এক মা ও ছেলের ক্রিকেট খেলা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠেছে। মা তাঁর নিজস্ব সংস্কৃতিকে হিজাবকে ধারন করেই ছেলের সাথে খেলেছেন। এতেই তথাকথিত প্রগতিশীল যারা নিজেদের ভারতীয় ভাবতে সাচ্ছন্দবোধ করেন, তাদের গায়ে যেন জ্বালা ধরে গেছে। সাংবাদিক নামধারী ভারতীয় এজেন্টরাও বসে নেই। এই ছবিতে ইন্ডিয়ান উলুঙ্গ নৃত্যের প্রতিচ্ছবি না দেখতে পেয়ে বড্ড নাখোশ হয়েছেন অনেকেই। তাদের ফেইসবুক স্ট্যাটাসে ফুটে উঠেছে সেই ব্যাথা ও বেদনার চিত্র। যেমন ভারতপন্থী সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা লিখেছেন-তিনি বাংলা মাকে খুজেন। আফগানিস্তান নয়। অর্থাৎ এখানে তিনি আফগানকে টেনে আনছেন। বসে নেই তথাকথিত ব্লগাররাও। তারা সমালোচনায় টেনে আনছেন ইসলামকে। ওমেন চ্যাপ্টার নামে একটি ব্লগে সুপ্রীতি ধর সম্পাদকের ব্লগ কলামে এনিয়ে বিশাল লেখায় সমাপ্তি দিয়েছেন ইসলামকে কটাক্ষ করে। এ দু’জনের নাম দেয়া হয়েছে উদাহরণ হিসাবে। তাদের মত চিন্তা যারা করেন সকলেরই আপত্তির জায়গাটা হচ্ছে মুসলিম ধর্মীয় সংস্কৃতি। এটাই ফুটে উঠছে এই চবিকে নিয়ে সমালোকদের স্ট্যাটাসে।
৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ মানচিত্রের আসল রুপ যে এ ছবিতে ফুটে উঠেছে সেটা তারা মানতে নারাজ! আসলে এটাই বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষের সংস্কৃতি। এটাই বাংলাদেশের মা ও সন্তানের ভালবাসার চিত্র।
ঝর্ণ আক্তার তাঁর মাদ্রসা পড়ুয়া ছেলেকে ক্রিকেট খেলতে নিয়মিত নিয়ে আসেন পল্টন ময়দানে। ছেলে ক্রিকেট খেলবে। ছেলের আবদার মায়ের কাছে অনেক বড়। তাই মা তাঁর নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধারন করেই ছেলেকে নিয়ে মাঠে আসেন খেলতে। এক সময় মা এবং ছেলে মিলে প্র্যাকটিস করতে দেখা যায়। এই ছবিটি ধারণ করে কেউ একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। এটাই যে বাংলা মায়ের আসল রূপ। বাংলাদেশের আবহমান কালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
আরেক ক্রিকেটার শাহিরয়ার নাফিসের মা নিজের বাংলা মায়ের এ রূপটির কথাই নিজের ফেইসবুস স্ট্যাটাসে লিখেছেন-
সালমা আনজুম লতা, ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীসের মা বলছি —
গত পরশু ফেসবুকে মা ও ছেলের ক্রিকেট অনুশীলনের একটা ছবি দেখলাম। কেউ একজন ছবিগুলো পোস্ট করেছেন।গত দু’দিন যাবৎ সেই ছবি নিয়ে ফেসবুকে তুমুল আলোচনা, সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। পল্টন ময়দানে মা ঝর্ণা আকতার তার এগার বছরের ছেলে ইয়ামিন সিনান কে নিয়ে এসেছিলেন।তখন সময় সকাল আটটা কী নয়টা।মাঠে জন সমাগম ছিলনা বললেই চলে ।কোচ আসতে দেরি হচ্ছিল।তাই মা ব্যাট হাতে নিয়ে ছেলেকে বোলিং প্রাকটিস করাচ্ছিলেন। আমি বলবো ছেলের আবদার রক্ষা করছিলেন।কিংবা ছেলেকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন।এই মা এমন পোষাক পরে ব্যাট হাতে নেয়াতে কঠোর সমালোচনা হচ্ছে। আমি মায়ের পোষাক নিয়ে কিছু বলতে আসিনি।
এই ছবি দেখে আমার চোখে পানি এসে গেছে। এই ছবি আমাকে বারবার একটি কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে , সেটা হলো ‘মাতৃত্ব ‘।মাতৃত্ব এমন একটা জার্নি যার শুরু আছে শেষ নেই।
এই মা সকাল বেলা সংসারের কাজ ফেলে, নানা ব্যস্ততার মধ্যেও ছেলেকে নিয়ে মাঠে হাযির হয়েছেন। হয়তো তার আরো একটি ছোট সন্তান আছে। সেই সন্তানটিকে কারো কাছে রেখে এসেছেন। এই মাকে দেখে আমার নিজের অতীতের কথা মনে পড়ে গেছে। আমিও আমার বড় সন্তান শাহরিয়ার নাফীসের বয়স যখন দশ বছর তখন তাকে নিয়ে মাঠে যাওয়া শুরু করেছিলাম। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করিনি। আমি মনে করেছি নাফীস ওর পছন্দের পথে চলতে চায়। আর সেই পথের কাঁটা গুলো সরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমার। মা মানেই সন্তানের জন্য সবকিছু করার ক্ষমতা রাখেন ।
ফেসবুকে ঝর্ণা আকতার – এর পোষাক নিয়ে নানা রকমের কথা উঠেছে। আমি মনে করি তার পোষাক নিয়ে আলোচনা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক।
আমাদের নবীদের স্ত্রীরা পর্দার ভিতরে থেকে ময়দানে যুদ্ধও করেছেন। ইয়ামিন এর মায়ের পোষাক নিয়ে তাহলে কেন এত কথা ? উনি কী এমন অন্যায় করেছেন ? বরং সন্তানের প্রতি কাতর একজন মা, বিভোর একজন মা তাঁর দায়িত্ব পালন করছিলেন ।
পৃথিবী তে এমন কোন বান্ধব কেউ নেই যে মা’কে হার মানায়। এমন কোন আলো নেই যে মা’কে নিভিয়ে দেয়। এমন কোন ভালবাসা নেই যে তাকে পরাজিত করে।
আসুন আমরা এই ছবিতে তার পোষাক নিয়ে সমালোচনা না করে একজন মা’কেই দেখি। প্রিয় সন্তানের জন্য মায়ের আত্মত্যাগটাকেই দেখি।
© সালমা আনজুম লতা, আমেরিকা থেকে। ১৩/০৯/২০২০।