পশ্চিমবঙ্গ নিউজ ডেস্ক: প্রতি বছরের মতো এ বছরও পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের জোড়া মসজিদে ১২৩তম বার্ষিক ওরশ শরীফ উপলক্ষে রাজবাড়ী থেকে দুই হাজার ২৫৬ জন যাত্রী নিয়ে এসেছে ওরশ স্পেশাল ট্রেন।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টায় রাজবাড়ী রেলস্টেশন থেকে ২৪টি বগি সম্বলিত ট্রেনটি পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশে যাত্রা করে। ওরশ শেষে ট্রেনটি আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ী ফিরে যাবে।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে মেদিনীপুরের মির্জা মহল্লায় অবস্থিত জোড়া মসজিদে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ৩২তম ও বড় পীর গাউস-উল-আযম হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (আ.) এর ১৯তম অধস্তন পবিত্র বংশধর আলী আব্দুল কাদের সামশুল কাদের হযরত সৈয়দ শাহ মোর্শেদ আলী আল কাদেরী আল হাসানী আল হুসাইনী আল বাগদাদী আল মেদিনীপুরী (আ.) মশহুর নাম ‘মওলাপাক’-এর বার্ষিক পবিত্র ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। পবিত্র ওরশ পরিচালনা করবেন আওলাদে রসূল হজরত সৈয়দ শাহ্ ইয়াসুব আলী আল কাদেরী আল হাসানী আল হুসাইনী আল বাগদাদী আল মেদিনীপুরী।
বাংলাদেশ-ভারত সরকার যৌথভাবে ১৯০২ সাল থেকে এই ওরশ স্পেশাল ট্রেনটি চলাচলের ব্যবস্থা করে আসছে। তবে করোনার কারণে ২০২১ ও ২০২২ সালে ওরশ স্পেশাল ট্রেন ভারতে যায়নি। ভারতের মেদিনীপুরের সঙ্গে মিল রেখে একইদিন রাজবাড়ীর বড় মসজিদ খানকা শরীফেও নানা আয়োজন করে থাকে।
এদিকে ওরশ স্পেশাল ট্রেনটিকে কেন্দ্র করে ওইদিন রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। রেললাইনের পাশ দিয়ে মুখরোচক খাবারসহ হরেক রকমের দোকান সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। এ সময় কেউ আসেন ট্রেন দেখতে, কেউবা আসেন ঘুরতে। আবার কেউ আসেন ট্রেনে চুম্বন ও সালাম করতে।
এছাড়া কাদেরীয়া তরিকার ভক্ত ও মুরিদানরা আসেন মানত করা টাকা, হাঁস, মুরগি, কবুতর, ছাগলসহ ইত্যাদি দিতে। এদিন সকাল থেকেই ট্রেনটি সাজানো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ করতে থাকেন ভক্ত ও মুরিদানরা।
মেদেনীপুরের মুরিদান রেজাউল হোসেন খান ও গোলাই মণ্ডল বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ী থেকে মেদেনীপুরের ওরশে একটি ট্রেন যায়। সেই ট্রেনে নানা কারণে অনেকে যেতে পারেন না। ফলে মেদেনীপুরের সঙ্গে মিল রেখে রাজবাড়ী বড় মসজিদ খানকা শরীফেও ওরশ করা হয়। এ ওরশ উপলক্ষে গেট নির্মাণ, মসজিদে রং করা নানা কাজ চলমান। এখানেও হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে থাকে।
রাজবাড়ী আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়ার সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল আজিজ কাদেরী খোকন বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের জোড়া মসজিদে আল মেদিনীপুরী (আ.) মশহুর নাম ‘মওলাপাক’র ১২৩তম ওরশ শরীফ উপলক্ষে রাজবাড়ী আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়ার দুই হাজার ২৫৬ যাত্রীর ভিসাসহ প্রায় সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ট্রেনটি ছেড়ে যায় এবং ওরশ শেষে ফিরে আসবে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে। মেদেনীপুরের সঙ্গে মিল রেখে রাজবাড়ীর বড় মসজিদ খানকা শরীফেও ওরশ অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, ওরশ শরীফে যাওয়ার জন্য হাজার হাজার ভক্ত ও মুরিদান আবেদন করেন। কিন্তু ব্যবস্থা না থাকায় সবাইকে নিতে পারি না। যে কারণ লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত করে পাসপোর্ট নিয়ে ভিসা সম্পন্ন করে থাকি। তবে অনেকে সড়ক পথসহ অন্যান্যভাবে মেদেনীপুরের ওরশ শরীফে যান।
রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত জানান, ১৯০২ সাল থেকে আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়ার উদ্যোগে রাজবাড়ী থেকে ভারতের মেদেনীপুরে একটি ওরশ স্পেশাল ট্রেন যায়। এবারও আজ রাত ১০টায় ২৪টি বগি সম্বলিত ওরশ স্পেশাল ট্রেন রাজবাড়ী থেকে ভারতের মেদেনীপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
ট্রেনটিতে দুই হাজারের বেশি যাত্রী থাকবে এবং ট্রেনটি ভারতীয় কোচ দ্বারা চলবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক সুন্দরভাবে ট্রেনটি মেদেনীপুরে যাবে এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশে ফিরে আসবে বলেও জানান তিনি।
রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোমনাথ বসু জানান, ওরশ স্পেশাল ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে স্টেশন এলাকায় ওরশ যাত্রীসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। যাত্রী ও জনগণের জানমাল রক্ষায় তারা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেবেন। এছাড়া স্টেশন এলাকা সিসি টিভির আওতায় থাকে।
এ সময় ট্রেন যাত্রীদের বিদায় জানান রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী কেরামত আলী।