বাংলা মায়ের সন্তান, বাংলার সন্তান, আমাদের সন্তান সূর্য সেন। বাংলা ঘরে জ্বলন্ত এক স্ফুলিঙ্গের জন্ম হয় আজকের দিন তথা ২২ মার্চে। সেই সন্তান সূর্য সেন। সূর্যের মতো জ্বলন্ত। বাঙালি বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের আজ জন্ম দিবস।
সূর্য সেন বা সূর্যকুমার সেন যিনি মাস্টারদা নামেই সমধিক পরিচিত, তাঁর ডাকনাম ছিল কালু, ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব সূর্য সেন। তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় খুবই অস্বচ্ছল একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর তেজে আলোকিত হয়ে ওঠে সব।
সূর্য সেনের বাহিনী কয়েকদিনের জন্যে ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। বাংলা মায়ের ঘরে এক আগুনের জন্ম হয়েছিল বটে। সূর্য সেনের সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি করে আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়। আর তাঁর স্মরণে কলকাতার বাঁশদ্রোণী মেট্রো স্টেশনটির নামকরণ করা হয়েছে ‘মাস্টারদা সূর্য সেন মেট্রো স্টেশন’।
ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনার জন্য তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। বিপ্লবী বীর মাস্টারদা সূর্যসেন জন্মেছিলেন ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ। মাস্টারদা তিনি যিনি প্রথম বুঝেছিলেন দেশের মেয়েরাও স্বাধীনতা সংগ্রামের সশস্ত্র বিপ্লবে মুখ্য ভূমিকা নিতে পারে। মাস্টারদাকে প্রীতিলতা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘মেয়েদের আপনারা দলে নিতে চাইতেন না কেন দাদা? তাঁরা কি দেশসেবার যোগ্য নন?’’ মাস্টারদা জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘না, দেশসেবার কঠিন কর্তব্য থেকে মেয়েদের বঞ্চিত করা চলে না। দেশসেবায় নরনারী ভেদ নেই।’
সূর্য সেনের প্রথম স্কুল ছিল দয়াময়ী উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরে তিনি নোয়াপাড়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি ন্যাশনাল হাই স্কুলে ভর্তি হন। সূর্য সেন ১৯১২ সালে চট্টগ্রামের নন্দনকাননে অবস্থিত হরিশদত্তের ন্যাশনাল স্কুল থেকে প্রবেশিকা (এন্ট্রান্স) পাশ করে চট্টগ্রাম কলেজে এফ. এ.-তে ভর্তি হন। সে সময় আই.এ বা বর্তমানের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার পরিবর্তে ফার্স্ট আর্টস বা এফ. এ. পরীক্ষার নিয়ম ছিল। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফ. এ. পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে পাশ করে তিনি একই কলেজে বি.এ-তে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় বর্ষের কোনো এক সাময়িক পরীক্ষায় ভুলক্রমে টেবিলে পাঠ্যবই রাখার জন্যে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বিতাড়িত হন। ফলে, তাকে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে বি.এ পড়তে যেতে হয়।
মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে ‘চট্টগ্রাম স্বাধীন জাতীয় সরকার’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করা হয়। সেটা হতে পারে তিন/চার দিনের জন্য, কিন্তু মাস্টারদারা কঠিন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, মাস্টারদার বিস্ময়ে থমকে গিয়েছিল ভারতবর্ষ। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল মাস্টারদার। ক্ষত-বিক্ষত সোনালী স্বপ্নের সেই পাথর বুকে নিয়ে বঙ্গোপসাগরের তলায় সমাজে সূর্যোদয় করে ঘুমিয়ে আছেন সূর্য সেন। সে প্রস্তরের উপর গড়ে উঠেছে স্বাধীন ভারতের ভিত্তি। ভারতবর্ষ সূর্যের এক নাম। মাস্টারদা সূর্য সেন তোমায় প্রণাম।