- নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরাও সন্দেহ করছেন
- প্রতি ঘণ্টার তথ্য চাইছে ইইউ, আইআরআই ও এনডিআই
- ভোটের অবাস্তব হিসাব মেলাতে গলদঘর্ম নির্বাচন কমিশন
বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: গত ৭ জানুয়ারি ছিলো বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন। ডামি নির্বাচন নামে খ্যাত এই নির্বাচন দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিলো বলে সেদিন ভোট কেন্দ্রে উল্লেখ করার মত ভোটার ছিলো না। রাস্তা ঘাটেও লোক চলাচল ছিল না। ভোটের দিন ভোট কেন্দ্র ঘিরে অস্থায়ী দোকানপাট বসার যে চলন আছে, সেরকম কোন দোকানপাট বসেনি। এক ডালি ভাজা বাদাম নিয়েও কাউকে হাক ডাক দিতে দেখা যায়নি। বরং অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে কুকুর ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।
সারা দিনই ভোটকেন্দ্রে ভোটারশূন্য নির্বাচনের পরদিন ৮ জানুয়ারি সোমবার নির্বাচন কমিশন ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য দিয়েছে। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের এ তথ্য বিশ্বাস করছে না বাংলাদেশের কোনো মানুষ। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরাও সন্দেহ করছে। এমনকি আন্তর্জাতিক মহলেও এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ভোট নিয়ে বিবিসির বিশেষ প্রতিবেদনে দাবি- ভোটের এ হার নির্বাচন বিশ্লেষকদের অবাক করেছে। ভারতের একজন বিশ্লেষক দাবি করেছেন, ভোট প্রদানের হার ১০ শতাংশের বেশি নয়। ভারতের জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক এবং দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক প্রফেসর শ্রীরাধা দত্ত বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার বলছে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে, আন্তর্জাতিক সূত্র ও সাংবাদিকেরা বলছেন ২৭ শতাংশ। কিন্তু আওয়ামী লীগপন্থী আমাদের পরিচিত অনেকে বলেছেন, ভোট পড়েছে ২০ শতাংশের নিচে। নির্বাচনের দিন ফাঁকা রাস্তা দেখা গেছে, হরতালের মতো। আমার চেনাজানাদের মধ্যে খুব কম মানুষই ভোট দিয়েছেন, ১০ শতাংশের বেশি তো ভোটই দেয়নি। সরকারি হিসাব যাই হোক নির্বাচনে ১০/ ১২ শতাংশ লোক ভোট দিয়েছেন। কিন্তু এ সংখ্যা অলৌকিকভাবে বেড়ে যায়। বেড়ে যাওয়ার কাহিনী হাজারো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এর আগে দেখে নিন নির্বাচনের দিন রাত ৯ টা ৩মিনিটে ভোট প্রদানের হার কত ছিলো। ওই সময়ে কমিশনের ড্যাশবোর্ডে ভোট প্রদানের হার দেখানো হয় ঢাকা বিভাগে ২৬ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৮ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৩২ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ২৩ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩০ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগে ২৩ শতাংশ। টাইম স্ট্যাম্পসহ নির্বাচন কমিশনের লাইভ ভোট মনিটরের হিসাব অনুযায়ী সারা দেশে মোট ভোট প্রদানের হার ছিল ২৮ শতাংশ।
