হাবিবুর রহমান, ঢাকা: প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক সংলাপে বসছে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সম্পর্ককে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হবে এ সংলাপে। সংলাপে উভয়পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ হবে। থাকবে বৈশ্বিক সমসাময়িক পরিস্থিতি, বিশেষ করে রাশিয়া- ইউক্রেন ইস্যু। এছাড়া ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, কানেকটিভিটি, রোহিঙ্গা ইস্যু, নিরাপত্তা, অবৈধ অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো আলোচনার টেবিলে থাকবে।
আগামী ২৮ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সংলাপে ঢাকা চাইছে, আগামী এক দশক বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি সময়ের ব্যবধানে ইইউর সঙ্গে সমন্বিত অংশীদারিত্বের পর্যায় থেকে সম্পর্ক ও সহযোগিতাকে কৌশলগত অংশীদারিত্বে নিয়ে যেতে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। ইইউ’র পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিকে মোরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইইউ’র সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে ২০২৩ সালে। এখন উভয়পক্ষ সম্পকর্কে কীভাবে দেখতে চায় বা সামনের দিনগুলোতে এটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটি মূল উদ্দেশ্য। উভয়পক্ষ আরও কীভাবে কাজ করতে পারে বা কীভাবে আরও সম্পক্ততা বাড়ানো যায়, এগুলোর জন্যই রাজনৈতিক সংলাপ। সেজন্য সংলাপে এ বিষয়গুলোই বেশি গুরুত্ব পাবে।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সংলাপে অংশ নিতে ইইউ’র ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিকের সঙ্গে ছোট একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবে। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়। প্রতিনিধি দলের রাজনৈতিক সংলাপে অংশ নেওয়া ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর দু’জন উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ চাওয়া হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হচ্ছে না। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সে সময় দেশের বাইরে থাকবেন বলে তার সঙ্গেও সাক্ষাৎ হচ্ছে না ইইউর প্রতিনিধি দলের।
সংলাপে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম না প্রকাশ শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু এটা রাজনৈতিক সংলাপ, তাই রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ হবে। সংলাপটি দেড় ঘণ্টা সময় নিয়ে হতে পারে। সংক্ষিপ্ত সময়ে খুব বেশি আলাপ করা সম্ভবও না। মূলত সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া নিয়ে কথা হবে। সমসাময়িক পরিস্থিতি, কানেকটিভিটি, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা ইস্যু ও ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুগুলো আসবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতি আলোচনায় থাকছে কি না-জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, আসলে আলোচনার প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। তবুও আমরা ধরে নিচ্ছি, এ বিষয়টা আসবে। ওরা (ইইউ) হয়ত তুলবে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সংলাপে ইইউ’র পক্ষ থেকে ইউক্রেনের চলমান পরিস্থিতি গুরত্ব দেওয়া হবে। এছাড়া উভয়ের সম্পর্কের পর্যালোচনা ছাড়াও গণতন্ত্র, নির্বাচন, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, রোহিঙ্গা সমস্যা, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন সহযোগিতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, প্রায় আট মাস আগে ঢাকা ও ইইউ’র মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের গত অক্টোবরে ব্রাসেলস সফরের সময়ে সংলাপের সিদ্ধান্ত হয়।
ব্রাসেলসে গত মাসের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ ও ইইউ’র মধ্যে যৌথ কমিশনের দশম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনে গুরুত্ব দেওয়া হয়। রাজনৈতিক সংলাপে নির্বাচন প্রসঙ্গে আসবে কি না-জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ব্রাসেলসে নির্বাচন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বল্প সময়ের সংলাপে খুব বেশি কিছু আলোচনায় আসবে না।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ইউরোপ ও ইইউ অনুবিভাগের মহাপরিচালক ফাইয়াজ মুরশিদ কাজী বলেন, আগামী বছর আমাদের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি। এ সময়ের মধ্যে আমাদের সম্পর্কটার অবস্থান কোথায় সেটা দেখার বিষয়। আর আগামী ৫০ বছরের কথা যদি বলি, আমরা আগামী ১০ বা ২০ বছর সম্পর্কের বিবর্তনটা কোথায় দেখতে চাই বা কীভাবে দেখতে চাই সেটা নিয়ে সংলাপে আলোচনা হবে। আমরা কৌশলগত অংশীদারিত্বকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। সেজন্যই আমরা রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা করছি।