার ভাই কুমিল্লাতে চাকরি করে। সে কোনো রাজনীতি করে না।’
এদিকে তাবলিগ নেতা সানি বলেন, ‘দোজা পীরের দরবারে বাজে কাজ হয়। এজন্য আমরা সেটি বন্ধের জন্য আহ্বান করি। কিন্তু এখন শুনছি রাজনীতি নেতা-কর্মীরা সেটি (দোজা পীরের দরবার) বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করছে।’
শহরের নবীনগর পানাতিয়াপাড়ার বাসিন্দা মৃত শরাফত আলীর ছেলে বেলায়েত হোসেন বিল্লাল বলেন, ‘১৯৬২ সালে আমার নামে কেনা হয় ২ একর ৪৩ শতাংশ জমি। ক্রয় সূত্রে ওই জমির বৈধ মালিক আমি। কেনার পর থেকেই সেই জমি আমি ভোগ-দখল করে আসছি। কিন্তু গেল ৯ আগস্ট হঠাৎ করেই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী ৪০০-৫০০ সশস্ত্র লোক নিয়ে আমার ১ একর ২৬ শতাংশ জমি দখল করে নেয়। শুধু তাই নয়, ওই জমির মালিকানা দাবি করে নিজের নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে এলাকায় মাইকিং করে প্রচার করেছে, এই জমি তার।’
জেলার সমাজসেবক রাজিয়া সামাদ ডালিয়া চাঁদাবাজদের বিষয় বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে জেলাজুড়ে চাঁদাবাজির ধুম পড়ে গেছে। মানুষ নীরব চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে। এখনো চলছে। এর অবসান হওয়া দরকার। আমি বিএনপি নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে কয়েকবার বৈঠক করেছি। তাদের বলেছি, এগুলো বন্ধ করেন। চাঁদাবাজি যারা করছে তাদের ধরুন। আমার সন্দেহ হয়, এই চাঁদাবাজির পেছনে হয়তো বিএনপি কাজ করছে!’ এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
এর আগে গত ০৩ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার ‘শেরপুরে চলছে নীরব চাঁদাবাজি ! আতঙ্কগ্রস্থ নানা পেশাজীবী মানুষ‘ শিরোনামে দেশের আরেকটি কাগজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। শেরপুর প্রতিনিধি রফিক মজিদের করা সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘স্বৈরাচার পতন বা ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর থেকেই থেকেই অদ্যবধি পর্যন্ত শেরপুরের সর্বত্র নিরব চাঁদাবাজির আওয়াজ চাউর আছে। অলি গলিতে চাঁদাবাজির নানা কিসিমের গল্প এখন মানুষের মুখেমুখে। জেলায় বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে মামলা-হামালার ভয় দেখিয়ে নীরবে-নিবৃত্তে চলছে চাঁদাবাজি। চান্দাকান্ডের ব্যাপ্তি শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছেছে। অপরদিকে স্বৈরাচারের ভাগিদারও টাকা পয়সা দিয়ে পাড় পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দলীয় আলোচনায় বিএনপি নেতারাও চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর হুশিয়ারি দিচ্ছেন। বহিস্কারের কথাও বলছেন জোরে সুরে। চাঁদাবাজি হচ্ছে স্বীকার করে জামায়াত এসব কর্মকান্ডকে দুঃখজনক বলেছে। ছাত্র আন্দোলনের অগ্রভাগের নেতারা বলছেন চাঁদাবাজি আন্দোলনের অর্জনকে মলিন করছে।
সাধারণ নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজির জন্য নানা জনের নাম বলছে। তবে ভয় আতংকে স্পষ্ট করে চাঁদাবাজদের নামও বলার সাহস পাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের চোখে মুখে আতংকের ছাপ। রাজনৈতিক সুধিজনরা বিব্রত হচ্ছেন। সাহসী কেউ কেউ দু’চারজন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে প্রভাবশালীদের ইঙ্গিত করে কমেন্টস করে চাঁদাবাজি কর্মের প্রতিবাদ করছেন। তবে এ বিষয়ে ওইসব কমেন্টসকারীদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, কান পেতে শুনুন কে চাঁদাবাজি করছে। ভিকটিম ক’জনের সাথে যোগাযোগ করলে সুকৌশলি এড়িয়ে গেছেন। বলেছেন