- ঢাকার পাড়ায় পাড়ায় নজরদারি।
- সম্রাটের নেতৃত্বে প্রস্তুত ক্যাডার বাহিনী।
- পুলিশকে সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার নির্দেশ।
- তল্লাশি-আটকের ক্ষমতা পাচ্ছে আনসার।
- আ.লীগ কর্মীদের লগি-বৈঠা আনার নির্দেশ।
- কূটনীতিক পাড়ায় “জঙ্গি আতঙ্কের” পরিকল্পনা।
নিউজ ডেস্ক, লণ্ডন: ঢাকায় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ব্যাপক প্রস্তুতি এবং জামায়াতসহ অন্যান্য দলেরও একই দিনে সমাবেশ করার ঘোষণায় ২৮ অক্টোবর এবং এর পরবর্তী সাত দিনকে অত্যন্ত ‘স্পর্শকাতর’ সময় হিসেবে উল্লেখ করে রণসজ্জায় নেমেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ওই সময় রাজধানী ঢাকার রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনে পুলিশকে ‘আক্রমণাত্মক’ হওয়ার ও সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দলটি। দলের নীতিনির্ধারণী একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীও ২৮ অক্টোবর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। ইসলামী আন্দোলনও আগামী ৩ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বলে জানিয়েছে। আবার ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ থেকেই বিএনপি তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দিতে পারে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ২৮ অক্টোবর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে। এই কর্মসূচি ঘিরে গত মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা হয়। এতে কেন্দ্রীয় নেতারা সামনের দিনগুলোয় ‘আক্রমণাত্মক’ হওয়ার ও ‘রণসজ্জায়’ নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে ১০-১২ লাখ লোক জমায়েতের বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন। এবং সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীদের খালি হাতে না আসারও নির্দেশ দিয়েছেন। সবাই যেন আড়াই থেকে তিন হাত লম্বা লাঠি বা লগি, বৈঠা হাতে আসেন, সেই নির্দেশনাও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দিয়েছেন। বলেছেন, শক্তি দেখানো ছাড়া আওয়ামী লীগের উপায় নেই। অর্থাৎ সপ্তাহজুড়ে রণসজ্জায় আক্রমণাত্মক ভাব ধরে রাখবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
ঢাকার পাড়ায় পাড়ায় নজরদারি
ঢাকায় অন্তত ৮০ থেকে ১০০ পয়েন্টে হেলমেট বাহিনী ও এলাকার সন্ত্রাসীদের তুল বসিয়ে বসানো হয়েছে ২৫ অক্টোবর রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মিরপুরের কয়েকটি স্থান পান্থপথ ও মাহমুদপুরের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ দাঙ্গাবাজ কর্মীদের পালাক্রমে পাহারা দিতে দেখা গেছে এসব এলাকায় বিরোধী দলের কর্মীরাও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে তারা গোপনে এসব পাহারার ভিডিও করে বিভিন্ন মাধ্যমে শেয়ার করছে অন্যদের সচেতন করার জন্য।
সম্রাটের নেতৃত্বে তৎপর ক্যাডার বাহিনী
ক্যাসিনো সম্রাট বলে পরিচিত সম্রাটকে মুক্তি দিয়ে দলকে সংঘটিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাকরাইলের তার দখলকৃত অফিস তাকে ফেরত দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার যুবলীগ ক্যাডারকে সমবেত করেছেন সম্রাট। প্রতিদিন সেখানে কার্যক্রম ও পরিকল্পনা করছেন। তবে পুলিশের সহযোগিতা কিভাবে পাওয়া যাবে সেটা নিয়ে কিছুটা মতবিরোধ আছে বলে জানা গেছে। সম্রাট দলে তার পদবী ফেরত পেতে চাইলেও জনরোষের ভয়ে এখনই তাকে পদ ফেরত দেয়া হচ্ছে না। তবে পুলিশ ও প্রশাসনের কৌশলগত সমর্থন নিশ্চিত করা হয়েছে তার পরিকল্পনার জন্য।
পুলিশকে সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার নির্দেশ
আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ কঠোর হতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান চলছে। ডিএমপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ-মহাসমাবেশে বাধা সৃষ্টির জন্য এক সপ্তাহ আগে থেকে পুলিশ গণগ্রেফতার শুরু করেছে। এলাকাভিত্তিক তালিকা ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে তারা। এমনকি হোটেলে থাকা নেতাকর্মীদেরও হয়রানি করছে। প্রতিদিনই শহরের কোনো না কোনো প্রান্তে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অথবা হয়রানি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশই নিজ বাসায় অবস্থান করতে পারছেন না। আটক করে পুরোনো মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে।
তল্লাশি-আটকের ক্ষমতা পাচ্ছে আনসার
আটক, দেহ তল্লাশি ও মালামাল জব্দের ক্ষমতা পাচ্ছে আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। পাশাপাশি বাহিনীতে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হচ্ছে। এমন বিধান রেখে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল ২০২৩’ সোমবার (২৩ অক্টোবর) সংসদে উঠেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিলটি উত্থাপন করলে তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সামনে নির্বাচন। এতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করতে হলে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যদেরও মোতায়েন করতে হবে। নির্বাচনের সময় যে পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য প্রয়োজন পুলিশ বাহিনীতে এত পরিমাণ নেই। এ পর্যন্ত ৬ লাখ আনসার নিয়োগ করতে হয়েছে। নির্বাচনের সময় সমপরিমাণ আনসার বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তাদেরকে আটক, দেহ তল্লাশি ও মালামাল জব্দের ক্ষমতা দিতে হবে।’
আওয়ামী লীগ কর্মীদের লগি-বৈঠা আনার নির্দেশ
মহাসমাবেশের দিন রাজপথ দখলে রাখতে এবং অলিগলি পাহারা দিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলেছেন, ২৬ ও ২৭ অক্টোবর রাজধানীর অলিগলি পাহারা দিতে হবে। প্রয়োজনে নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে। অতীতে ২৮ অক্টোবর (২০০৬ সালে) যেমন আমরা লগি-বৈঠা নিয়ে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছিলাম, তেমনি আবারও এই ২৮ অক্টোবর আমরা গণতন্ত্রকে রক্ষা করবো। ওই দিন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে নগর আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে ব্যানার-ফেস্টুনের সঙ্গে মোটা মোটা লাঠি নিয়ে আসতে হবে। আক্রমণ হলে পাল্টা আক্রমণ হবে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। কেন ছাড়বো? কাদের ছাড়বো? এরা (বিএনপি) ক্ষমতা গেলে বাংলাদেশ গিলে খাবে। এরা ক্ষমতা গেলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গিলে খাবে। এরা ক্ষমতা গেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা গিলে খাবে। তাদের অপশক্তিকে একসঙ্গে রুখতে হবে। ২৮ তারিখে নৌকার পেছনে মোটা মোটা লাঠি নিয়ে যেতে হবে। ফেস্টুনে মোটা মোটা লাঠি থাকবে। আমাদের কর্মীরা সব জানে বিএনপির লোকজন কোথায় থাকে, কোন মেসে থাকে, কোন হোটেলে থাকে- সব জানা আছে আমাদের।
তফসিল নিয়ে অস্থিরতায় নির্বাচন কমিশন
দফায় দফায় পিছিয়ে পড়ছে তফসিল ঘোষণার দিনক্ষণ। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বলা হয়েছিল ঘোষণা করা হবে। পরে বলা হয়- তিন নভেম্বর, এখন আট অথবা ১৫ নভেম্বরের কথাও বলা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন বক্তব্যে এসব অস্থিরতার প্রকাশ পাওয়া গেছে। সিইসি বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। চরম রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে কমিশনের অস্থিরতার শেষ কোথায় তা দেখার বিষয়।
কূটনীতিক পাড়ায় “জঙ্গি আতঙ্কের” পরিকল্পনা
ঢাকায় নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, জঙ্গি আতঙ্কের সেই পুরনো কার্ড নিয়েও কাজ করছে সরকারের অভ্যন্তরে সক্রিয় একটি বিশেষ চক্র। তারা বারিধারা ও গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় জঙ্গি হামলার নাটক সাজিয়ে পশ্চিমা কূটনীতিকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে জঙ্গি আতঙ্ক মঞ্চায়ন করতে পারে। এক্ষেত্রে আইএসআই কিংবা স্থানীয় বিভিন্ন নামে যেসব সংগঠন গোয়েন্দারা তৈরি করেছে তাদের নামে ওই হামলা চালানো হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের শেষ অবধি যেকোনো সময় এমন ঘটনার পরিকল্পনা চক্রটির হাতে রয়েছে বলে জানা গেছে।