কমিউনিটি নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে এবার লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছয় নারী। তাঁরা বিরোধী দল লেবার পার্টির মনোনয়নে নির্বাচনে লড়বেন।
এই ছয় নারীর মধ্যে বর্তমানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের সদস্য রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক, রুপা হক ও আফসানা বেগম রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে এবার প্রার্থী হয়েছেন রুমী চৌধুরী ও রুফিয়া আশরাফ।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিরোধী দল লেবার পার্টির জয়ী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে সব জনমত জরিপে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির থেকে ২০ পয়েন্ট এগিয়ে আছে লেবার পার্টি।
বড় কোনো অঘটন না ঘটলে ১৫ বছর পরে যুক্তরাজ্যে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে লেবার পার্টি। দলটি ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই নারীদের মধ্যে কেউ।
যুক্তরাজ্যে আগামী ৪ জুলাই জাতীয় নির্বাচন হবে। দেশটিতে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী। লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে ২০১০ সাল থেকে টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ২০১০ থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন রুশনারা আলী। এরপর তিনি ২০১৩ সালের অক্টোবরে ছায়া শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
রুশনারা আলীর জন্ম সিলেটে। তাঁর বয়স যখন সাত বছর, তখন যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমায় তাঁর পরিবার। তিনি অক্সফোর্ডের সেন্ট জনস কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।
লেবার পার্টির মনোনয়নে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন রুপা আশা হক। এরপর টানা তিনবার তিনি পশ্চিম লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনেএমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
২০১৬ সালের অক্টোবরে লেবার পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান রুপা হক। তাঁকে সর্বদলীয় সংসদীয় মিউজিক গ্রুপের ভাইস চেয়ার এবং ক্রসরেলের সর্বদলীয় সংসদীয় পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল।
২০১৫ সালে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়নে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন টিউলিপ সিদ্দিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক।
টিউলিপ টানা তিনবারের এমপি। ২০১৬ সাল থেকে তিনি ছায়া শিক্ষামন্ত্রী, সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপের ভাইস চেয়ার, নারী ও সমতা নির্বাচন কমিটির সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন।
পূর্ব লন্ডনের পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনয়নে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন আফসানা বেগম।
ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সোচ্চার ভূমিকা পালন এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন এমপি আফসানা বেগম।
আফসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসেই। বাংলাদেশে তাঁর আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে।
এবার পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন রুমী চৌধুরী। ২০২৩ সালে লুটন কাউন্সিল থেকে প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
রুমী চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি এখন নড়বড়ে অবস্থায় থাকায় জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী রুমী চৌধুরী।
নর্থাম্পটন টাউন কাউন্সিলের মেয়র ও কাউন্সিলর রুফিয়া আশরাফ প্রথম লেবার পার্টির মনোনয়নে সাউথ নর্থাম্পটন আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন। আসনটি দীর্ঘদিন ধরে কনজারভেটিভ পার্টির দখলে।
অনেকেই বলছেন, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা কমতে থাকায় দেশব্যাপী লেবার পার্টির জনজোয়ার দেখা দিয়েছে। এবার সাউথ নর্থাম্পটন আসনটি উদ্ধারে লেবার পার্টি বদ্ধপরিকর।