কার বিচার, কাকে দিব। আইন শৃংখলা বাহিনী এখনও ছন্দে ফিরেনি। কোথায় অভিযোগ করলে প্রতিকার পাওয়া যাবে তারও কোন ঠিক নেই। অভিযোগ করলে বিপদ আরও বাড়তে পারে তাই বাঁচার জন্য অনেকেই চুপচাপ থাকছেন। সাধারণের প্রশ্ন তবে চাঁদাবাজি করছে কে ? তবে আশার খবর হলো মাঠে গোয়েন্দারা বেশ সক্রিয় বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। প্রতিটি ঘটনা ও ঘটনার মাস্টার মাইন্ড ও চাঁদাবাজদের নাম গোয়েন্দারদের হাতে রয়েছে। আইনের শাষন প্রতিষ্ঠিত হলেই থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে ও চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এসব চাঁদাবাজির বিষয়ে শেরপুরের সমাজসেবক রাজিয়া সামাদ ডালিয়া বলেন, শেরপুরে যেভাবে নিরবে চাঁদাবাজি চলছে তাতে সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। দেশের স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকে তাদের দলের নেতা কর্মীরা সবাই পলাতক রয়েছে। এমন অবস্থায় শেরপুরের বিএনপি নেতা কর্মীদের আমি বলেছি আপনারা এই চাঁদাবাজি বন্ধ করুন। আপনারা যদি এর সাথে জড়িত না থাকেন তাহলে থানা মোড়ে দাঁড়িয়ে এর প্রতিবাদ করুন কারা করছে চাঁদাবাজি তার খোঁজখবর নিয়ে তাদেরকে আইনের হাতে তুলে দিন। আমার তো কোন অস্ত্র নেই চাঁদাবাজি প্রতিরোধ করা। আমি ৮২ বছর বয়সেও যেটা করতে পারি সেটা হচ্ছে এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অনশন করা।‘
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেরপুর জেলা শাখা তাদের ফেসবুক পেইজে সেই খবরের লিংক শেয়ার করে লিখেছে, ‘ চাঁদাবাজমুক্ত শেরপুর চাই। হযেরত আলীর চামড়া তুলে দেবো আমরা। হযরত আলীর দুই গালে জুতা মারো তালে তালে।’
শেরপুর জেলার দেয়ালে দেয়ালে হযরত আলীর ছবি টাঙিয়ে ‘প্রতারক হইতে সাবধান, হযরত আলী একজন প্রতারক, দালাল, টাকা আত্মসাতকারী ও ভুয়া-মনগড়া এক তরফা পকেট কমিটির জন্মদাতা এবং চাঁদাবাজ’ লিখে চিকা মারা হয়েছে। শহরের অলিগলি পোস্টারে পোস্টারে সয়লাব হেয়ে গেছে। তারেক জিয়া পরিষধ শেরপুর জেলা শাখা তাদের ফেসবুক ফেইজে হযরত আলীর ছবিযুক্ত সেই পোস্টার শেয়ার করে লিখেছে, যে লোকের ছাত্র, যুব রাজনীতির কোন ইতিহাস নেই। যে লোক একসময় আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত ছিলো, টিভি চ্যানেলে সরাসরি লাইভে যে লোক এমপি আতিক (আ‘লীগ) সাহেবকে নিজের অভিভাবক বলে সম্বাধন করে, সে হতে চায় শেরপুরবাসীর নেতা! দলের চিহ্নিত এমন অনু্প্রবেশকারীদের বিরুদ্বে আওয়াজ তুলুন। পুরনো যে সকল নেতা-কর্মী রাজপথে থেকে, রক্ত ঝরিয়ে শেরপুরের বুকে বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তাদেরকে আবারও দলে ফিরিয়ে আনা হোক। হাইব্রিডদের বহিস্কার করা হোক।‘
উল্লেখ্য, এমপি আতিক (আ‘লীগ) সাহেবের সাথে তার সুসম্পর্কের কারণে এবং তার নিজের অভিভাবক হওয়ার কারণে বিএনপি যেবার দলগতভাবে ইউপি নির্বাচরে যাবার সিদ্বান্ত নিয়েছিলো, সেবার আওয়ামী এমপি আতিকের পাকুড়িয়া ইউনিয়নে দুই মাস আগে থেকে বিএনপির ৫/৬ জন প্রার্থী প্রচারণায় থাকলেও কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিলো এমপি আতিকের আস্থাভাজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হায়দার আলীকে। লীগ এমপি আতিকের আস্থাভাজন হায়দার আলীকে জেতানোর জন্যই ওই আসনে হযরত আলী বিএনপির কোন প্রার্থী দেননি। ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও মনোনয়ন প্রত্যাশী হালিম সরকার জানিয়েছেন, রহস্যজনক কারণে সদর থানা বিএনপির আহ্বায়ক হযরত আলী পাকুড়িয়ায় মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন প্রত্যাশী ইউনিয়ন বিএনপির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত জামান রিপন জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করার জন্য ইচ্ছা করেই বিএনপির কাউকে টিকিট দেননি। জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি শ্রী উজ্জল সরকার জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর গ্রামে হযরত আলীর ৩০ কোটি টাকার মত্স্য প্রকল্প আছে। এই প্রকল্প বাঁচাতে তিনি আপস করে আমাদের নেতা-কর্মীদের ধানের শীষ প্রতীক থেকে বঞ্চিত করেছেন।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠনকারী এক দুর্বৃত্তের হাতে জেলা বিএনপি
‘কৃষি ব্যাংকের ৩০২ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলার প্রধান আসামি হযরত আলী আলীর জামিন’ শিরোনামে কিছুদিন আগে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে আরো প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে হযরত আলীর রোজবার্গ গ্রুপ। স্থানীয়ভাবে ভূয়া এলসি খুলে কোম্পানিটি ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এমনকি সোনালী ব্যাংকের গুলশান শাখাসহ বিভিন্ন শাখার ঋণ জালিয়াতিতে জড়িত রোজবার্গ গ্রুপের মালিক হযরত আলী ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে নিজেকে সোনালী ব্যাংকের এমডি হুমায়ুন কবীরের ছেলে হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। যাকে পুঁজি করে হযরত আলীর রোজবার্গ গ্রুপ অবৈধভাবে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়েছে আর ফেরত দেয়নি। গুগলে রোজবার্গ গ্রুপ লিখে সার্চ দিতেই হযরত আলীর শত শত কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এর খবর বেরিয়ে এসেছে। রোজবার্গ গ্রুপের মালিক হযরত আলী এই অনৈতিক সুবিধা নিতে সোনালী ব্যাংকের ততকালীন এমডি হুমায়ুন কবীরকে মহাখালি ডিওএইচএসের ভেতরে দেড় কোটি টাকা মূল্যমানের একটি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন, যা রোজবার্গেরই নির্মিত। এছাড়া মুন্সিগন্জের গজারিয়ায় হুমায়ুন কবীরকে সুরম্য একটি দ্বিতল বাস ভবন নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে রোজবার্গ গ্রুপের পক্ষ থেকে। হুমায়ুন কবীরের মেয়ের বিয়েতেও প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে ব্যাংকের এমডি হুমায়ুন কবীরকে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক থেকে স্টার এক্সেসরিজের নামে ভূয়া এলসি খুলে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় হযরত আলী যা নিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২ ইং সালে ইত্তেফাকে একটি অনুসন্ধ্যানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ইং আরটিভি অনলাইনে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফারমার্স ব্যাংকের (পদ্মা ব্যাংক) অডিট কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলা হয়েছে। ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলাটি করা হয়েছে। গুলশান থানায় দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলার প্রধান আসামি হলেন মেসার্স রোজবার্গ অটো-রাইস মিলের মালিক হযরত আলী, অন্য আসামিরা হলেন- হযরত আলীর রোজবার্গ অটো-রাইস মিলের পরিচালক দেলোয়ার হোসেন, ফারমার্স ব্যাংকের শেরপুর শাখার প্রধান উত্তম বড়ুয়া, ফারমার্স ব্যাংকের প্রাক্তন অতিরিক্ত পরিচালক এ কে এম শামীম, ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের প্রাক্তন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল আহসান চৌধুরী ও সিটি সার্ভে লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর খায়রুল আলম। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণের নামে ৫৮ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। যা সুদ-আসলে ৬৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা হয়েছে। এছাড়া ভূয়া মর্টগেজের মাধ্যমে কৃষি ব্যাংক থেকে ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগে ২০১৭ সালের ৩ আগস্ট দুদকের উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলম বাদী হয়ে হযরত আলীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২৬ আগস্ট ব্যাংকের একই শাখা থেকে ২৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয় দুদক। তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ভূয়া মর্টগেজের মাধ্যমে কৃষি ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখা হতে ঋণের নামে ফান্ডেড এবং নন ফান্ডেড মিলিয়ে মোট ৬ কোটি ৮৮ লাখ ৯ হাজার ৩১২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দুদকের তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪২০/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
টাকা আত্মসাৎ মামলাকে রাজনৈতিক মামলা দেখিয়ে অব্যহতি পাওয়ার চেষ্টা
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর টাকা আত্মসাৎ মামলাকে রাজনৈতিক মামলা দেখিয়ে অব্যহতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন হযরত আলী। একাজে তিনি দলকে ব্যবহার করছেন। এটর্নি জেনারেলদের ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। অথচ রাজনৈতিক কারণে তিনি গত ১৬ বছরে একদিনও জেল খাটেন নাই। অথচ চতুর হযরত আলী এখন টাকা মামলাকে, পাবলিক মানি লুটের মামলাকে রাজনৈতিক মামলা দেখিয়ে মানুষের সিমপ্যাথি আদায়ের চেষ্টা করছেন।
তারেক রহমানের নামে শেরপুর জেলায় ব্যাপক চাঁদাবাজি
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যেখানে দলের ভাবমূর্তি উজ্জল করছেন, সেখানে হযরত আলী খোদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নামেই চাঁদাবাজি করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক বিএনপি নেতা সুরমাকে জানিয়েছেন, ‘হযরত আলী সরাসরি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নামে চাঁদাবাজি করছেন।‘ ব্যবসায়ীদের তিনি বলছেন, ‘এই চাঁদার টাকা আমি আমার জন্য চাইছি না। নদীর পানি ফুরিয়ে যেতে পারে কিন্তু হযরতের টাকা ফুরাবে না। টাকা আমি আমার জন্য চাইছি না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য চাইছি। আমাকে প্রতিমাসে লণ্ডনে টাকা পাঠাতে হয়। উনি টাকা পেতে একটু দেরি হলেই আমাকে ফোন করেন। আপনার এখানে আসার আগেও উনি আমাকে কল দিয়েছেন। আপনি টাকা দিলেন কিনা, উনি আবার রাতে আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন।’ সুরমাকে তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘হযরত আলী কোন কোন জায়গায় গিয়ে কথাবার্তা বলার সময় মোবাইলে রিং বেজে উঠলেই বলেন, ‘তারেক জিয়া ফোন করেছেন। এরপর একটু আড়ালে গিয়ে হা-হু করে এসে বলেন তারেক জিয়া এই বলেছেন, ওই বলেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি বলে ফাপর মারেন। হযরত আলী বেরিয়ে যাওয়া মাত্র লোকজন টিপ্পনি করে বলেন, তারেক জিয়ার আর কাজ নাই সকাল সন্ধ্যা ওরে ফোন করেন! ও মনে করে আমরা কিছু বুঝি না। এক নাম্বারের ধান্দাবাজ।’ তারপরও তিনি মানুষকে মামলার ভয় দেখিয়ে, কাজ আটকে দেয়ার ভয় দেখিয়ে, মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে টাকা দিতে বাধ্য করেন। লোকজনকে বলেন, ‘তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে নিধন করতে বলেছেন।‘ তিনি স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারের সকলকে নিয়ে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। মাসে একবার শেরপুরে এসে টাকা ভর্তি ব্রিফকেস নিয়ে ঢাকায় ফিরে যান। শেরপুর থেকে ঢাকায় যাবার সময় তাঁর ব্রিফকেস চেক করলেই টাকার বান্ডিল পাওয়া যাবে। তাছাড়া ৫ আগস্টের পর থেকে হযরত আলীর ব্যাংক একাউন্টে চেক করলেও ব্যাপক চাঁদাবাজির টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন পাওয়া যাবে। চাঁদাবাজির অভিযোগে জাতীয়তাবাদী দলের ভাইস চেয়ারম্যান জনাব গিয়াস কাদের চৌধুরীকে রিজভী সাহেব কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারলে জনাব হযরত আলীকে দিচ্ছেন না, সেটা এক রহস্য।‘
মির্জা ফখরুল, রিজভী, টুকু, রুমনকেও চাঁদার ভাগ দেয়ার দাবি
নাম না প্রকাশ করার শর্তে জেলা ছাত্র দলের এক নেতা সুরমাকে জানিয়েছেন, ‘বাসস্ট্যান্ড, ট্রাকস্ট্যান্ড, গরুর হাট, কাচাঁ বাজার, দোকানপাট, হোটেল, রেস্টেুরেন্ট, ক্লিনিক- এগুলো থেকে চাঁদা তুলার দায়িত্ব তিনি তার অনুগত নেতা-কর্মীদের ভাগ করে দিয়েছেন। তিনি নিজে এলজিইডি থেকে ঠিকাদারি হাতিয়ে নিচ্ছেন। পরস্পর যোগসাজশে আওয়ামী লীগের ঠিকাদারি কাজগুলো তিনি হাত বদল করছেন। গত ১৬ বছরও তিনি সরকারি দলের সাথে সার্বক্ষণিক উঠা বসা করে তার নিজের আখের গুছিয়েছেন। এখন ঠিকাদারি হাত বদল করছেন। গত ১৬ বছরে উপজেলা পরিষদ, মেয়র ও ইউপি নির্বাচনসহ বিএনপি যেসব স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে মনোনয়ন বাণিজ্য করে তিনি দলের নেতা-কর্মীদের দারিদ্রতার মালা পড়িয়েছেন। তার বাসার ড্রয়িংরুমে বসে একদিন গল্পে গল্পে বলেছেন, ‘আমি দলের মহাসচিব ফখরুল সাহেবকে টাকা দেই। উনি সিঙ্গাপুরে গিয়ে আমার টাকায় চিকিতসা করিয়ে এসেছেন। রিজভী সাহেব আমার কাছে টাকার জন্য লোক পাঠান। আমার দেয়া টাকায় তার সংসার চলে। টুকু আর দিনকালের রুমন টাকার জন্য সকাল সন্ধ্যা আমার অফিসে এসে বসে থাকে। দিনকাল বের করার জন্যও আমাকে টাকা দিতে হয়। আমি টাকা না দিলে দিনকাল বন্ধ হয়ে যাবে। কাজেই আমি যা বলি সেটা সবাইকে শুনতে হবে।’ দলের কেউ তার মতের বাইরে গেলে তিনি মির্জা ফখরুল, রিজভী, টুকু আর রুমনের কথা বলেন। তাদের কথা বলে দল থেকে বহিস্কারের ভয় দেখান। ‘শেরপুর ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ইউরোপ’ এর আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট কহিনুর সুরমাকে জানিয়েছেন, ‘খবরের কাগজে চাঁদাবাজির যেসব ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ সত্যি। আমার ভাতিজাকে মিথ্যা মামলায় আসামি করে এখন তার নাম কাটানোর জন্য চাঁদা চাইছেন। প্রাক্তন ইউপি মেম্বার এমদাদুল হক মাঠুকে মিথ্যা মামলায় আসামি করে তার কাছে টাকা চাইছেন। মামলা থেকে নাম কাটাতে যুবলীগের এক ঘাতক নেতার কাছে ১ কোটি টাকা চাইছেন। মহিলা লীগের এক নেত্রীর কাছে ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। কোন মামলায় তাকে আসামি করেননি। এমনকি ঢাকার ঘটনায় জড়িত না থাকার পরেও অ্যাডভোকেট সুব্রত কুমার ভানুসহ অনেক মানুষকেই মিথ্যা মামলায় আসামি করেছেন। মামলার নামে বাণিজ্য করছেন।’
তিরস্কারের বদলে পুরস্কার
জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শিক ও ত্যাগী নেতা-কর্মীরা আশা করেছিলেন নানান অপকর্মের কারণে দলের হাইকমান্ড হযরত আলীকে দল থেকে বহিস্কার করবেন, অথবা অত্যন্ত সৎ, মেধাবী ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের কোন নেতাকে দলের দায়িত্ব দিবেন। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। দলের হাইকমান্ড কমিটি ভেঙে দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকেই দলের দায়িত্ব দিয়েছেন। আগে তিনি দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এখন তিনি আহবায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিরস্কারের বদলে তিনি দলের হাইকমান্ডের কাছ থেকে পুরস্কার পেয়েছেন। জেলা কমিটির সদ্য সাবেক এক সহসভাপতি সুরমাকে জানিয়েছেন, ‘এতে করে জাতীয়তাবাদী দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা হতাশায় ভুগছেন। এখন তিনি দলে তার বিরোধীদের বাদ দিয়ে একটা পকেট কমিটি করার পায়তারা করছেন। জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি ও তিনবারের এমপি মাহমুদুল হক রুবেলকে পর্যন্ত তিনি কোনঠাসা করে রেখেছেন। আহবায়ক হওয়ায় তিনি শুধু জেলা কমিটিতে না পুরো জেলার দন্ডমুন্ডের কর্তা বনে গেছেন। এলাকার বা পারিবারিক সাধারণ ঝগড়াঝাটিতেও তিনি মামলা করার পরামর্শ দিয়ে দুই পক্ষ থেকেই টাকা খাচ্ছেন। টাকা খেয়ে তিনি থানা-পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। হযরত আলীর কারণে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড রুগ্ন ও দেউলিয়া হয়ে গেছে। দলের মহাসচিব ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে লণ্ডন কানেকশন থাকার সুবাদে তিনি মাত্রাতিরিক্ত স্বেচ্ছাচারিতা ও কতিপয় আওয়ামী ব্যবসায়ী নেতার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে শেরপুর জেলা বিএনপিকে অকেজো করে দিয়েছেন। তার পূঁজি একটাই, দলের মহাসচিব ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে লন্ডনে কানেকশন। এছাড়া এলাকায় তার কোন গ্রহণযোগ্যতা নাই। অর্থ আত্মসাত করে জেলে থাকা ও ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে তিনি নিজে ইলেকশন করতে পারেন না। আবার যোগ্য ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জনপ্রিয় কাউকে নমিনেশনও পেতে দেন না। ইলেকশনের আগে তিনি তার ইম্যাচিউর মেয়েকে এনে দাঁড় করান যিনি ৩ লাখ ৩০ হাজার ভোটারের মধ্যে ৩০ হাজার ভোটও পান না। মানুষ তাকে পছন্দ করে না। ঢাকায় বড় হয়েছে, ঢাকায় থাকে, এলাকার মানুষের সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই্। এলাকার মানুষের সাথে তার নাড়ীর যোগ নাই। সে কারো সুখ-দু:খ বুঝে না। মানুষ তাকে সমর্থন করে না। তারপরও তিনি নিজে না পেলে মেয়েকেই প্রার্থী করার ঘোষণা দিয়েছেন। দলটাকে তিনি পারিবারিক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী বানিয়ে ফেলেছেন।’
আওয়ামী লীগের মামলা পরিচালনা করছে বিএনপি আইনজীবী
গত ৪ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শেরপুর জেলায় শহীদ মাহাবুব ও শহীদ সৌরভ হত্যা মামলার গ্রেফতারকৃত আসামি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল ও সিঙ্গাবরনা ইউনিয়ন পরিষদের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান ফখরুজ্জামান কালুর হয়ে মামলা লড়ছেন নবগঠিত শেরপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিব আ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম। এ সংক্রান্ত কিছু নথি সুরমা’র হাতে এসেছে। এছাড়া কারওয়ান বাজারের ওয়েস্টার্ণ ইন্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব বশির আহমেদকে আসামি করে তার কাছে ১ কোটি টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছে। বশির আহমেদের অফিস থেকে শেরপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক হযরত আলীকে বের হতে