একারণে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া এই ভোটের হারকে দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। কেউ কেউ এটাকে বিস্ময়কর বলে উল্লেখ করছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার নিয়ে দেশ বিদেশের মানুষ জোর সন্দেহ প্রকাশ করছেন, নানান প্রশ্ন করছেন। ভোট পড়ার হার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)। গত ১৫ জানুয়ারি সোমবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে তারা প্রতি ঘণ্টায় ভোট পড়ার হারের বিষয়ে ইসির কাছে তথ্য চেয়েছেন। শুধু তাই না, ইইউ, আইআরআই ও এনডিআইয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ইসি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বৈঠকে ইইউ ও মার্কিন দুই সংস্থা নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ও ইসি’র ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ অ্যাপসের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছেন। ভোটের শেষ মুহূর্তে হঠাৎ হার বেড়ে যাওয়া নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন। এ জন্য তারা প্রতি ঘণ্টায় ভোট পড়ার তথ্য জানতে চেয়েছেন। প্রতি ঘণ্টায় ক’জন ডেটা ইনপুট দিয়েছে, কতোজন দিতে পারেনি-এই তথ্যও চেয়েছেন। কমিশনের পক্ষ থেকে অ্যাপসের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। কিন্তু তারা কপি চেয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভোটের হার নিয়ে খবর দেখে তারা মনে করছেন, ভোটে অনিয়ম হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, ইসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ভোটের দিন অনেকেই নির্ধারিত সময়ে ডেটা এন্ট্রি দিতে পারেনি। তিনটি জেলায় মোটেই দিতে পারেনি। পরে তারা প্রতি ঘণ্টায় অ্যাপসে কতোজন এন্ট্রি দিয়েছে পুরো স্টেটমেন্ট চেয়েছেন।
একদিকে জনমনে জোর সন্দেহ ও নানান প্রশ্ন, অন্যদিকে ভোট পড়ার হার নিয়ে ইইউ, আইআরআই ও এনডিআইয়ের প্রশ্ন। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে বশংবদ নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা এখন হিমশিম খাচ্ছেন। ভোটের অবাস্তব হিসাব মেলাতে গলদঘর্ম হচ্ছেন।
ভোট গ্রহণ চলার সময় গত রোববার তিন দফা ভোটের শতকরা হার ঘোষণা করেছিল ইসি। সেই হিসাব অনুযায়ী, দুপুর ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত গড়ে সাড়ে ১৮ শতাংশ ভোট পড়ে। এরপর বেলা তিনটা পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানিয়েছিল ইসি। তখন বলা হয়েছে, সব জায়গার হিসাব পাওয়া যায়নি। ভোটের হারে কিছু হেরফের হতে পারে। বিকেল চারটায় ভোট শেষ হওয়ার ঘণ্টা দেড়েক পর প্রেস ব্রিফিংয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল শুরুতে বলেন, ভোট পড়েছে ২৮ শতাংশ। পরে তাঁকে পাশ থেকে একজন সংশোধন করে বলেন, সংখ্যাটি ৪০ শতাংশ হবে। সিইসি তখন ভোটের হার ৪০ শতাংশ হতে পারে বলে জানান। তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত হিসাব নয়। বাড়তে পারে, না–ও পারে। এই হিসাব অনুযায়ী ভোট গ্রহণের শেষ এক ঘণ্টাতেই ১৩ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। তবে সর্বশেষ ভোটের পরদিন ইসি প্রায় ৪১ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানায়। এই হার অনুযায়ী ভোট গ্রহণের শেষ এক ঘণ্টাতেই ভোট পড়েছে ১৪ শতাংশের বেশি। সারা দিনের ভোটের চিত্রের সঙ্গে ভোটের হার মিলছে না। সংবাদ সম্মেলন চলাকালে কমিশন সচিব সিইসিকে মৌখিকভাবে জানালেন, স্যার সংখ্যাটা ৪০ শতাংশ হবে। কোনো কিছু যাচাই না করে এবং লিখিত কোনো হিসাব ছাড়াই সিইসি আউয়াল সঙ্গে সঙ্গে বললেন, সংখ্যাটা ৪০ও হতে পারে, এর কমবেশিও হতে পারে। এর মানে গত এক ঘণ্টায় এক-তৃতীয়াংশ ভোট পড়েছে! কি অবিশ্বাস্য! এ নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয়েছে। শেষ সময়ে ভোটের