স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসির প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসাবে জামায়াত – শিবিরের আয়োজনে মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে রাজধানীতে। দেশব্যাপী জামায়াতের এই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের বাধা প্রদান ও লাঠিচার্জ এবং ঢাকায় মিছিল শেষে কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদের কাছে ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের আয়োজনে মিছিল বের করলে সেখান থেকে ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসাইন নামে এক শিবির নেতাকে র্যাব পরিচয়ে কয়েকজন মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে গেলে এখনো তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
জামায়াত ও পুলিশের সূত্রে জানা যায়, জামায়াতে ইসলামী ৩ সেপ্টেম্বর ঘটনায় মিছিল বের করলে পুলিশ রাজধানীতে অর্ধশতাধিক, বগুড়ায় ৩, রংপুরে ১১, নীলফামারীতে ২, মৌলভীবাজারে ২, সুনামগঞ্জে ১, মাদারীপুরে ১ জন, বরিশালে ৩, সিরাজগঞ্জে ৫ এবং ফেনী থেকে ১জনকে গ্রেফতার করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদের সামনে থেকে জামায়াতের একটি ঝটিকা মিছিলের আয়োজন করে স্থানীয় শিবির নেতা মাহমুদ। গোয়েন্দা পুলিশ আগেই ওই ঝটিকা মিছিলের খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত থাকে। মাহমুদের নেতৃত্বে স্থানীয় শিবির মিছিল শুরু করার আগেই তাকে ১০-১২ জন সাদা পোশাকধারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী ধরে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
মাহমুদ হোসাইনকে (২৫) র্যাব পরিচয়ে জুমার নামাজের পরে ধরে নিয়ে যায়। ঘটনার পর পরই তার পরিবার স্থানীয় থানায় খোঁজ নিয়েছে কিন্তু কোন থানায় তাকে পাওয়া যায়নি। আজ এই নিউজ লেখার সময় পর্যন্ত তাকে আদালতেও তোলা হয়নি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
মীর কাশেম আলীর মৃত্যুবার্ষিকীতে জামায়াতের বিবৃতি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিবৃতি দিয়েছেন দলটির আমির মকবুল আহমাদ। ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সোমবার এক বিবৃতিতে জামায়াত আমির মকবুল আহমদ মীর কাসেম আলীকে বিশিষ্ট ইসলামী অর্থনীতিবিদ, সমাজসেবক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব উল্লেখ করে তাকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় দণ্ডিত করা হয়েছে বলে দাবী করেন। তিনি বলেন, ‘শহীদ মীর কাসেম আলী ছিলেন সম্পূর্ণ নির্দোষ। এ দেশে ইসলামী সমাজ গড়ার আন্দোলনে তার অবদানের কথা আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘শহীদ মীর কাসেম আলী ছাত্র জীবন থেকেই এ দেশে কল্যাণধর্মী একটি ইসলামী সমাজ কায়েমের জন্য সংগ্রাম করে গিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। ইসলামী ব্যাংক-বীমাসহ বহু মসজিদ, মাদ্রাসা, বিভিন্ন ইসলামী ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নিকট স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এ দেশের দরিদ্র জনগণ তার কথা আজীবন স্মরণ করবে। শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কারণেই সরকার তাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে।’
মকবুল আহমাদ বলেন, ‘শহীদ মীর কাসেম আলীকে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার মিথ্যা অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। সরকার পক্ষ তার বিরুদ্ধে আনীত কোন অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে সেগুলোর সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে শহীদ মীর কাসেম আলীকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সরকার অত্যন্ত নির্মম ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় ফাঁসি দিয়ে তাকে হত্যা করেছে। সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্ব শূন্য করার যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে তারই অংশ হিসেবে তাকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুঁলিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