দেখা গেছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে জেলা ছাত্র দলের এক নেতা সুরমাকে জানিয়েছেন, ‘হযরত আলীর (আহবায়ক) নেতৃত্বে আওয়াল চৌধুরী (যুগ্ন আহবায়ক) ও মো: সিরাজুল ইসলামকে (সদস্য সচিব) নিয়ে তিন সদস্যের যে আহবায়ক কমিটি করা হয়েছে, এই কমিটির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে ইতোমধ্যেই বিরাট প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাদের নানান অপকর্মের তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।’
শেরপুর জেলা বিনপির নতুন আহবায়ক কমিটি গঠনের দাবি
শেরপুর জেলা বিএনপির তৃণমুলের নেতাকর্মীরা সুরমাকে জানিয়েছেন, ‘জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী জেলা বিএনপির আহবায়ক মনোনিত হওয়ার পর আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। হযরত আলী তার নিজ ব্যবসা বাণিজ্যের ও ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের স্বার্থে দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে গত ১৬ বছর সরকারি দলের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে সরকারী দলের সঙ্গে আতাত করে দল পরিচালনা করেছেন। বিগত ১৬ বছর তিনি সরকারী বিরোধী আন্দোলন কিংবা কেন্দ্রীয় বিভিন্ন কর্মসূচী পালনে জেলা বিএনপির হয়ে মাঠে নামেননি। বেশিরভাগ সময় তিনি অর্থ আত্মসাৎ মামলায় জেলে থেকেছেন। জেল থেকে বেরিয়ে বা জামিন নিয়ে তিনি তার স্থায়ী ঠিকানা ঢাকায় থেকেছেন। আহবায়ক মনোনিত হওয়ার পর তিনি দলীয় গ্রুপিং করে নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দল পরিচালনা করছেন। অতীতে তিনি কামারের চর ইউনিয়নে নমিনেশনের বিনিময়ে মন্জুর কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। লছমনপুর ইউনিয়নে নমিনেশনের বিনিময়ে সুলতান আহমেদের কাছ থেকে সস্তায় জমি অধিগ্রহণ করেছেন। চর পক্ষিমারী ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে তিনি অবস্থান নিয়েছেন ও জাতীয় পার্টির নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি অংশ নিয়েছেন। তার নিজ কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থী মাত্র ৮ ভোট পেয়েছে। শহীদ জিয়ার ৩৫ তম শাহাদাত বার্ষিকীতে শহীদ জিয়ার জীবন,কর্ম ও আদর্শের উপর আলোচনা না করে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিষোদাগার করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা মাহমুদুল হক রুবেল তাকে দলে জায়গা করে দিয়েছেন, সুযোগ পেয়ে তিনি মাহমুদুল হক রুবেলকেই ল্যাং মেরে তার পদ কেড়ে নিয়েছেন। তিনি সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরিয়েছেন। এহেন অনৈতিক মানুষকে শেরপুর জেলা বিএনপির আহব্বায়কের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে, আহবায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে সদ্য সাবেক সফল সভাপতি, তিন বারের সফল এমপি, দক্ষ সংগঠক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য জ্বনাব মোঃ মাহমুদুল হক রুবেলকে আহবায়ক করে দলের ত্যাগী, নিষ্ঠাবান, অবহেলিত ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে এবং জেলায় বসবাসরত সাংবাদিক, শিক্ষক, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, সমাজের অন্যান্য পেশাজীবীসহ সৎ, মেধাবী এবং পরিচ্ছন্ন ইমেজের কৃতি সন্তানদের জেলা কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত করে নতুন কমিটি গঠন করা হলে দলকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে। শেরপুরের তিনটি আসনই দলকে উপহার দিতে তারা সক্ষম হবে।