ইংরেজিতে একটি ইডিয়ম আছে, ডেথ ইজ দ্য গ্রেট লেভেলার। অর্থাত্ ধনী-দরিদ্র, জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই একদিন মরতে হয়। মৃত্যু সমাজের সব উঁচুনিচু ভেদাভেদ সমান করে দেয়। এখন করোনাভাইরাস সম্পর্কেও সেকথা বলছেন অনেকে। জাতিধর্ম নির্বিশেষে মানুষ এখন অতিমহামারীর শিকার হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও টিকাকরণের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে ভারত সরকারকে। কারণ তাঁদের অনেকে ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের থেকে অন্যদের মধ্যেও রোগ ছড়াতে পারে। মায়ানমারে সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে ভারতে পালিয়ে এসেছেন রোহিঙ্গারা। যদিও ভারত সরকার তাঁদের শরণার্থী বলে স্বীকার করেনি। রোহিঙ্গাদের কাছে রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্বাস্তু সংক্রান্ত কমিশনের কার্ড আছে। কিন্তু ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী সংক্রান্ত কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী নয়। তাই সেই কার্ডেরও কোনও দাম নেই ভারতে। এদেশে পরিচয়হীন মানুষ হিসাবে বাস করছেন রোহিঙ্গারা।
চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে ভারতের বিরোধ ঘনিয়ে ওঠে। বাংলাদেশের কক্সবাজারে উদ্বাস্তু শিবির থেকে একদল রোহিঙ্গা সমুদ্র পেরিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আন্দামানের কাছে তাঁদের যন্ত্রচালিত নৌকা খারাপ হয়ে যায়। ভারতের উপকূলরক্ষীরা তাঁদের গ্রেফতার করেন। কিন্তু পরে বাংলাদেশ তাঁদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করে। আপাতত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন রোহিঙ্গারা। একসময় জানা গিয়েছিল, কলকাতার কাছে বারুইপুরে কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবার বাস করছে। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে তাঁরা বারুইপুর ছেড়ে চলে যান। রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভারতে যতই আপত্তি থাক, করোনা সংকটের সময় তাঁদের ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। গত মাসে তৈরি করা ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, আধার কার্ড না থাকলেও কোনও ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে। এর আগে শোনা গিয়েছিল, ভারতে অন্তত ২০ হাজার রোহিঙ্গা আধার কার্ডের অভাবে টিকা নিতে পারছেন না। রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্বাস্তু কমিশন ওই নির্দেশিকার প্রশংসা করে বলে, এর ফলে শরণার্থীরা প্রতিষেধক নিতে পারবেন। রাজস্থানের জয়পুরে মেডিক্যাল অফিসার আর কে শর্মা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শহরে ক্যাম্প করে ১০২ জন শরণার্থীকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আমাদের সাহায্য করেছিল। দিল্লি ও জম্মুর রোহিঙ্গা শিবিরে অবশ্য কেউ ভ্যাকসিন দিতে আসেনি। ২০০৮ সাল থেকে জম্মু ক্যাম্পে আছেন মহম্মদ ইউনুস নামে ৪৬ বছরের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘এখানে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি। কীভাবে ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে, তাও আমরা জানি না।’ পরে তিনি বলেন, ‘এখানে সবাই আমাদের বেআইনি অভিবাসী মনে করে। আমরা জানি না কবে আমাদের এদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’ দিল্লির রোহিঙ্গা সংগঠন ‘রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সাব্বের খিউ মিন বলেন, ‘ভারত সরকার অনলাইনে ভ্যাকসিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে বলেছে। রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগের কাছে স্মার্টফোন নেই। তারা কীভাবে টিকা নেওয়ার জন্য আবেদন করবে জানি না।’