ইম্ফল, ১৫ জুলাই : মণিপুরে সেনাবাহিনী, রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ১৬ জন কট্টরপন্থী জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি, অভিযান চলাকালীন উদ্ধার হয়েছে ৩৫টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, ১১টি আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস), প্রচুর গুলি ও যুদ্ধসামগ্রী। এই অভিযানগুলি মণিপুরের পাঁচটি জেলায় চালানো হয় বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা মুখপাত্র।
গত ২৪ ঘণ্টায় মণিপুর পুলিশের তরফে বিষ্ণুপুর, থৌবল ও ইম্ফল পশ্চিম জেলা থেকে আরও ছয় জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতরা কাংলেই ইয়াওল কান্না লুপ (কেওয়াইকেএল), কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টি (কেসিপি) ও পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র সদস্য।
প্রতিরক্ষা মুখপাত্র জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মণিপুরের কাংপোকপি, বিষ্ণুপুর, তেঙ্গনৌপাল, ইম্ফল পূর্ব ও পশ্চিম জেলায় একাধিক সমন্বিত অভিযান চালানো হয়। কাংপোকপি জেলার পাহাড়ি অঞ্চল থেকে সবচেয়ে বেশি ১৮টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তাতে রয়েছে ৫.৫৬ মিমি ইনসাস রাইফেল, পয়েন্ট ৩০৩ রাইফেল, বোল্ট অ্যাকশন রাইফেল, সিঙ্গল ব্যারেল রাইফেল, পুল মেক রাইফেল এবং ছয়টি ইম্প্রোভাইজড মর্টার।
অভিযানে সেনাবাহিনী বিস্ফোরক শনাক্তকরণে বিশেষ প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করেছে। সেনাবাহিনী ও অসম রাইফেলসের ‘স্পিয়ার কর্পস’-এর নেতৃত্বে এই অভিযানগুলি চালানো হয়েছে। অভিযানে মণিপুর পুলিশ, সিআরপিএফ, বিএসএফ এবং আইটিবিপির সদস্যরাও অংশগ্রহণ করেছেন। অন্য জেলাগুলির অভিযানে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একে-৫৬ রাইফেল, একে-৪৭, পয়েন্ট ৩০৩ লাইট মেশিনগান, কারবাইন, ডবল ব্যারেল রাইফেল ও একাধিক পিস্তল।
গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের কাছ থেকে পিস্তল, মোবাইল ফোন, আধার কার্ড, দুই-চাকার গাড়ি ও অন্যান্য নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে। ধৃতদের ও উদ্ধারকৃত অস্ত্র-গুলি-বিস্ফোরক মণিপুর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা মুখপাত্র জানান, রাজ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় এই ধরনের সমন্বিত অভিযান ভবিষ্যতেও চলবে।
এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত জঙ্গিরা সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার ও সরকারি কর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ে যুক্ত ছিল। তাদের সংগঠনে নতুন সদস্য নিয়োগেও সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাদের। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এখনো তল্লাশি অভিযান ও এলাকা দখল বজায় রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
পাশাপাশি, পুলিশ নাগরিকদের উদ্দেশে জানিয়েছে, কেউ যেন গুজব ও ভুয়ো ভিডিওতে বিশ্বাস না করেন। যে কোনও অডিও বা ভিডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করতে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে ভুয়ো পোস্ট ছড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে। এর ফলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জনগণকে লুন্ঠিত অস্ত্র ও বিস্ফোরক অবিলম্বে নিকটবর্তী থানায় অথবা নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।