শিরোনাম
বৃহঃ. ডিসে ৪, ২০২৫

লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রীর শুভেচ্ছা বিনিময়

মাহবুব আলী খানশূর, যুক্তরাজ্য

বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন লন্ডনের বাংলা মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিক, লেখক ও বিভিন্ন পেশার মানুষ। গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ছয়টায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ‘ইনভেস্ট ইন ইউর রুটস’ নামের একটি সংগঠনের সৌজন্যে প্রবাসী সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রীর এই শুভেচ্ছা বিনিময় হয়।

কবি ও ছড়াকার দিলু নাসেরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। পরিকল্পনামন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই দেশের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের অবদান এবং সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে এবং দেশের মানুষকে যা দিয়েছে আর কেউ তা দিতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। নিম্ন আয়ের অবস্থান থেকে দেশ আজ মধ্য আয়ের এবং দেশের সর্বত্র ডিজিটাল হয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে আপনি যাতে ঘরে বসে জমি সক্রান্ত কাজ সম্পাদন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সারাবিশ্ব প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করছে। বিশ্বনেত্রী বলে সবাই তাকে মেনে নিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোনো তুলনা নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নাই।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, এটা ঠিক ঔপনিবেশিক আইনের কারণে গরিব মানুষ যা পাওয়ার তা পাচ্ছে না। তারপরও যেটুকু পাচ্ছে শেখ হাসিনার জন্য পাচ্ছে। শেখ হাসিনা তাদের দিচ্ছে। আর কেউ এর চেয়ে বেশি তাদের দেবে না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। বিএনপি-জামায়াত-মৌলবাদীরা ক্ষমতায় আসবে। স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসবে। দেশ থেকে টাকা পাচার হবে। দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে যাবে। বর্তমানে দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ নেই। এরপর তিনি মানুষের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কটাক্ষ করেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যেভাবে হচ্ছে, সেভাবেই হবে। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে’। সে সময় আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘নির্বাচন যেভাবে হচ্ছে, সেভাবেই হবে বলতে আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হবে’? তিনি এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।

বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে আরেকজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উনার জেলে থাকার কথা, উনি ঘরে বসে সুযোগ ভোগ করছেন। সরকার তাকে সেই সুযোগ দিয়েছে। সরকার তাকে অনুকম্পা দেখিয়েছে। কিন্তু সরকারেরও লিমিটেশন আছে। এরপর তিনি আইনের দোহাই দেন’।

কিউ নিউজের পরিচালক সাংবাদিক আবদুল কাইয়ুম প্রশ্ন করেন, ‘আপনি স্বীকার করেন আর নাই করেন বিএনপি বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল। বিএনপিকে নির্বাচনে নেওয়ার জন্য আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না? দেশ-বিদেশে এ নিয়ে অনেক আলোচনা আছে। এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী’?

আবদুল কাইয়ুমের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে একমত নই। বিএনপিকে আপনি অন্যতম বৃহত্তম দল বলতে পারেন। কিন্তু যদি মাথা গুনতির দিকে যান তাহলে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের বৃহত্তম পার্টি। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা না আনা আমাদের কাজ না। উই আর নট দিয়ার গার্ডিয়ান। আমরা তাদের দল সৃষ্টি করিনি। তারা নিজেরাই তাদের দল তারা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পেছনে তাদের অংশীদারত্ব ছিল। এটা প্রতিষ্ঠিত বাই ল, বাই উচ্চ আদালত। সুতরাং আমার এখানে বলার কী আছে!’

‘তারা অতীতে সরকার গঠন করেছে আবার করুক। কিন্তু সংবিধানকে অবজ্ঞা করে, আইন-কানুন না মেনে, নির্বাচন কমিশনকে অস্বীকার করে এবং বলে এ থাকলে নির্বাচন করবো না, অমুক প্রধানমন্ত্রী থাকলে আমরা নাই, এই ধরনের হঠকারী কথা শুনে নির্বাচন তো আর বন্ধ রাখা যাবে না। উই ডু আওয়ার জব, দে আর ডু দেওয়ার জব। এরপর তিনি ইংল্যান্ডের নির্বাচনের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচনের তুলনা করেন’।

টিভি ওয়ান এর রিপোর্টার জাকির হোসেন কয়েছ মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি স্যাংশনস পেয়েছেন’? এ সময় মিলনায়তনে আবারও হাসির রোল ওঠে। জাকির হোসেন কয়েছের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি স্যাংশনস পাইনি। আমেরিকান স্যাংশনসের ভয়ে আমরা ভীত নই’।

টুএনিউজ এর পরিচালক সাংবাদিক আবদুল হান্নান প্রশ্ন করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পদ যদি বাজেয়াপ্ত করে কিছু আসে যায় না। এটা বলার আসলে কারণটা কী? যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা’?

জবাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘আমার প্রধানমন্ত্রী, আমার দলের প্রধান, আমার নমস্য নেতা, ডিসিপ্নিনড পলিটিশিয়ান উনার মন্তব্যে অ্যাড করা বা মাইনাস করার কিছু নাই। ঠিক আছে? ভিসানীতি আমাদের কিছু করতে পারবে না। তাদের পলিসি তাদের আমাদের পলিসি আমাদের। উই আর দ্য রাইট ট্র্যাক’।

এ সময় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বাসন, প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি রহমত আলী, কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহমদ, ১ নম্বর নির্বাহী সদস্য আহাদ চৌধুরী বাবু, নির্বাহী সদস্য সারওয়ার হোসেন, লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশিকুন নবী চৌধুরী, সাংবাদিক সৈয়দ মনসুর উদ্দিন, সাংবাদিক আকবর হোসেন, সাংবাদিক আজিজুল হক কায়েস, সাংবাদিক রেজাউল করিম মৃধা, সাংবাদিক খালেদ মাসুদ রনি, সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম ও আমিরুল চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ওই অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *