ঋদি হক, ঢাকা: ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টি এখন আর কোনো ইস্যু নয়। এটির সমাধান হয়ে গিয়েছে। জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বুধবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
‘রোহিঙ্গা সংকট: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাড়াদান ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন শাহরিয়ার আলম। বিদেশ প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ বিভিন্ন বন্ধুরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ভাসানচর পরিদর্শন করে সেখানে কোনো অসঙ্গতি পাননি। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপুঞ্জের কিছু ছোটোখাটো সুপারিশ রয়েছে। প্রতিমন্ত্রী আশা করেন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ক্ষেত্রে যেমন সবাই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, ভাসানচরেও তা অব্যাহত থাকবে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা যেমন অনেক বন্ধুরাষ্ট্রের প্রতি সন্তুষ্ট, তেমনি আবার অনেক বন্ধুরাষ্ট্রের অবদান ও অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছি না। আবার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো ভূমিকা না রেখে এখানে কী ভাবে তাদের রেখে দেওয়া যায়, সে-ই চেষ্টা ছিল অনেকের। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং।’
শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ অন্য রাষ্ট্রের যতটুকু করার আছে তারা এখনও তা করেনি। তাদের বিষয়ে কোনো উপসংহার টানার মতো অবস্থা এখনও আসেনি।
অন্য বক্তারা যা বললেন-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, চিন ও ভারত তাদের সীমান্ত, বাণিজ্য, ভূ-রাজনৈতিক ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রেখে মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে চলেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত, চিন, জাপানের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের নাগরিক সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যায় ভারতের নাগরিক সমাজ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা সরব হলে ভারত সরকার ভূমিকা নিতে বাধ্য হবে। একই ভাবে জাপানের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, অনেক দেশ রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করে না। তারা বলে স্থানচ্যুত। বাংলাদেশকে এ বিষয়ে ভূমিকা নিতে হবে।
মায়ানমার-সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বাড়ার আশংকা রয়েছে বলে উল্লেখ করে বিদেশ মন্ত্রকের মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই সংকট সমাধানে সবার সমান দায়িত্ব রয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আসিয়ানের দেশগুলো রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে অতীতে জোরালো ভূমিকা নেয়নি। আসন্ন আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনেও তারা এই সংকট নিয়ে ভূমিকা রাখবে সেটা প্রত্যাশা করা যায় না। মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় ভাবে এই সংকট সমাধানে জোর দেন সাখাওয়াত হোসেন।
সেমিনার সঞ্চালনা করেন বিআইআইএসএস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এমদাদ উল বারী। এতে আরও বক্তব্য রাখেন সাবকে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির ও মুনশি ফয়েজ আহমদ প্রমুখ।