নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবৈধ সরকারের পতন ঘটিয়ে ভোটাধিকার আদায়ে জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহবান জানিয়েছেন। বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে বাধা বিপত্তি পেরিয়ে জনসমুদ্রে সমবেত জনতার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এবারের লড়াই বাংলাদেশের অস্তিত্বের লড়াই। শেখ হাসিনার মাফিয়া সরকার রিজার্ভের টাকা লুটপাট করে দেশকে দেউলিয়া করে করে দিয়েছে। সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে দেশে আজ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে, মানুষ না খেয়ে আছে। দুর্ভিক্ষের জন্য যুদ্ধকে দায়ী করে সরকারী দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্ভিক্ষ অবস্থা মাফিয়া সরকারের লুটপাটের ফল, কারণ যুদ্ধের কারণে দুর্ভিক্ষ হলে প্রথমে ইউক্রেনে প্রথম দুর্ভিক্ষ হবার কথা। কিন্তু সেখানে কোনো দুর্ভিক্ষ হয়নি। তিনি বলেন, মাফিয়া সরকারের গুম-খুন, অপহরণ, জুলুম-নির্যাতন অন্যায় অবিচার, লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশের জনগণ জেগে ওঠেছে।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে লণ্ডনের জনসভায় বক্তব্য রাখছেন অন্যান্য অতিথিবৃন্দ
গত ৭ নভেম্বর, সোমবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি অয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পূর্বলণ্ডনের দ্যা রয়েল রিজেন্সি হলে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি এম এ মালেক ও সভা পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ। সভায় দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিনী ডা. জোবাইদা রহমান। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান।সাত নভেম্বরের প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক বাংলাদেশ’ নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অবঃ) এ বি সিদ্দিক ও সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন। সভায় যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শহীদ জিয়া যেভাবে ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর যেভাবে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, গণ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’ বেগম খালেদা জিয়া যেভাবে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম করেছিলেন, একইভাবে মাফিয়া চক্রের কবল থেকে দেশ উদ্ধার করে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায়ে জনগনকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথ দখলের দায়িত্ব বিএনপিকেই নিতে হবে। বিএনপির চলমান এই আন্দোলনে দেশে বিদেশে প্রতিটি গণতন্ত্রকামী মানুষের সমর্থন রয়েছে।
মাফিয়া সরকারের সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে বিএনপি আয়োজিত মহা-সমাবেশে যারা অংশ নিচ্ছেন তাদেরকে ‘গণতন্ত্রের যোদ্ধা’ আখ্যা দিয়ে তারেক রহমান বলেন, একের পর মহাসমাবেশগুলো সফল করে জনগণ বার্তা দিয়েছে তারা আর নিশিরাতের ভোট ডাকাত সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায়না।
সকল বিভাগে মহাসমাবেশ শেষে বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার সমাবেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে তাদের প্রত্যেকের পরিবার থেকে কমপক্ষে একজনকে ঢাকার মহাসমাবেশে অংশ নেয়ার আহবান জানান তারেক রহমান। ।
তিনি বলেন, প্রবাসীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্টার্জিত অর্থ থেকে প্রবাসীরা দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠায় আর আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ নেতা মন্ত্রীরা সেই সব ডলার ‘কুইক রেন্টাল’ সহ বিভিন্ন উপায়ে দেশ থেকে বিদেশে পাচার করে দেয়। তারেক রহমান বলেন, মাফিয়াদের কাছ থেকে নিজেদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স রক্ষা করতে চাইলে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে দেশের জনগণের পাশাপাশি প্রবাসীদেরকেও শামিল হতে হবে।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে লণ্ডনের জনসভায় বক্তব্য রাখছেন অন্যান্য অতিথিবৃন্দ
তারেক রহমান প্রশ্ন করে বলেন, জনগণ জানতে চায়, নিজ দেশের মাটিতে কুইক রেন্টাল বানিয়ে তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করে কিংবা ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে কেন ডলারে পেমেন্ট দেয়া হয়েছে? তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, বিদেশে কুইক ‘টাকা পাচারে’র সুযোগ করে দিতেই ‘ফরেন রিজার্ভ’ তসরুপ করে শেখ হাসিনা দলীয় দুর্নীতিবাজদেরকে ডলারে পেমেন্ট দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।
তারেক রহমান বলেন, মাফিয়া সরকার গত ১৫ বছরে দেশের রাজনীতি অর্থনীতিসহ প্রতিটি সেক্টর ধ্বংস করে দিয়েছে। সুতরাং প্রতিটি সেক্টরকেই রিবিল্ড তথা পুনর্গঠন কিংবা সংস্কার করতে হবে। তবে জনরায়ে ক্ষমতায় গেলে মাফিয়া সরকারের দুর্নীতি দুঃশাসনে ক্ষত বিক্ষত এই রাষ্ট্রটির মেরামত বিএনপি এককভাবে করবেনা। বরং বর্তমানে মাফিয়া সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলনে যারা রাজপথে সক্রিয় রয়েছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আন্দোলনকারী সেইসব দলগুলোর বিজয়ী কিংবা বিজিত সবাইকে নিয়েই বিএনপি জাতীয় সরকার গঠন করবে। জাতীয় সরকারের মাধ্যমেই দেশের প্রতিটি সেক্টরের প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশে প্রবাসে অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যারা প্রচলিত রাজনীতি ডামাডোল থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চান। কিন্তু সেইসব জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্বদের যোগ্যতা মেধা অভিজ্ঞতা রাষ্ট্রের প্রয়োজন। ফলে দেশের স্বার্থে জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্বদের মেধা ও যোগ্যতা কাজ লাগাতে বিএনপি পার্লামেন্টে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে।
তারেক রহমান বলেন, মাফিয়া সরকার দেশকে যেভাবে খারাপের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে একমাত্র বিএনপির পক্ষেই সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। কারণ যতবারই দেশ বিপদে পড়েছে একমাত্র বিএনপির নেতৃত্বেই দেশ আবার সঠিক ধারায় ফিরেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী শাসনামলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ ‘বটমলেস বাস্কেট’ হিসেবে কুখ্যাতি পেয়েছিলো। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া সেই বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল এবং স্বাবলম্বী রাষ্ট্রে পরিনত করেছিলেন ।
তিনি আরো বলেন, জনগণের রায়ে বিএনপি একাধিকবার রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে। ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’ বেগম খালেদা জিয়ার সরকার দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যবস্থাসহ দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উন্নীত করেছিলেন। খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে দেশে ৮০ হাজার শিল্প কল-কারখানা স্থাপন করেছিল। বিনা বেতনে নারী শিক্ষা চালু করেছিলেন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ‘এশিয়ার এমারজিং টাইগারে’ পরিণত হয়েছিল। সুতরাং, জনগণ বিশ্বাস করে একমাত্র বিএনপি সরকারই জনস্বার্থ রক্ষা করতে পারে।
শেখ হাসিনা বিএনপিকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, যেভাবে হেফাজতকে দমন করা হয়েছে একইভাবে বিএনপিকে দমন করা হবে। শেখ হাসিনার এই হুমকির কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এই ধরণের হুমকি দিয়ে মাফিয়া নেত্রী শেখ হাসিনা স্বীকার করে নিয়েছেন, তার হুকুমেই হেফাজতের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তারেক রহমান বলেন, জনরায়ে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে। শুধু তাই নয়, বিডিআর পিলখানায় সেনা হত্যাযজ্ঞেরও বিচার করা হবে। খালেদা জিয়াকে আবারো জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়া হবে, শেখ হাসিনার এই হুমকি প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, খালেদা জিয়া আমার মা, তবুও আমি এই কথার জবাব দেবোনা। ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’র প্রতি মাফিয়া নেত্রীর এই হুমকির সমুচিত জবাব দেবে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।
তারেক রহমান বলেন, গত ১৫ বছর ধরে লুটপাট করে দেশের টাকা পাচার করে দেশকে ফতুর করে দিয়ে এখন মাফিয়া নেত্রী মানুষকে কৃচ্ছতা সাধনের উপদেশ দেন। জনগণ আর এমন ভণ্ডামী সহ্য করতে রাজি নয়। তিনি বলেন, দেশের জনগণের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে-অন্ধকারে। এমন দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মধ্যেই মাফিয়া চক্র জনগণনকে আরো জানিয়ে দিয়েছে আগামী দিনে নাকি আরো ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই, ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি এখন ‘মহাজোটে’র নামে ‘একজোট’ হয়েছে। এই অপশক্তি এখনো দেশের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই অপশক্তি দেশে গণতন্ত্র হত্যা করেছে, মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, দেশে সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিয়েছে। ২১ আগষ্টের ঘটনা ঘটিয়েছে। অসাংবিধানিক ‘ওয়ান ইলেভেনের’ সৃষ্টি করেছে। ২১ আগস্ট এবং ওয়ান ইলেভেন একই সূত্রে গাঁথা। একটি ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টির প্রেক্ষাপট তৈরী করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে ২১ আগষ্টের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।
তারেক রহমান বলেন আগামীর নির্বাচন হবে খুনি লুটেরা টাকা পাচারকারী দুর্নীতিবাজে মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামি মানুষের নির্বাচন। আওয়ামী লীগের জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনগণকে রাজপথ দখলে রাখার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান আবারো বলেন, বাংলাদেশ যাবে কোন পথে ফয়সালা হবে রাজপথে। বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান চলমান দুঃশাসনের অবসানে প্রবাসীদের সর্বাত্মক সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সারাদেশের মানুষের জাগরণের পাশাপাশি চলমান আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখলে দেশে সুশাসন ফিরে আসবে, প্রবাসীরা তাদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হবেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি এম এ মালেক বলেন, ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে লন্ডন থেকে তারেক রহমানের নেতৃত্বে প্রবাসী সরকার দেশ পরিচালনা করবে।
যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ বলেন, অবৈধ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য কমুনিটি লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস রচনা করেছে। এবার একাত্তরের মতো বাংলাদেশকে দখলদারমুক্ত করতে যুক্তরাজ্যসহ সকল প্রবাসীদের প্রতি নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ভূমিকা রাখার উদাত্ত আহ্বান জানান।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সহসভাপতি ড. মুজিবুর রহমান মুজিব, আলহাজ্ব তৈমুছ আলী, গোলাম রাব্বানি সোহেল, আতিকুর রহমান চৌধুরী পাপ্পু, আবেদ রাজা, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিক, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নাসিম আহমেদ চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক ডক্টর মুজিবুর রহমান, হেলাল নাসিমুজ্জামান, যুবদল নেতা মোঃ লিটন আলী মোল্লা, সহসাধারন সম্পাদক আব্দুল বাসিত বাদশা, যুবদলের সভাপতি রহিম উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসির আহমেদ শাহিন, সিলেট জেলা মহিলা দলের সভাপতি কাউন্সিলার রোকশানা বেগম শাহনাজ, যুক্তরাজ্য আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আবুল হাসনাত।সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সহধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোসাদ্দেক আহমেদ।