আবদুল ওয়াহিদ তালিম, লণ্ডন, ৪ ডিসেম্বর- বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও পদযাত্রার আগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ইন্ডিয়াকে উদ্দেশ করে বলেছেন- ‘‘ভারতের শাসকগোষ্ঠী যদি মনে করেন সম্প্রসারণ চালিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও অন্যান্য দেশ কব্জা করে নেবেন, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বাংলাদেশের মানুষের দেশরক্ষার অন্তর্নিহিত শক্তি, প্রাণের উন্মাদনা কখনোই ভারত টের পায়নি৷ তারা যদি এইভাবে একের পর এক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসী মনোভাব দেখায়, এবং তাদের যদি অশুভ উদ্দেশ্য থাকে তাহলে আমরা আমাদের নবাবের এলাকা বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা দাবি করবো। আমরা এখানে যারা আছি তারা তো সিরাজ-উদ-দৌলা, মোহনলাল, মীর মদনের উত্তরসূরি। তাই ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা লড়বো। এটা আমাদের ঐতিহ্যের মধ্যে আছে। আপনারা আগরতলা সহকারী হাইকমিশনে আমাদের পতাকা নামিয়ে ছিঁড়েছেন। এটা তো প্রচণ্ড আঘাত। এটা আমরা কোনোদিনও ভুলে যাব না। আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষ জাগরিত। এ জাগরণ দেশ মাতৃকা রক্ষার জন্য। এখানে আমাদের সবার জন্ম। হিন্দু-মুসলমান এই মাতৃকায় যাদের জন্ম, এই মাটির সন্তান তারা। দেশের মুক্তির জন্য, দেশ রক্ষার জন্য এখানে যদি সিরাজ-উদ-দৌলা, মোহনলাল একসঙ্গে লড়াই করতে পারেন; ঠিক একইভাবে আমরা হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে লড়াই করব। বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে দিল্লির দাসত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, এ দুই ধর্মের লোকেরা একসঙ্গে লড়াই করে দিল্লির দাসত্বকে খান খান করে দেবে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে বাংলাদেশের মানুষও নবাবের ‘বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা’ দাবি করবে।”
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী’র বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা দাবি সম্বলিত এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে ‘অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’। একইসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও ধন্যবাদ জানিয়েছে সংগঠনটি। বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও এই দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছে সংগঠনটি।
স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় ‘অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ এর আহবায়ক ও মুখপাত্র ‘হাসনাত আরিয়ান খান’ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘‘ইতিহাস কখনো কখনো একটি রাজনৈতিক দল বা শক্তিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী নির্ধারণের সামর্থ্য ও ক্ষমতা অর্পণ করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র সামনে এখন সেই সুযোগ এসেছে। বিএনপি এখন সেই সুযোগ পেয়েছে। এ সুযোগ বা ক্ষমতার সদ্ব্যবহারের ওপরেই নির্ভর করছে বিএনপি ও বাংলাদেশের ভবিষ্যত। মানবাধীকারের প্রথম শর্ত আমাদের রাষ্ট্র উদ্ধার করা। রাষ্ট্র উদ্ধার করতে না পারলে আমাদের মানবাধীকার থাকবে না।”
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘কেন্দ্রীয় বাংলা বলতে আজ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ বোঝালেও প্রান্তিক বাংলা—ত্রিপুরা, আসাম, আন্দামান, আরাকান, বিহার, থেকে উড়িষ্যা পর্যন্ত বিস্তৃত। পরবর্তীতে বিহার ভেঙ্গে ঝাড়খন্ড প্রদেশ ও উড়িষ্যা ভেঙ্গে ছত্তিসগড় প্রদেশ এবং আসাম ভেঙ্গে মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড আর অরুণাচল প্রদেশ তৈরি করা হলেও এই পুরোঅঞ্চলেই বাঙালি এবং বাঙালিদের কাছাকাছি নৃ–গোষ্ঠীর লোকেরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করেন। এ আমাদের নবাবি বাংলা, শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ’র বাংলা, সিরাজ–উদ–দৌলা’র বাংলা। এ আমাদের সুবা বাংলা, শাহ বাংলা, সেন বাংলা, পাল বাংলা, বাংলা সালতানাতের ভূমি। বাঙালির দেশ। নৃ–বিজ্ঞান এবং জেনেটিক সায়েন্সের তথ্য–প্রমাণ মতে বাঙালি সনাতন, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা আমরা একই জনগোষ্ঠীর লোক, একই রক্তের একই পূর্বপুরুষের বংশধর। অনিবার্যভাবেই এ অঞ্চল আমাদের ঠিকানা। নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, দেশের জনগণের অধিকার রক্ষায় আমরা কোনো ছাড় দেব না।