কমিউনিটি নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার গল্প শোনালেন এবং তাদের স্বপ্ন দেখালেন ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ। প্রবাসী শিক্ষার্থীদের জানাচ্ছিলেন কি করে এখানকার বাংলাদেশি ডায়াসপোরার মধ্যে একটি স্বপ্ন বুনে দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি- ডব্লিউইউএসটির (পূর্বনাম আইগ্লোবাল ইউনিভার্সিটি) প্রতিষ্ঠাতা ও চ্যান্সেলর, আবুবকর হানিপ। কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলে তার গল্পটাই সকলে শুনতে চান কারণ তিনি ইতিমধ্যে একজন সফল বাংলাদেশি আমেরিকান হিসাবে সেখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে পরিচিতি লাভ করেছেন।
গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ইউএসএ’র উদ্যোগে আয়োজিত ঈদ-পরবর্তী এক অনুষ্ঠানে তিনি তার নিজের জীবনের গল্পটি শেয়ার করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পিপলএনটেকের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ছিলেন নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি এবং অন্য দেশের শিক্ষার্থী-প্রশিক্ষণার্থীরাও।
যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ, সংগ্রাম ও সুযোগ নিয়ে আলোচনা ছিলো অনুষ্ঠানের মূল্য প্রতিপাদ্য। আবুবকর হানিপ, পিপলএনটেক’র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, এনআরবিকানেক্ট টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, ছিলেন এই আয়োজনের কিনোট স্পিকার।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত হয়েছিলেন এ আয়োজনে। অভ্যাগতদের মধ্যে ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশি জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটিতে প্রতিষ্ঠিত পেশাজীবী ও ব্যক্তিত্বরা। অনুষ্ঠানটির স্পন্সর ছিলো ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি- ডব্লিউইউএসটি এবং পিপলএনটেক।
অনুষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার হানিপ বলেন, তার অনুপ্রেরণায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাঙালি পরিবার যারা একসময় কেউ কেউ ছিলেন ইয়েলো ক্যাব চালক; যারা ধীরে ধীরে একজন করে আইটি প্রফেশনালে পরিবর্তিত হচ্ছে। এবং সে প্রক্রিয়ায় একটি বড় অবদান রেখে চলেছে তারই প্রতিষ্ঠিত পিপলএনটেক। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অন্তত ৭০০০ বাংলাদেশি আজ আইটি প্রশিক্ষিত হয়ে চাকরির বাজারে ড্রিম জব করছে। যার প্রায় সবগুলোই সিক্সডিজিট প্লাস এর চাকরি।
তিনি জানান, তার পরিচালনায় ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি- ডব্লিউইউএসটি-ও একটি দক্ষতা নির্ভর শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে এগুচ্ছে যা এখানকার সকল শিক্ষার্থীদের একটি ডিগ্রির পাশাপাশি সময়ের সবচেয়ে আগুয়ান ও চাহিদা সম্পন্ন বিষয়গুলোতে দক্ষ করেই যুক্তরাষ্ট্রের কর্মবাজারে এগিয়ে দেবে। এতে করে এখানকার প্রতিটি শিক্ষার্থী সেই একই রকম সিক্সডিজিট আর্নার হতে পারবে তাদের শিক্ষাপরবর্তী কর্মজীবনের শুরু থেকেই।
আবুবরক হানিপ বলেন, “নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মজগতকে যতটা বুঝতে পারি, যুক্তরাষ্ট্র এখন দক্ষ মানুষের দেশ। এখানে দক্ষদের সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। আর সেই সম্ভাবনা থেকেই ডব্লিউইউএসটি তার শিক্ষার্থীদের দক্ষ করেই কর্মজগতে পাঠানোর প্রয়াস নিয়েছে। এবং শিগগিরই এই ঘোষণায় যাচ্ছে যে- নো জব নো টিউশন। অর্থাৎ ডব্লিউইউএসটির গ্রাজুয়েটররা চাকরি বাজারে সুযোগ না পেলে তাদের টিউশন ফি-ই ফেরত দেবে বিশ্ববিদ্যালয়।”
বিষয়গুলো যখন বলছিলেন একজন প্রত্যয়ী আবুবকর হানিপ, উপস্থিত দর্শকরা তা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন থার্টিসিক্সথ অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট-এর অ্যাসেম্বলি সদস্য জোহরান কে মামদানি, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলর সিডি ২৫ শেখর কৃষ্ণাণ, নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক ভৈরবী দেশাই, নিউইয়র্ক ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এট লার্জ মঈন চৌধুরী, বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ এন মজুমদার, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য মফিজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, অরগানাইজিয় সোসাইটি অ্যাট ডিআরইউএম-এর পরিচালক কাজি ফৌজিয়া, অ্যাস্টোরিয়া সোসাইটি ইউএসএ’র সাধারণ সম্পাদক মো. জায়েদ উদ্দিন, বাংলাদেশি কমিউনিটি লিডার জামাল হক প্রমুখ। এরা সকলেই অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপদেশমূলক বক্তব্য রাখেন।
তারা তাদের বক্তৃতায় বলেন, আবুবকর হানিপ নিজেই এখন নিজের পরিচয় এবং তিনিই এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের অন্যতম অনুপ্রেরণা। তার নেতৃত্বে একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে, যা প্রতিটি মানুষের গর্ব, উল্লেখ করেন বক্তারা।
দুটি পর্বে বিভক্ত এই অনুষ্ঠানে অ্যাসোসিয়েশনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। পরে প্রথম প্যানেল আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এশিয়ান অ্যামেরিকান লিগ্যাল ডিফেন্স অ্যান্ড এডুকেশন ফান্ড এর সিনিয়র স্টাফ এটর্নি স্টেইলি মার্ক।
দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনায় একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষা জীবনের সংগ্রাম এবং পরে আমেরিকান ড্রিম অর্জনে তার সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন। এই পর্বে আলো জনা করেন আরও দুইজন শিক্ষার্থী যারা পিপলএনটেক থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নেওয়ার পরে যে সফলতার পথ মাড়িয়ে চলেছেন তা নতুন শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন।