- ২৩ বাংলাদেশি নাবিক জিম্মি।
- জিম্মি জাহাজে ২৫ দিনের রসদ।
ঢাকা, ১২ মার্চ: আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে বাংলাদেশি পতাকাবাহী একটি বাণিজ্যিক জাহাজ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। অস্ত্রধারী দস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিককে জিম্মি করেছে। তবে নাবিকরা নিরাপদে রয়েছেন এবং তাদের উদ্ধারে সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে নৌপরিবহন অধিদপ্তর। এমভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজটি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাত যাচ্ছিল।
জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ মেহেরুল করিম আমাদের সময়কে জানান, এমভি আবদুল্লাহ যে সোমালিয়া জলদস্যুদের কবলে পড়েছে, তা জাহাজের নাবিকদের কাছ থেকে গতকাল দুপুরে তারা জানতে পারেন। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের মধ্যে সাতজন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ক্যাডেট। তারা হলেন- চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার মো. তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হাসান, চিফ ইঞ্জিনিয়ার আ স ম সাইদুজ্জামান, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন এবং ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান।
ভারত মহাসাগরে দুটি বোটে করে ৫০ জন জলদসু্যু জাহাজে ওঠেন। তাদের সবার কাছেই অস্ত্র রয়েছে। পুরো জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জলদস্যুরা সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। জাহাজে থাকা নাবিকরাই জাহাজ চালাচ্ছেন। দস্যুরা নাবিকদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছে যেন তারা খবর প্রকাশ করতে না পারে। গত সন্ধ্যায় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ৫৫০ নটিকেল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। গতরাত পর্যন্ত জলদস্যুরা কোনো ধরনের প্রস্তাব পাঠায়নি মালিকপক্ষের কাছে। জাহাজে থাকা একজন নাবিক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় জানিয়েছেন, তারা সবাই নিরাপদে আছেন। জলদস্যুরা তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ ব্যবহার করেনি। তবে সোমালিয়ার দিকে জাহাজ নিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেন, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ২৩ জন নাবিক আছেন। তারা নিরাপদেই আছেন। তাদের উদ্ধারে আন্তর্জাতিক যে প্রক্রিয়া ও কৌশল রয়েছে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের যোগাযোগ ও পদক্ষেপ অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, জলদস্যুরা জাহাজাটির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, জাহাজটি সোমালি জলদস্যু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে এবং জাহাজটিকে সোমালিয়া বন্দরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত জলসদ্যুরা জাহাজকে বন্দরের নিকটবর্তী নিয়ে যায়, তার পর মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দাবিদাওয়া জানায়। আমরা সার্বক্ষণিক জাহাজ মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। বাংলাদেশি নাবিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা সর্বদা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি।
জানা গেছে, এমভি আবদুল্লাহ নামে জাহাজটি গত বছর সংগ্রহ করে কেএসআরএম গ্রুপ। ২০১৬ সালে তৈরি জাহাজটি লম্বায় ১৯০ মিটার।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল এসআর শিপিংয়ের জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। নিকেলভর্তি ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রেখেছিল। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের মাথায় জলদস্যুদের কবল থেকে উদ্ধার করা হয় তাদের। ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। পর দিন ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। মুক্তিপণ বাবদ জলদস্যুদের অনেক টাকা দিতে হয়েছিলে বলে জানায় কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ।