অসম কংগ্রেসের সভাপতি রিপুন বরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে ৬ দফা প্রশ্ন করেছেন। গতকাল (সোমবার) বিকেলে গুয়াহাটিতে কংগ্রেসের সদর দফতর রাজীব ভবনে বিজেপি বিরোধী মহাজোটের অন্য শরীক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব প্রশ্ন করেন।
রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সোমবার বিজেপিশাসিত অসমের ধেমাজিতে এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখেন। কিন্তু বিরোধীরা ওই বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে না পেরে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছেন।
রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি রিপুন বরা এমপি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে ‘পরিযায়ী পাখি’ বলে কটাক্ষ করে বলেন, ‘নির্বাচন এলেই তিনি অসমে আসেন। নির্বাচন সামনে থাকায় আগামীতেও তিনি আসতে থাকবেন। কিন্তু অসম যখন বন্যায় আক্রান্ত ছিল, যখন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ‘সিএএ’ বিরোধী আন্দোলনে অসমে যুবকদের মৃত্যু হয়েছিল তিনি অসমে আসার সময় পাননি।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কংগ্রেস নেতা রিপুন বরা ৬ দফা প্রশ্ন করেছেন। তাঁর প্রথম প্রশ্ন- ‘কেন অসমবাসীর জনমতকে অবজ্ঞা করে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ/ক্যা) প্রবর্তন করলেন?
দ্বিতীয় প্রশ্ন- ‘অসমে ২৫ লাখ বেকারকে চাকরি দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই জায়গায় মাত্র ৮০ হাজার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। ৯৭ শতাংশকে চাকরি দিতে পারলনে না কেন?’
তৃতীয় প্রশ্ন- ‘৬ জনগোষ্ঠীকে জনজাতিকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁর কী হল? কবে জনজাতিকরণ হবে?’ চতুর্থ প্রশ্ন-‘ বিজেপি সরকার চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে রাজনীতি করছে কেন? কংগ্রেস নেতা রিপুন বরা এ প্রসঙ্গে বিজেপি সরকার চা শ্রমিকদের বোকা বানাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।
পঞ্চম প্রশ্নে রিপুন বরা বলেন-‘পেট্রোল-ডিজেল এবং জীবনদায়ী ওষুধের দাম ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব অত্যাবশকীয় সামগ্রীর দাম কমাবেন কী? কেন আকাশছোঁয়া হয়েছে এসবের দাম?
ষষ্ঠ প্রশ্নে রিপুন বরা বলেন- ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যের নিরিখে ভারতে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ৩০ টাকা হওয়া উচিত। কিন্তু সেই পেট্রোলের দাম এত অস্বাভাবিক কেন?’
কংগ্রেস নেতা রিপুন বরা আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ধেমাজিতে এসেছিলেন। সেখানকার বাসিন্দারা প্রত্যেক বছর বন্যা ও নদী ভাঙন সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু ওই ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী টুঁ শব্দও করেননি! তাঁর অভিযোগ, বিজেপি আমলে অসমে গরু পাচারের মতো কুকর্ম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ মানেকা গান্ধী। এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালকে জবাব দিতেই হবে। কারণ বিজেপির একজন এমপি ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গুরুতর ওই বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে বিজেপি বিরোধী মহাজোটের শরীক দল ইউডিএফের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিজেপি আমাদের মহাজোটে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। এজন্যই মহাজোট গঠনের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনসহ ঝাঁকে ঝাঁকে কেন্দ্রীয় নেতা অসম সফর করছেন। এতেই স্পষ্ট যে বিজেপি কতটা ভয় পেয়েছে।
সিপিআই(এমএল) নেতা বিবেক দাস বলেন, ‘বিজেপি একমাত্র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দল। সিপিএম নেতা দেবেন ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিজেপি ও সরকার একাকার হয়ে গেছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি। বিজেপি সরকার অর্থে তাদের নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছে।’
অন্যদিকে, আঞ্চলিক গণ মোর্চার নেতা মনজিৎ মহন্ত প্রধানমন্ত্রী পদকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ করেছেন।