হার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদেরই অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচন বিশ্লেষক ড. আব্দুল আলীম বিবিসি বাংলাকে জানান, বিকাল ৩টার দিকে নির্বাচন কমিশন যে ভোটের হার দেখিয়েছে সেখানে ভোটের হার ছিলো ২৭ দশমিক ১৫ ভাগ। ৩টা থেকে ৪টা, এক ঘণ্টায় টার্ন আউট বেড়েছে ১৪ শতাংশের মতো। আমরা যদি অন্য বছরে নির্বাচনের সাথে তুলনা করি এটা অস্বাভাবিক মনে হয়। বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে দেখা গেছে সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট প্রদানের হার সবচেয়ে বেশি থাকে। তারপর এ হার কমতে থাকে। বিশেষ করে বিকেল ৩টার পর হাতেগোনা ভোটার ভোট দিতে আসেন । নির্বাচন কমিশনের দেয়া হিসাবেও দেখা গেছে দুপুর ১২টার পর থেকে ৩টা পর্যন্ত ঘণ্টায় ভোট প্রদানের হার ছিলো ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ । কিন্তু শুধু শেষ এক ঘণ্টায় ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। অর্থাৎ ১ কোটি ৭৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৮ জন ভোটার ভোট শেষ হওয়ার পূর্বের এক ঘণ্টায় তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনোই দেখা যায়নি।
এদিকে ভোটের হার বৃদ্ধি নিয়ে অদ্ভুত এবং অবাস্তব ব্যাখ্যা দিয়েছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন দুপুর ২টায় তিনি ঘুমে ছিলেন। তাঁকে ডেকে ঘুম থেকে তোলা হয়। তারপর তিনি সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে ২৮ শতাংশ ভোটের কথা বলেছেন। তারপর কেউ একজন তাকে সংশোধন করে দেয়। তারপর তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি ৪০ শতাংশের কথা বলেছেন। সচেতন জনগণ বলছেন, ‘দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে (দুপুর ২ টায় ) তিনি ঘুমিয়েছিলেন! এরকম একটা ঘুমিয়ে থাকা লোকের হাতে আমাদের জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব পড়েছে! তিনি ঘুমিয়েছিলেন কিনা আমরা জানি না! থাকলে কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলেন?’ আসলে ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় ২৮ শতাংশ কিভাবে ৪০ শতাংশ হয়ে গেল তার কোনো উপযুক্ত ব্যাখ্যা তাঁর কাছে ছিলো না। সে জন্য তিনি ঘুমের ওপর দায় চাপিয়ে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন দুপুর ২ টায় ঘুমিয়েছিলেন এবং তাঁকে ডেকে তোলা হয়েছে। সিইসি সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন ভোট গ্রহণ শেষের দেড় ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৫টায়। তিনি দুপুর ২টা থেকে কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলেন তা তিনি বলেননি। কিন্তু এটি ধরে নেয়া খুবই স্বাভাবিক যে ঘুম থেকে উঠে ভোট গ্রহণের যাবতীয় তথ্য নিয়েই তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন এবং ওই তথ্যের ভিত্তিতেই তিনি ২৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেন। এ দাবির সঙ্গে সঙ্গেই সচিব জানান, ভোট প্রদানের হার ৪০ শতাংশ। সচিবের মৌখিক কথার ভিত্তিতেই তিনি সংশোধন করে বলেন, ভোট প্রদানের হার ৪০ শতাংশ। ঘটনাটি ঘটে সিইসির সংবাদ সম্মেলনে ঢোকার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে। এই পাঁচ মিনিটে কী এমন ঘটলো যে ভোট প্রদানের হার ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৭৬ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৮ জন ভোটার বেড়ে গেল!
যদিও রাত ৯টা ৩মিনিট পর্যন্ত লাইভ মনিটরের ড্যাশবোর্ডে ভোট প্রদানের হার ২৮ শতাংশই ছিলো। ড্যাশবোর্ডের এ তথ্য সাজানো হয়েছিলো সারা দেশের রিটার্নিং অফিসারের তথ্যের ভিত্তিতেই। ভোট গ্রহণের শেষে বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যেই রিটার্নি অফিসাররা এ তথ্যে কমিশনে পাঠিয়েছিলেন এবং এতে বিভাগ ওয়ারি তথ্য ছিলো ।
তবে সরকারি হিসাবে ২৮ শতাংশ হোক আর ৪০ শতাংশই হোক দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকদের ধারণা ভোট প্রদানের হার ১০ শতাংশের বেশি নয়। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ যে ভোট দিতে যায়নি এ তথ্য ফ্রি স্টাইলে ব্যালটে সিল মারার যে হাজার হাজার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা একটু দেখলেই পরিস্কার হয়ে যায়। কাজেই আইনের দৃষ্টিতে এটি কোন নির্বাচনই হয়নি। ১০ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে, ৯০ শতাংশ মানুষ ভোট বর্জন করেছে। সরকার নির্বাচন কমিশনকে পোষা একটা সংগঠনের মত ব্যবহার করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে ওই পরাজিত আওয়ামী লীগ নেতারা, স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও বলছে কিভাবে ভোট কারচুপি হয়েছে।
ময়মনসিংহ-১০ আসনে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী কায়সার আহাম্মদ বলেছেন, ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল ভোটারশূন্য। নৌকার লোকজন কেন্দ্র দখল করে অনবরত সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরেছে। আমরা এই ভোট বাতিল করে পুনরায় সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানাই।
গাইবান্ধা-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, ভোটে কারচুপি হয়েছে। শতকরা ৯০ ভাগ কেন্দ্রে আমি ২-৩ জনের বেশি ভোটার দেখিনি। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নগণ্য ভোটার উপস্থিতি ছিল। কিন্তু দিন শেষে কাস্টিং যা দেখলাম, আমার মনে হয়েছে, এখানে ভোট কারচুপি হয়েছে।
ফরিদপুর-১ আসনে জালভোটসহ অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট পুনরায় গণনা ও অর্ধশতাধিক ভোটকেন্দ্রে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলন। অনিয়মের ভিডিও ও স্থিরচিত্রসহ আসনটির অর্ধশতাধিক কেন্দ্রে নানা অনিয়মের তথ্য-প্রমাণাদি তুলে ধরে সিইসি’র কাছে তিনি লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া–৩ আসনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় একজন নেতা ফিরোজুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। তিনি ইসির ভোটের হার নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তাঁর আসনে বেলা তিনটা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য পেয়েছিলেন। কিন্তু বিকেল চারটায় যখন ভোট শেষ হয়, তখন তিনি জানতে পারেন, তাঁর আসনে প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই ভোটের হার নিয়ে তাঁর প্রশ্ন রয়েছে।
সংসদে ‘বিদ্যুৎ বিক্রি’ করা এক গানের শিল্পী (মমতাজ) বলেছেন, মৃত মানুষ বিদেশে আছে তাদের ভোটও দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ও দলটির প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বলেছেন, নির্বাচনে অলৌকিক শক্তি কাজ করায় ভোটে কারচুপি হয়েছে। একচেটিয়া ভোট ডাকাতি হয়েছে। বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ধীরেন্দ দেবনাথ শম্ভু বলেছেন ভোটের ফল একহাতে তৈরি করা হয়েছে। একজন বলেছেন, গণভবন থেকে ফলাফল এসেছে। পরাজিত কুইন্সপার্টির এক নেতা বলেছেন, শেখ হাসিনা তামাশার নাটক করেছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার যে ২৬টি আসন জাতীয় পার্টি (জাপা) পেয়েছিল, এর মধ্যে ময়মনসিংহ–৮ আসনে জাপার প্রার্থী ছিলেন ফখরুল ইমাম। তিনি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। তিনি বলেন, তাঁর আসনে শেষ এক ঘণ্টায় ভোটের হার অনেক ব্যবধানে বাড়িয়ে ২৭ শতাংশ দেখানো হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। সারা দিনে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের অভাব বা ভোটারশূন্য অবস্থার চিত্রের সঙ্গে ভোটের হারকে মেলাতে পারছেন না ফখরুল ইমাম।