আরাকান নিউজ ডেস্ক: রাখাইনের বিদ্রোহীগোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ভারতঘেঁষা সীমান্ত শহর পালেতোয়া নিয়ন্ত্রণের দাবি করেছে। জাতিগত বিদ্রোহীরা বলছে, সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে পশ্চিম মিয়ানমারের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করেছে তারা। এই শহর ভারতে যাওয়ার প্রধান রুট।
মিয়ানমারের তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে একটি আরাকান আর্মি (এএ)। গোষ্ঠীটি অক্টোবরে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন করে বড় ধরনের আক্রমণ শুরু করেছিল। ‘এএ’ দাবি করেছে, তারা চিন রাজ্যের পালেতোয়া শহর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। গোষ্ঠীটি তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছে, ‘পুরো পালেতোয়া এলাকায় একটিও সামরিক কাউন্সিল ক্যাম্প বা অস্থায়ী সামরিক ঘাঁটি অবশিষ্ট নেই।’ তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই দাবি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। অঞ্চলটি নিকটবর্তী হলেও দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার। সীমান্ত লাগোয়া পালেতোয়ায় ভারতের অর্থায়নে কোটি কোটি ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। দূরবর্তী অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত করতে সেখানে বিনিয়োগ করেছে ভারত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পালেতোয়ার ঘটনাপ্রবাহের দিকে দিল্লির তীক্ষ্ণ নজর থাকবে। এখানকার কালাদান নদীর বন্দরটিও এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। ফলে, ভারতীয় সীমান্তে যাতায়াতের সড়ক ও নৌ-পরিবহনের নিয়ন্ত্রণও এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে চলে গেল। সেই সাথে সামরিক সরঞ্জামসহ একটা ঘাঁটি পেয়ে যাওয়ায় এখান থেকে রাখাইন রাজ্যে আরো আক্রমণ পরিচালনা করতে পারবে তারা।
বিদ্রোহীদের কাছে রাখাইন রাজ্যের প্রধান শহরগুলোর যেকোনোটি হারানো জান্তার জন্য এক বড় আঘাত হবে। তেমনই একটি শহর কায়াকদো, যেটির মধ্য দিয়ে রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে’র সাথে সারাদেশের সাথে যোগাযোগের মূল সড়ক পথটি গেছে। আরাকান আর্মি যাতে কায়াকদোর দিকে অগ্রসর হতে না পারে সেজন্য বিমান ও হেলিকপ্টার যোগে হামলা অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী।
খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের অনেকগুলো জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আছে। আরাকান আর্মি বা এএ এদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত নতুন কিন্তু সমরাস্ত্রের দিক থেকে সবচেয়ে সুসজ্জিত বাহিনী তাদের। সেনাবাহিনীর সাথে তারা গত কয়েক বছর ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে এবং এই সময়ে রাখাইন রাজ্য ও পার্শ্ববর্তী চিন রাজ্যে নিজেদের অবস্থানকে সংহত করতে সমর্থ হয়েছে। এমনকি সেনাবাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের আগে থেকেই রাখাইনে তাদের ভিত মজবুত ছিল। দুই বছর আগে তারা দাবি করে, রাজ্যটির ৬০ শতাংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু, সেনা অভ্যুত্থানের সময় তারা যুদ্ধবিরতিতে ছিল। আর সেনাবাহিনীও তাদের সাথে সংঘাতে যায়নি যাতে অন্য বিরোধীদের দমন করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে পারে।
গত অক্টোবরে আরাকান আর্মি সামরিক বাহিনী বিরোধী সশস্ত্র জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অংশ হিসেবে ব্যাপকতর লড়াইয়ে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়। তারা ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর দৌরাত্ম্যে চাপে থাকা সেনাবাহিনীর ওপর সিরিজ আক্রমণ শুরু করে। এরপর গত ১১ সপ্তাহে চীনের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন অংশে জোটের হাতে পর্যুদস্ত হয় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সর্বশেষ গত শনিবার দেশের আারেকপ্রান্তে ভারত-ঘেঁষা পালেতোয়া শহরের মিওয়া ঘাঁটির শেষ সেনাচৌকিটি দখলে নেয় এএ। ২০২০ সালে একবার এই ঘাঁটিই ৪২ দিনের টানা লড়াইয়ের পর দখল করতে ব্যর্থ হয় তারা। তবে, আরাকান আর্মির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এখনো স্পষ্ট নয়। তারা নিজেদের অর্জনকে আরো পোক্ত করতে পারে এবং আরো ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পারে। তাদের ঘোষিত লক্ষ্য, ফেডারেল রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে একরকম স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসন।
সাম্প্রতিক কর্মকা- থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে- যেটি সামরিক শাসনের বদলে নির্বাচিত সরকারের অধীনেই সবচেয়ে ভালোভাবে অর্জন করা যাবে বলে তারা এখন মনে করছে বলে ধারণা পাওয়া যায়। জান্তা আবার তার বাহিনীকে উদ্বুদ্ধ করে বহুমুখী আক্রমণের বিপরীতে লড়াই চালিয়ে যেতে কতটা উদ্যোগী হতে পারে সেটিই পালেতোয়ার পতনের পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে।