আত্মগোপনে থাকা বিএনপি নেতাকর্মী দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যেই ধীরে ধীরে মাঠে ফিরছে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক নেতাকর্মী রাজনীতির মাঠ ছেড়েছিল। বিএনপির ভোট বর্জনের মধ্যে তেমন কোনো সহিংসতা ছাড়াই হয়ে গেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির আন্দোলন এখন অনেকটাই গতিহারা।
সংসদের ভোটের পর কোনো কঠোর কর্মসূচিও দেয়নি দলটি। ফলে আগের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তারের তৎপরতা তেমন নেই। এ পরিস্থিতিতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় ও চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের পর এবার জেলা, মহানগরসহ সারাদেশে দলীয় অফিসের তালাও খুলতে শুরু করেছে নেতাকর্মী।
একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দাম, কারাবন্দি নেতাকর্মীর মুক্তি এবং ‘অবৈধ সংসদ বাতিল’ করার দাবিতে দুই দিন কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামীকাল শুক্রবার সারাদেশে জেলা সদর এবং শনিবার সব মহানগরে মিছিল করবে তারা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এই প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করল দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। এমনকি নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলো।
ভোটের আগে গ্রেপ্তারের ভয়ে কার্যালয়ে তালা মেরে আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল আন্দোলনরত বিএনপি নেতাকর্মী। এখন সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নমনীয় অবস্থানের কারণে এরই মধ্যে ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫৩ জেলার তালা খুলেছে নেতাকর্মী। এখনও ১৮ জেলার কার্যালয় বন্ধ। এর বাইরে ১১ জেলায় কার্যালয়ই নেই। সমকালের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
নির্বাচনের আগে টানা আড়াই মাসের আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবন্দি বিএনপির অনেক নেতাকর্মী। কারও কারও নামে রয়েছে শত শত মামলার খড়্গ। গ্রেপ্তার আতঙ্কে এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছে অনেক নেতাকর্মী। কিছু নেতাকর্মী প্রকাশ্যে এলেও দলীর কার্যালয় ঘিরে হারানো জৌলুস এখনও ফেরেনি। এমনকি দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও আগের মতো নেই নেতাকর্মীর ভিড়, আড্ডা আর কর্মসূচি বাস্তবায়নে কর্মযজ্ঞ। কবে নাগাদ সবকিছু আগের চেহারায় ফিরবে, তা কেউ বলতে পারছে না।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর থেকে শুরু হয় সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান। ওই দিন থেকেই বন্ধ হতে থাকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে সারাদেশে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন কার্যালয়। নেতাকর্মীও চলে যায় আত্মগোপনে। আড়াই মাসের আন্দোলনের সময় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ২৭ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপিসহ বিরোধী দলের চলমান আন্দোলন থেকে সরে আসায় সারাদেশে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চলা ধরপাকড়ও অনেকটা কমে আসে। ১১ জানুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢোকেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। এর আগে ৮ জানুয়ারি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করেন দলটির নেতারা।
অনেক দিন পর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুললেও আগের সেই প্রাণ ফেরেনি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যতক্ষণ কার্যালয়ে থাকেন, ততক্ষণ কিছু নেতাকর্মীকে দেখা যায়। এর বাইরে দলটির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কার্যালয় ঠিকমতো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় তারাও আসতে পারছেন না। ফলে দিনে বেশির ভাগ সময় কার্যালয় থাকে নেতাকর্মীশূন্য। এদিকে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে কিছুটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসায় কারাবন্দি নেতাকর্মীর মুক্তি দাবিতে নয়াপল্টনজুড়ে পোস্টার-ব্যানারে সয়লাব হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে রুহুল কবির রিজভী সমকালকে বলেন, নেতাকর্মীর ওপর যে নির্যাতন, গণগ্রেপ্তার চলেছে, তা নজিরবিহীন। এর পরও নেতাকর্মী ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অনেক জেলার নেতারা কারাগারে থাকায় হয়তো একটু দেরিতে কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তবে সেটাও দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মতো দেশের বেশির ভাগ জেলা ও মহানগর কার্যালয়ের তালা খোলা হলেও নেতাকর্মীর উপস্থিত খুবই কম। প্রায় প্রত্যেক নেতাকর্মীর নামেই একাধিক মামলা থাকায় দলীয় কার্যালয়ে যাওয়া বা সক্রিয় হওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে তারা। অনেক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কারাগারে আছেন; অনেকে মামলায় রয়েছেন আত্মগোপনে। এর মধ্যে ‘বিএনপির রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত বগুড়া জেলা বিএনপি কার্যালয় আড়াই মাস পর ১৭ জানুয়ারি খোলা হয়। জেলা বিএনপি সভাপতি রেজাউল করিম বাদশার বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও একটি কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন তিনি। তবে সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা আছেন আত্মগোপনে। সহসভাপতি হামিদুল হক চৌধুরী হিরু বলেন, দলীয় কার্যালয় খোলা হলেও নেতাকর্মী এখনও এখানে আসতে পারছে না।
জয়পুরহাট জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেনের নেতৃত্বে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। টানা ৪২ দিন বন্ধ থাকার পর গত ১০ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় খোলা হয়েছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু জানান, মামলার কারণে গ্রেপ্তার আতঙ্কে তিনি ও সভাপতি অফিসে যেতে পারছেন না।
খুলনা জেলা ও মহানগরের কার্যালয় গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে খোলা হলেও কোনো কার্যক্রম নেই। খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান কারাগারে; সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী রয়েছেন আত্মগোপনে। খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনও গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাদের সবার নামে রয়েছে একাধিক মামলা। আর কার্যালয়টিও থানা-সংলগ্ন হওয়ায় নেতাকর্মী ভয়ে কার্যালয় এড়িয়ে চলছে।
কুষ্টিয়া বিএনপির কার্যালয় খোলা থাকলেও নেতাকর্মী কম যায়। সভাপতি মেহেদী আহমেদ রুমী ও সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন রয়েছেন কারাগারে। চুয়াডাঙ্গা জেলা কার্যালয় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে খোলা। যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই, শুধু তারাই কার্যালয়ে আসতে পারছেন। জেলার আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান খান বাবু ঢাকায় থেকে নেতাকর্মীর পাশে থাকছেন। আর সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান মাঠ থেকে নেতাকর্মীকে নিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। শরীফুজ্জামান বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর প্রাণের ঠিকানা তাদের দলীয় কার্যালয়। প্রায় তিন মাস পর তারা সেই ঠিকানায় আবারও ফিরেছে।
যশোর জেলা বিএনপি কার্যালয় মঙ্গলবার খোলা হয়েছে। সাতক্ষীরায় বিএনপির কোনো কার্যালয় নেই। মেহেরপুর ও মাগুরা জেলা বিএনপির কার্যালয় ২৮ অক্টোবর থেকে বন্ধ। ঝিনাইদহ বিএনপির জেলা কার্যালয় মাঝেমধ্যে খোলা হয়।
বরিশাল দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয় ১৯ জানুয়ারি খোলা হয়। তবে নেতাকর্মীর আনাগোনা তেমন নেই। মহানগর আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক রয়েছেন কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন সিকদার ও সদস্য সচিব মীর জাহিদুর রহমানসহ অঙ্গ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় তারা দলীয় কার্যালয়ে আসছেন না। বরিশাল উত্তরে কোনো কার্যালয় নেই, কার্যক্রমও নেই।
ভোটের আগে ভোলা বিএনপি অফিস মাঝেমধ্যে খোলা হলেও সেখানে দলীয় কোনো কর্মসূচি পালিত হয়নি। জেলা আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা নেই। একাধিক মামলা থাকায় আত্মগোপনে সদস্য সচিব রাইসুল আলম।
নির্বাচনের পর পিরোজপুর জেলা কার্যালয় খোলা হয়েছে। জেলার সদস্য সচিব অহিদুজ্জামান লাভলু কারাগারে, আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন নেতাকর্মী নিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন।
পটুয়াখালী শহরের বনানী এলাকায় বিএনপি কার্যালয় এখনও তালাবদ্ধ। পৌর বিএনপির সভাপতি কামাল হোসেন জানান, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মী এখনও নিয়মিত বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মহড়া দেয়। দলীয় কার্যালয় খুললেই তারা হামলা করবে– এ শঙ্কায় বিএনপি কার্যালয় খোলা হচ্ছে না। ঝালকাঠিতে বিএনপির কার্যালয় নেই। দলের এক নেতার বাসায় দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তবে ২৮ অক্টোবরের পর এই জেলায় কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। জেলার সভাপতি সৈয়দ হোসেন প্রকাশ্যে থাকলেও সদস্য সচিব শাহাদৎ হোসেন রয়েছেন আত্মগোপনে।
রংপুর বিভাগের মধ্যে কিছু জেলায় দলীয় কার্যালয়গুলো এখনও খোলা হয়নি। কোনো কোনো জেলা কার্যালয়ে নেতাকর্মী আসা-যাওয়া শুরু করেছেন। তবে অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে থাকায় বেশির ভাগ কার্যালয় ফাঁকা থাকছে। রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মাহামুদুন নবী ডন কারাগারে। আহ্বায়ক সামছুজ্জামান সামু জানান, কার্যালয় খোলার পর একদিন শুধু জিয়াউর রহমানের জন্মদিনের অনুষ্ঠান করা হয়েছে। তার পর কার্যালয় খোলা থাকলেও নেতাকর্মীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
ঠাকুরগাঁও বিএনপি কার্যালয়েও নেতাকর্মীর উপস্থিতি নেই। নীলফামারী জেলা বিএনপির কার্যালয় এখনও বন্ধ। কয়েক মাসে এই জেলায় কমপক্ষে ৫০টি মামলায় আসামি করা হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে। ফলে নেতাকর্মী রয়েছেন দৌড়ের ওপর। লালমনিরহাট জেলা বিএনপি অফিস খোলা রয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলু রয়েছেন আত্মগোপনে। গাইবান্ধা বিএনপির কার্যালয় ১৫ দিন ধরে নিয়মিত খোলা হচ্ছে। কুড়িগ্রাম বিএনপির কার্যালয় খোলা রয়েছে। সেখানে নিয়মিত বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী বসছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার মধ্যে ছয়টিতে অফিস তালাবদ্ধ। তিন জেলায় খোলা আছে। দুই জেলায় কোনো অফিস নেই। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি অফিস খোলা রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা কার্যালয় দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ। কক্সবাজার জেলা বিএনপির অফিস খোলা আছে। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গত ১০ বছরে কোনো মামলা না হলেও তৃণমূল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রয়েছে মামলার পাহাড়। জেলার দুই শীর্ষ নেতা প্রকাশ্যে থাকতে পারলেও তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী রয়েছেন আত্মগোপনে। লক্ষ্মীপুর বিএনপির কার্যালয় এখনও বন্ধ। জেলার আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ২৮ অক্টোবরের আগে থেকে কারাগারে রয়েছেন।
নোয়াখালীতে বিএনপির নিজস্ব কোনো কার্যালয় নেই। জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের বাসভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করেন। বান্দরবানে বিএনপির দুটি কার্যালয়, দুটিই খোলা। রাঙামাটি জেলা বিএনপি কার্যালয় ৭ জানুয়ারির আগেই খোলা হয়। খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির কার্যালয় খোলা। জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সভা-সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়।
গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ফেনী জেলা বিএনপির কার্যালয় বন্ধ। চাঁদপুরে বিএনপির কার্যালয় এখনও বন্ধ। কুমিল্লা দক্ষিণ ও উত্তর জেলা বিএনপি অফিসে তালা। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী কারাগার ও আদালতেই সময় পার করছেন। অফিস খুলে সভা করার পরিবেশ ও পরিস্থিতি নেই। একই বক্তব্য উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ এফ এম তারেক মুন্সির। তিনি বলেন, অফিস না খুললেও সব কর্মসূচি বিকল্পভাবে পালন করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির কোনো অফিস নেই।
সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যালয় থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সিলেট ও মৌলভীবাজারে বিএনপির কার্যালয় না থাকায় নেতাদের বাসাবাড়িতে চলে দলের কার্যক্রম। এসব জেলার শীর্ষ নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। অধিকাংশ নেতা আছেন জামিনে। কেউ পলাতক, কেউ বা কারাগারে।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি আনিসুল হক জানিয়েছেন, কার্যালয় থেকে নেতাকর্মীকে আটক করার পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ এখনও অফিসের সামনে ঘোরাঘুরি করে। হবিগঞ্জ বিএনপির বিভিন্ন গ্রুপের তিনটি কার্যালয় থাকলেও সেগুলো নির্বাচনের আগ থেকে বন্ধ। আহ্বায়ক আবুল হাশিম বাইরে থাকলেও প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক জি কে গউছ রয়েছেন কারাগারে। যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সেলিম বলেন, মামলা টানতে টানতে নেতাকর্মী পেরেশান। কার্যালয় খোলার দিকে কারও মন নেই।
মৌলভীবাজার বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান চৌধুরী বলয়ের কার্যালয় তাঁর বাড়িতে এবং সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলয়ের কার্যালয় চৌমুহনী এলাকায় জিয়া স্মৃতি পাঠাগারে।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির অফিস খোলা আছে। নাটোর বিএনপির অফিস খোলা থাকলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের অফিস তালাবদ্ধ। নওগাঁ জেলা বিএনপির কার্যালয় ১৮ জানুয়ারি খুলেছে।
২০ জানুয়ারি রাজবাড়ী বিএনপির অফিস খুলেছে। মাদারীপুর বিএনপির নেতারা জেলেও নেই, আত্মগোপনেও নেই। এর পরও জেলা কার্যালয় বন্ধ। গোপালগঞ্জ বিএনপি কার্যালয় নেই, কর্মকাণ্ড নেই, গ্রেপ্তার বা জেলে নেই। শরীয়তপুর শহরে বিএনপির কার্যালয় নেই, উপজেলায় আছে। জেলার শীর্ষ নেতারা কেউ গ্রেপ্তার নেই, আত্মগোপনেও নেই। ফরিদপুর জেলা কার্যালয় বন্ধ। কার্যালয়ের চাবি সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া স্বপনের কাছে থাকায় তা খোলা সম্ভব হচ্ছে না।
মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির অফিস বন্ধ। তবে জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে বিকেলে কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল হয়। নরসিংদী বিএনপির অফিস বন্ধ। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবীর খোকন জেলহাজতে। মুন্সীগঞ্জ বিএনপির অফিস খোলা হয়, তবে অনিয়মিত। কিশোরগঞ্জের কার্যালয় খোলা হয়েছে। কমিটির সভাপতি শরীফুল আলম কারাগারে। সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম আছেন আত্মগোপনে। নারায়ণগঞ্জ ও মহানগরে বিএনপি কার্যালয় নেই। আগে যেখানে কার্যালয়ে ছিল সেখানে দুই বছর আগে সিটি করপোরেশনের মার্কেট বানানো হয়েছে।
মহানগরের সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু আছেন কারাগারে। জেলা ও মহানগরের দলীয় কার্যক্রম বাসা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গাজীপুর জেলা বিএনপির অফিস খোলা হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির অফিস বন্ধ। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বর্তমানে জেলহাজতে ও সভাপতি মামলার আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে রয়েছেন।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন ব্যুরো, অফিস ও জেলা প্রতিনিধিরা]