আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র স্টর্ম শ্যাডো ব্যবহার করে রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক কারখানায় হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী একে ‘সফল হামলা’ বলে উল্লেখ করেছে। রাশিয়া এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
বুধবার (২২ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ‘এক্স’ পোস্টে বলা হয়, ‘এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে গেছে এবং এটি ছিল ‘বৃহৎ পরিসরের যৌথ ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলার’ অংশ। লক্ষ্যস্থল ছিল রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক কেমিক্যাল প্লান্ট- যা আগ্রাসী রাষ্ট্রের সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের একটি মূল স্থাপনা।’
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর দাবি, ওই কারখানায় গানপাউডার, বিস্ফোরক এবং রকেট জ্বালানির উপাদান তৈরি হয়, যা রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ভূখণ্ডে হামলার জন্য ব্যবহার করছে।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছেন, তারা এখনও ‘বিশাল’ হামলার ফলাফল মূল্যায়ন করছেন।
হামলার ঘটনাটি এমন দিনে ঘটেছে, যেদিন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারসহ ইউরোপীয় নেতারা ঘোষণা দেন যে, রাশিয়ার অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর চাপ বাড়ানো হবে যতক্ষণ না প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘শান্তি আলোচনায় রাজি হচ্ছেন’।
ইউক্রেন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, পোল্যান্ড, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নরওয়ের নেতারা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, যুদ্ধবিরতির আগে, চলাকালীন এবং পরেও ইউক্রেনকে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।
এই পরিস্থিতি এমন এক সময়ের মধ্যে ঘটছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলদেমির জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠকে ইউক্রেনে মার্কিন দূরপাল্লার টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা করা হলে, ট্রাম্প তাতে অনীহা প্রকাশ করেন।
এদিকে, এই হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই জেলেনস্কি জানান, রাশিয়া ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে দুই শিশুসহ অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, রাশিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এতে রাজধানী কিয়েভের পাশাপাশি ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চল বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
বুধবার সকালে কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো জানান, রাতভর রাশিয়ার হামলায় রাজধানীর বেশ কয়েকটি ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে আলোচনা করতে তিনি এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হাঙ্গেরিতে বৈঠকে বসতে একমত হয়েছেন। তবে বৈঠকের পরিকল্পনাটি গতকাল মঙ্গলবার স্থগিত করার কথা জানান ট্রাম্প। এ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্য, তিনি ‘অকার্যকর বৈঠক’ চান না।
ট্রাম্প আরো ইঙ্গিত দেন, বর্তমান ফ্রন্ট লাইনে যুদ্ধ বন্ধ করতে মস্কোর অস্বীকৃতিই মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া, যা এখনো চলছে। বর্তমানে মস্কো ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা দখলে রেখেছে, যার মধ্যে ২০১৪ সালে সংযুক্ত ক্রিমিয়া উপদ্বীপও রয়েছে।