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘ভারত নামে কোন এনটিটি নাই। “ভারত” নামে পৃথিবীতে কোন দেশ নাই। “ইন্ডিয়া” নামে একটা দেশ আছে। “ইন্ডিয়া” জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র। বাংলাদেশও জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র। রাষ্ট্রীয় ষ্ট্যাটাসের দিক দিয়ে দুই দেশই সমান। অথচ “ভারত” নামক যে দেশের কোন অস্তিত্বই পৃথিবীতে নাই, সেই দেশের নামের আগে “মহান” যুক্ত করে দিল্লির শাসকেরা বাংলাদেশ ও আশেপাশের প্রতিবেশি দেশগুলোর উপর আধিপত্য দেখাচ্ছে, শ্রেষ্ঠত্ব দেখাচ্ছে, হেজিমনি ফলাচ্ছে! বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলা করে ভাঙচুর চালাচ্ছে, দেশের পতাকা পুড়াচ্ছে। যা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য না। ইন্ডিয়ার উগ্রবাদী বিজেপি সরকারের আরএসএস সদস্যরা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে যে নজিরবিহীন হামলা করেছে তা বাংলাদেশের উপর হামলা। হাইকমিশনের ভেতরে হামলা, ভাঙচুর এবং বাংলাদেশের পতাকার অবমাননা ‘ভিয়েনা কনভেনশন’র সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর জন্য ইন্ডিয়াকে বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং সেখানে বসবাসরত বাঙালি ও বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাধীনতার প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, আন্দামান, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল, সিকিম, বিহার, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা ও ছত্তিসগড়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ গণভোটের আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় এর পরিণতি ভালো হবে না। বাংলাদেশের মানুষ দিল্লির শাসকদের কাছে মাথানত করবে না। বাংলাদেশের মানুষ মাথা নত করার মানুষ না।”
বিবৃতিতে ইন্ডিয়ার জনগণের প্রতি আহবান জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘আপনাদের সাথে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। আপনাদের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব আছে। আপনাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আছে। আপনাদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা আছে। আমাদের মত আপনারাও দিল্লির শাসকদের যাতাকলে নিস্পেষিত। আমরা দিল্লিকে না বলেছি। আপনারাও না বলুন। পান্জাব, কাশ্মীরকে দিল্লির অধীনস্থ থেকে মুক্ত করুন। অখন্ড বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করুন। নতুন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি দিল্লির শাসকদের শ্রদ্ধাশীল হতে বলুন। বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় যেসব রাজনৈতিক দল ও সাংষ্কৃতিক সংগঠন প্রতিবাদ করেনি, তাদেরকে বয়কট করুন।”
উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশক থেকে ‘অখন্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’নবাবী বাংলা, শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ’র বাংলা ফেরত পেতে আন্দোলন করছে। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, আন্দামান, আরাকান, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল, বিহার, ঝাড়খন্ড, সিকিম, উড়িষ্যা ও ছত্তিসগড়সহ বাংলা বলয়ের সকল বাংলাভাষীর জন্য একটি অখন্ড বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, আন্দামান, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল, সিকিম, বিহার, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা ও ছত্তিসগড়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ গণভোটের আয়োজন করে দিল্লীর শাসকদের কাছে একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান কামনা করছে। এ লক্ষ্যে তারা দেশ-বিদেশে জনমত সংগঠিত করছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর সংগঠনটি যুক্তরাজ্যে তাদের ২১ বছর পূর্তি উৎসব পালন করতে যাচ্ছে।