ভারতবর্ষ
আর কত কাল ঘুরব এই মুসলমানের দেশে,
এই হিন্দুর দেশে।
নদীর সঙ্গে এসেছিলাম-
মায়ের সঙ্গে এসেছিলাম এখানে।
কোত্থেকে এসেছিলাম মনে নেই কিছু।
শুধু জানি, নদীতীরে মায়ের সঙ্গে থাকতাম।
শুধু জানি, কারা যেন একদিন নদীতে বাঁধ দিল–
আর ধীরে ধীরে মরে গেল নদী,
আমার মা মরে গেল।
আর কত কাল ঘুরব এই মুসলমানের দেশে,
এই হিন্দুর দেশে।
আমার কাঁধে মায়ের লাশ; নদীর লাশ।
প্রতিশিল্প
উপরে উঠার সিঁড়ি পেয়ে গেছি ওগো দুলাভাই–
মড়ক লেগেছে দেশে, সারা দুনিয়ায়,
বুবুজান বানায় পিপিই, আমি কফিন বানাই–
এইবার লালে লাল হয়ে যাব মৃত্যু-ব্যবসায়।
সব মরে সাফ হয়ে যাক, এই মওকা–
আমাদের চাই টাকা, টাকা আর টাকা।
বেকুবেরা ফান্দে পড়ে কান্দে–
শেষে এই মৃত্যুপুরী ছেড়ে মোরা চলে যাব চান্দে।
ইউক্যালিপটাসের গান
উদ্যানে আর আসে না তো কেউ, হায়–
কই গেল সব; কই তৃণভোজী কবি!
আমার পায়ের কাছে বসে শুনাতো সে
গহীন-নিগূঢ় গান-শ্লোক পৃথিবীর।
অতি উঁচু আমি; তবু তার প্রেমে পড়ি।
আমার মসৃণ ঊরু চুমা পেত তার,
আমার শেকড় কেঁপে কেঁপে ভিজে যেত।
বসন্ত যায়; সে কেন আসে না আর।
মৃত্যু
(আবুল হাসানকে স্মরণে রেখে)
মৃত্যু আমাকে নেবে
কবর আমাকে নেবে না।
স্বজন পালাবে–
রাস্তায় পড়ে থাকবে লাশ,
জঙ্গলে পড়ে থাকবে লাশ,
নদীতে ভাসবে লাশ,
রাষ্ট্র আমাকে গুনবে না।
শুধু প্রকৃতি আমাকে নেবে–
হ্যাঁ, শুধু প্রকৃতি…।
মামলা
বসন্ত আইছে
ডাকতেছে কোকিল,
সমন আইছে
ডাকতেছে উকিল।
বটগাছ
পরিত্যক্ত প্রাচীন মন্দির।
প্রতিমার ভাঙাচোরা মুখ–
যোনি ফেটে বেরিয়ে এসেছে বটগাছ।
মাকে পূজা দিই, মাথা ঠেকিয়ে কুর্নিশ করি।
বটগাছ, মায়ের পেটের ভাই আমার–
পাতায় পাতায় আঁকা পিতামহ, পিতার মুখটি।
থাকি বঙ্গে
স্ত্রীর নাম হাঁড়ি।
ছেলের নামটি অন্ন।
মেয়ে, জল।
আমি অগ্নি।
ছাই বেচে খাই।
থাকি বঙ্গে–
বাংলায় কবিতা লিখি,
আর গান গাই–
দোতারা সঙ্গে।